চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি থেকে গাঁথা সেই সব দিন
ম্প্রতি গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হল আট জন শিল্পীর ছবি ও ভাস্কর্য নিয়ে সম্মেলক প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘অবজেক্টস’। শিরোনামটি আমাদের ভাবায়। শিল্প রচনায় প্রকৃষ্ট কোনও প্রস্থানবিন্দু হয়ে উঠতে পারে প্রাকৃতিক কোনও বস্তু। সেটা ব্যবহৃত হতে পারে ‘মোটিফ’ হিসেবে। তাকে উপস্থাপিত করে বা রূপান্তরিত করে যে শিল্পকাজ গড়ে ওঠে, সেটাও অনেক সময় বিবেচিত হয় স্বতন্ত্র একটি ‘অবজেক্ট’ হিসেবে। যে ‘অবজেক্ট’ প্রাকৃতিক নয়, যা শিল্পীর নিজস্ব সৃষ্টি। ‘নন-অবজেক্টিভ আর্ট’ বা নিরবয়ব শিল্পে বিশেষ কোনও ‘অবজেক্ট’এর ভূমিকা নাও থাকতে পারে। তবু প্রতিমাকল্প বিন্যাসে ‘মোটিফ’-এর ভূমিকা সেখানে অনেক সময় থাকে। এই প্রদর্শনীতে প্রায় সব শিল্পীই ‘অবজেক্ট’কে ‘মোটিফ’-এ রূপান্তরিত করেছেন। কেউ কেউ সরাসরি বিশেষ কোনও বস্তুকেও ব্যবহার করেছেন শিল্পের নির্মাণে। ‘অবজেক্ট’ ও ‘মোটিফ’-এর পারস্পরিক সম্পর্কের বিন্যাস এবং সেই সম্পর্ক অনুধাবনের মধ্য দিয়ে বস্তু-নিরপেক্ষ তৃতীয় একটি নান্দনিক মাত্রা নিয়ে আসা, এটাই এই প্রদর্শনীকে তাৎপর্যপূর্ণ করেছে। অনেক শিল্পীই বস্তুকে ব্যবহার ও রূপান্তরিত করেছেন সমাজবাস্তবতামূলক প্রতিবাদী চেতনার দৃষ্টিকোণ থেকে। ‘অলটারনেটিভ আর্ট’ বা বিকল্প রূপকল্পের নানা লক্ষণ উদ্ভাসিত হয়েছে প্রায় সকলের কাজেই।
এ দিক থেকে বিশেষ অভিনিবেশযোগ্য পলা সেনগুপ্তের ১৩টি রচনা। সব মিলে গ্যালারির পরিসরে একটি ইনস্টলেশন তৈরি করতে চেয়েছেন তিনি। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় লক্ষ লক্ষ নারী ধর্ষিতা হয়েছিলেন। তা থেকে জন্ম নিয়েছিল হাজার হাজার শিশু। যাদের বলা হয় ‘ওয়ার বেবিজ’। মুজিবুর রহমান এই মানবীদের সম্মানিত করেছিলেন ‘বীরাঙ্গনা’ বলে। এই স্মৃতি থেকে গড়ে উঠেছে পলার ছাপচিত্র-ভিত্তিক রচনাগুলি। নানা রকম যুদ্ধাস্ত্রের ‘মোটিফ’ ব্যবহার করেছেন তিনি। ঝুলন্ত একটি কাঁথার রূপায়ণ উল্লেখযোগ্য। যার ভিতর সুতোর কাজে গড়ে উঠেছে দু’টি অটোমেটিক রাইফেল।
শিল্পী: পলা সেনগুপ্ত
নন্দিনী চিরিমার-এর দশটি রচনা চিত্র-ভিত্তিক। ছাপচিত্রের বিভিন্ন প্রকরণের সমন্বয়ে রচিত। বস্তুকে মোটিফে রূপান্তরিত করেছেন। কখনও চিত্রপটে সরাসরি বস্তুর ব্যবহারও করেছেন। ‘অবজেক্ট অব ওয়রশিপ’ শিরোনামে চারটি ড্রয়িং ভিত্তিক রচনা এ দিক থেকে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
অনিতা গোপাল তিনটি মিশ্রমাধ্যমের ত্রিমাত্রিক রচনায় সরাসরি বস্তুকে ব্যবহার করেছেন। কোলাজের আঙ্গিককে প্রসারিত করে তাঁর এই বিমূর্ত রচনা। বস্তুকে নির্বস্তুতে রূপান্তরিত করার অভিনিবেশযোগ্য দৃষ্টান্ত।
মহজবিন মজুমদারের দু’টি অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসে প্রাকৃতিক বস্তু ও মানবী-অবয়ব চিত্রকল্পে রূপান্তরিত হয়েছে, প্রথাবদ্ধ ছবিতে যেমন হয়। তবে কল্পরূপাত্মক প্রতিমাবিন্যাসে তিনি নতুন মাত্রা যোজনা করেছেন।
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ১৯টি কাজ কাগজের উপর কালিতে করা ড্রয়িংধর্মী রচনা। এর ভিতর তিনি দৈনন্দিন ব্যবহৃত বস্তুর নানা ‘মোটিফ’কে কল্পরূপাত্মকভাবে ব্যবহার করেছেন। ছবির কাগজ আয়তাকারে কেটে দরজার মতো খুলে দিয়েছেন। ভিতরে দেখা যাচ্ছে নানা বস্তুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিরূপ। সেফটিপিন বা কাঁচি বার বার এসেছে তাঁর বিভিন্ন রচনায়। বস্তুকে প্রতীকী তাৎপর্যে বিন্যস্ত করেছেন। নানা বস্তুর সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে যে প্রতিমার পরিমণ্ডল তাতে আখ্যান নিরপেক্ষ ভাবে সূক্ষ্ম কৌতুকে আজকের জীবনের নানা অনুষঙ্গ ব্যঞ্জিত হয়েছে।
পার্থ সাউ-এর ‘
দ্য গেম অব লাইফ’ শিরোনামে কোলাজধর্মী মিশ্রমাধ্যমের রচনাটিতে সরাসরি খেলার তাস ব্যবহৃত হয়েছে। বস্তুর প্রত্যক্ষ ব্যবহারকে তিনি চিত্ররূপান্তরিত করেছেন। কিন্তু তাঁর অভিমুখ বিমূর্ত রচনার দিকে। বস্তুকে নির্বস্তুক করে তোলার সুন্দর দৃষ্টান্ত তাঁর ছবিটি।
ডিপোজিশন’ শিরোনামে তপতী চৌধুরীর বড় আকারের পেনসিল ড্রয়িংটিতে একটি যন্ত্রের স্বাভাবিকতাভিত্তিক রূপায়ণ। এর বেশি কিছু তাৎপর্য নেই।
একটিই মাত্র পূর্ণাঙ্গ ভাস্কর্য ছিল প্রদর্শনীতে। শিল্পী নান্টুবিহারীর। অ্যালুমিনিয়াম ও ফাইবারে তৈরি একটি শিশুর মুখ। বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ধাতব শলাকা। সেই টেক্সচার শিশুর মুখটিতে করুণ এক ট্র্যাজিক চেতনা অভিব্যক্ত করেছে। বস্তু থেকে গড়ে উঠল চেতনার শূন্যতা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.