বছর পনেরোর এক কিশোরীর উপরে ‘নজর’ পড়েছিল সুশান্তর সাগরেদদের। কটূক্তি করা হত যখন-তখন। সহ্য করতে না পেরে এক দিন সামান্য প্রতিবাদ করে মেয়েটি। ওইটুকু সুযোগের অপেক্ষায় ছিল দুষ্কৃতীরা।
খবর যায় সুশান্তর কাছে। রাত ৮টা নাগাদ ৫-৬টি মোটর বাইকে চড়ে জনা পনেরো দুষ্কৃতী ঢুকে পড়ে
বাড়িতে। মেয়েটির বাবা-মাকে মারধর করে। গৃহকর্তার মুখে আগ্নেয়াস্ত্র ঠুসে ধরে। মেয়েটিকে একের পরে এক ধর্ষণ করে পাঁচ-ছ’জন।
গাজনা-মাঠপাড়ার এক মহিলার বাড়িতে তাঁর স্বামীর বন্ধু এসেছিলেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে মহিলার ‘বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক’ আছে, এই অপবাদ দিয়ে চড়াও হয় কার্গিল পার্টি। ১ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। শেষমেশ ‘রফা’ হয় ৬০ হাজার টাকায়। স্থানীয় মানুষের মতে, এটাই নাকি ছিল বড়সড় অপরাধে সুশান্তর ‘হাতেখড়ির’ ঘটনা। টানা বছর তিনেক ধরে এমনই ‘জঙ্গল-রাজ’ চলেছে সুটিয়ায়। সন্ধের পরে বাড়ির বাইরে পা রাখার সাহস করতেন না কেউ। একের পর এক বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হচ্ছিল। অনেকে ভয়ে, লজ্জায় সে সব কথা প্রতিবেশীর থেকেও আড়াল করেছেন। পুরো তথ্য এখনও অজানা। বাড়ির মেয়েকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েও শান্তি ছিল না। খবর পেলে বাবা-মায়ের উপরে এসে চড়াও হত সুশান্তরা।
এর সঙ্গে ছিল তোলাবাজি। মূলত কৃষি নির্ভর এলাকা সুটিয়া। ‘রাখি মালের ব্যবসা’ (গুদামে শস্য মজুুত) করতেন অনেকে। বড় চাষি ও ব্যবসায়ীদের ‘চমকে’ তোলাবাজি চালাত সুশান্ত ও তার দলবল। বাড়িতে সামাজিক অনুষ্ঠান হলে তোলা দিতে হত। এলাকায় জমি-বাড়ি বিক্রি হলে তার একটা ভাগ যেত সুশান্তদের হাতে। সম্পত্তি বেচে এলাকা ছাড়তে চাইলেও সে সময়ে তা কেনার লোক পাননি সুটিয়ার অনেকেই। যখন-তখন চলত ছিনতাই, লুঠ। ভিনরাজ্য থেকে কাজ করে টাকা-পয়সা নিয়ে কেউ ফিরেছে শুনলেই চলত লুঠপাট। স্থানীয় মানুষ জানালেন, সে সময়ে বাইরে থেকে আত্মীয়-স্বজন আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সুটিয়া ও সংলগ্ন বিষ্ণুপুর, গাজনা, পশ্চিম বারাসত, মধ্যম বারাসত, কানাপুকুর, বলদেঘাটা, কুটিপাড়া প্রভৃতি গ্রামে তখন সুশান্ত ও তার বাহিনীর দাপটে কার্যত ‘বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়’।
এমন ভাবেই বাঁচছিলেন সুটিয়ার মানুষ। অবস্থার পরিবর্তন এল ২০০২ সালে। সুটিয়ায় একটি ‘ফ্লাড সেন্টার’ তৈরির কথা ঘোষণা করে প্রশাসন। ঠিকাদারের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা তোলা চায় সুশান্ত। এত দিনে টনক নড়ে প্রশাসনের। গ্রেফতার করা হয় সুশান্তকে। স্থানীয় মানুষ অবশ্য জানাচ্ছেন, এলাকায় সুশান্তর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল বুঝেই প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশের ‘পরামর্শে’ আত্মসমর্পণ করে সুশান্ত। প্রেক্ষাপট যা-ই হোক, দুষ্কৃতীদের পাণ্ডা ধরা পড়ায় বুকে বল পায় সুটিয়া। এগিয়ে আসেন ননীগোপাল পোদ্দার, বরুণ বিশ্বাসেরা। বছর সাতাশের টগবগে যুবক বরুণ তখন সদ্য শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশনে (মেন)।
স্থানীয় মানুষকে বরুণরা বোঝান, “এ ভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল। কিছু একটা করা দরকার।”
|