|
|
|
|
অবশেষে চার্জ গঠন |
রাজীবের নামে জলসত্র খুলে স্মৃতিতর্পণ রিঙ্কুদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তরতাজা কিশোরটি ছবি হয়ে গিয়েছে বছর দেড়েক আগে। বৃহস্পতিবার সেই ছবির সামনেই চোখে জল নিয়ে তার বন্ধুদের রাখি পরাচ্ছিলেন বারাসতের তরুণী রিঙ্কু দাস। তখনই খবর এল, দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে রাজীব দাস হত্যাকাণ্ডের মামলায় এ দিন চার্জ গঠন হয়েছে বারাসত আদালতে। আর এক বার কাঁদলেন দিদি রিঙ্কু। কাঁদল রাজীবের বন্ধুরাও। সুবিচার পাওয়ার আশায় এই কান্না। ভাইয়ের বন্ধুদের হাতে রাখি পরিয়ে দিতে দিতে রিঙ্কু বললেন, “দেরি হলেও তদন্তে আমি খুশি। আমি চাই, ওদের (অভিযুক্তদের) কড়া
শাস্তি হোক।”
রাজীবের বন্ধুরা এখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। বেঁচে থাকলে রাজীবও পড়ত। কিন্তু দুষ্কৃতীদের হাতে দিদির লাঞ্ছনা দেখে রুখে দাঁড়িয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিশোরটি। দুষ্কৃতীদের ধারালো অস্ত্র তার প্রাণ কেড়ে নেয়। রাজীবের স্মৃতিতে বারাসতে চাঁপাডালির মোড়ে যশোহর রোডের পাশে ‘চটি’ বা জলসত্র খোলার তোড়জোড় শুরু করেছে তার বন্ধু ও পরিবার। রাজীবের নামাঙ্কিত ওই চটিতে ৭ অগস্ট থেকে পথিক ও পুণ্যার্থীদের জল-বাতাসা দেওয়ার সঙ্কল্পের কথা জানাল বন্ধুরা।
জলসত্র খুলে রাজীবের স্মৃতিতর্পণের সঙ্গে সঙ্গে তার খুনিদের শাস্তির জন্য আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন রিঙ্কু এবং ওই কিশোরের বন্ধুরা। রাজীব-হত্যায় ধৃত তিন জনের বিরুদ্ধে মূলত খুন, শ্লীলতাহানি ও অস্ত্র আইনে মামলা এনেছে সিআইডি। সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি শান্তময় বসু এ দিন বলেন, ৬ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই মামলার শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক। কিন্তু চার্জ গঠন করতে এত দেরি হল কেন? ধৃতদের পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়াতে চাননি। তাই এই দেরি বলে জানান শান্তময়বাবু। ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র রাতে সাইকেলে দিদি রিঙ্কুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল রাজীব। কয়েক জন মদ্যপ যুবক বারাসত স্টেশনের কাছে রিঙ্কুর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। বাধা দিতে যায় রাজীব। দুষ্কৃতীরা তাকে প্রচণ্ড মারধর করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। বারাসতের অফিসপাড়ায় ওই ঘটনা ঘটলেও কান্নাকাটি এবং চেঁচামেচি করেও কারও সাহায্য পাননি রিঙ্কু। পরের দিন মারা যায় রাজীব। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়। পরে তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। ওই ছাত্র-হত্যার প্রতিবাদে অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে আদালতে না-দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন বারাসত আদালতের আইনজীবীরা। কোনও আইনজীবীই অভিযুক্তদের পক্ষে মামলা লড়তে না-চাওয়ায় তিন মাসে তিন-তিন বার চার্জ গঠনের তারিখ পিছিয়ে যায়। পরে অভিযুক্ত মনোজিৎ বিশ্বাস নিজের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করে। কিন্তু অন্য দুই অভিযুক্ত মিঠুন দাস ও বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে কোনও আইনজীবীই লড়তে চাননি। ওই দু’জনের জন্য সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগের নির্দেশ দেন বিচারক। তার পরেই চার্জ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। |
|
|
|
|
|