পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় বিধায়ককে চিঠি দিলেন আসানসোলের একটি সরকার অনুমোদিত প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ ও অভিভাবকেরা। পরিচালন সমিতি অবশ্য অভিযোগ মানেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে প্রাক্তন বিধায়ক তথা চিকিৎসক গোপিকারঞ্জন মিত্র নিজের বাড়িতে এই কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন। পরে আসানসোলের মসজিদ বাড়ি লেনে আভা চৌধুরী নামে এক মহিলা তাঁর বাড়ি দান করায় সেখানে কেন্দ্রটি চালু হয়। ২০১০-এর ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রটির সরকারি স্বীকৃতি মিললেও শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা এখনও সরকার নির্ধারিত বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। মাসখানেক আগে অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরিচালন সমিতির সহ-সভাপতি ও সম্পাদককে ঘেরাও করে বিভিন্ন খাতে খরচের হিসেব ও সরকার নির্ধারিত বেতনের দাবি জানান। পরিচালন সমিতির তরফে ১৫ দিন সময় চাওয়া হয়। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও হিসেব না দেওয়ায় কয়েক দিন আগে ফের ঘেরাও-বিক্ষোভ হয়।
মুখ্যমন্ত্রী ও বিধায়ককে লেখা চিঠিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন, সরকারি অনুমোদন মেলার পরে বিধি অনুযায়ী মহকুমাশাসককে সভাপতি করার কথা হলেও পরিচালন সমিতি তা করেনি। আরও অভিযোগ, ভবনের তৃতীয় তল নির্মাণের জন্য প্রথমে শিলান্যাস করেছিলেন এডিডিএ-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। ফলকে লেখা ছিল এডিডিএ-এর ৫ লক্ষ টাকা অনুদানে এই কাজ হবে। অথচ মাসখানেক পরেই ভবনের পূর্ব দিকের ওই ফলক মুছে পশ্চিম দিকে আর একটি শিলান্যাস হয়। তাতে জানানো হয়, জনশিক্ষা প্রসার বিভাগ থেকে পাওয়া ৪ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকায় ভবন নির্মাণ হয়েছে। সেই ফলকের উন্মোচন করেন এই কেন্দ্রের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম পুরপ্রধান অশোক সামন্ত।
শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের একাংশের দাবি, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আসানসোল, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া পুরসভায় কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল এই কেন্দ্রের মাধ্যমে। সে জন্য সর্বশিক্ষা অভিযান থেকে ২৭ লক্ষ টাকা-সহ এ পর্যন্ত নানা খাতে কেন্দ্রের জন্য মোট ৪৫ লক্ষ টাকা আদায় হয়েছে বলে তাঁরা জানেন। অথচ সেই তুলনায় খুব কম কাজ হয়েছে। অভিযোগ, টাকা খরচের জন্য ইচ্ছেমতো কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারি অনুদানের টাকা পরিচালন সমিতির সম্পাদক অমর চক্রবর্তী ও সহ-সভাপতি নীরেন গুহের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে। তার হিসেবও জানানো হয়নি বলে অভিযোগ।
তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, ওই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বীণা ঘোষ। অথচ পরিচালন সমিতির ‘মদতে’ কঙ্কনা কাউর নামে এক শিক্ষিকাই বকলমে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকার কাজ করেন। শিক্ষক মাধব রায় ও বীণাদেবীর দাবি, “প্রশাসনের কাছে আবেদন, মহকুমাশাসককে সভাপতি করা হোক ও সব হিসেব পরীক্ষা করা হোক।”
পরিচালন সমিতির সহ-সভাপতি নীরেনবাবু এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। সম্পাদক অমরবাবুর বক্তব্য, “অশোকবাবুকে সরকারি স্তরেই সভাপতি করা হয়েছে। এ নিয়ে কিছু বলার নেই।” অশোকবাবুর দাবি, “সরকারি স্বীকৃতি মেলার পরে তৎকালীন মহকুমাশাসক জানিয়েছিলেন, ব্যস্ততার কারণে তিনি সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না। আমাদেরই সমিতি গঠন করে কাজ চালাতে বলেছিলেন।” বেতন না মেলার ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, “বেতন তহবিল মঞ্জুর না হওয়ায় বেতন দেওয়া যাচ্ছে না।” অন্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তাঁর দাবি, এখনও পর্যন্ত নানা খাতে তাঁরা মোট আট লক্ষ টাকা পেয়েছেন।
সাংসদ বংশগোপালবাবু জানান, এ বিষয়ে তাঁর এত কিছু জানা নেই। আসানসোলের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ে আশ্বাস, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। এমন ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |