এক দিকে দুই সম্ভাবনার অপমৃত্যু। অন্য দিকে পদকের সন্ধানে দুই ফেভারিটের অলিম্পিক যাত্রা শুরু।
সকালের লর্ডস থেকে যখন তিন ভারতীয় কন্যা রবিবার বেরিয়ে আসছেন, তাঁদের সঙ্গী ছিল হতাশা। গোটা দেশ যাঁদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল, সেই দীপিকা কুমারী-সুওরো-বোম্বাইলা দেবীরা তিরন্দাজির প্রি কোয়ার্টারে ডেনমার্কের কাছে ২১০-২১১ পয়েন্টে হেরে দলগত বিভাগ থেকে বিদায় নিলেন। একই দিনে বিদায় নিলেন হিনা সিধুও। শ্যুটিংয়ে এয়ার পিস্তলে যোগ্যতামানও টপকাতে পারলেন না তিনি। অথচ অলিম্পিক যাত্রার আগে হিনাও কম স্বপ্ন দেখাননি। টেনিসের প্রথম ম্যাচেই সোমদেব দেববর্মন বিদায় নিলেন। কাঁধে অস্ত্রোপচার করিয়ে ন’মাস পর প্রথম কোর্টে নেমে সোমদেব ফিনল্যান্ডের জার্কো নিয়েমিনেনের কাছে হেরে গেলেন ৩-৬, ১-৬।
অভিযান শুরু |
সোমদেব-দীপিকাদের ব্যর্থতার কাহিনি লেখার দিনে অবশ্য ভারতীয়দের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বটা ভাল ভাবেই সামলে দিলেন বিজেন্দ্র সিংহ এবং সাইনা নেহওয়াল। শনিবার শেষ রাতে ৭৫ কিলো বিভাগে কাজাখস্তানের দানাবেক শুখানোভকে ১৪-১০ হারিয়ে বক্সিংয়ের প্রি কোয়ার্টারে উঠলেন বিজেন্দ্র। প্রথম লড়াই জিতে উঠে বেজিং অলিম্পিকের ব্রোঞ্জজয়ী বক্সারের প্রতিশ্রুতি: “এ বার অন্য রংয়ের পদক নিয়ে ফিরতে চাই।” বিজেন্দ্রর সঙ্গে এ দিন বক্সিং রিংয়ে প্রথম বাঁধা টপকালেন জয় ভগবানও। ৬০ কিলো বিভাগে তিনি ১৮-৮ পয়েন্টে হারান আন্দ্রিকে আলিসপকে। বক্সিং রিংয়ে ভারতের সাফল্যের বেশ কয়েক ঘণ্টা বাদে ব্যাডমিন্টন কোর্টে সাইনার জয় আরও সহজে এল। মাত্র ২২ মিনিটে সুইৎজারল্যান্ডের সাব্রিনা জাকেতকে ২১-৯, ২১-৪ উড়িয়ে দিলেন সাইনা। পুরুষদের রোয়িংয়ে লড়াইয়েও শেষ আটে উঠলেন স্মরণ সিংহ।
গত কাল দুর্দান্ত অলিম্পিক অভিষেক ঘটানোর পর এ দিন টেবল টেনিস থেকে বিদায় নিলেন সৌম্যজিৎ ঘোষ। দ্বিতীয় রাউন্ডে ৯-১১, ১১-৬, ১১-৫, ১১-৯ পয়েন্টে শিলিগুড়ির বঙ্গসন্তান হারলেন উত্তর কোরিয়ার বং হিয়োক কিমের কাছে। প্রথম অলিম্পিকের অভিজ্ঞতা নিয়ে সৌম্যজিৎ বলছেন, “খুব উত্তেজিত ছিলাম। নিজের স্বাভাবিক খেলা তাই খেলতে পারিনি। হয়তো জিততে পারতাম, কিন্তু ঘটনা হল, ও আমার চেয়ে ভাল প্লেয়ার।” ব্যাডমিন্টনে সাইনা যেখানে আশার আলো দেখালেন, সেখানে হতাশ করলেন জ্বালা গাট্টা। সঙ্গী দিজুকে নিয়ে এ দিনও তিনি হেরে গেলেন মিক্সড ডাবলসের দ্বিতীয় ম্যাচে। এই ইভেন্টে অভিযান শেষ ভারতের। |
প্রথম রাউন্ড জেতার পথে বক্সার বিজেন্দ্র সিংহ। |
ব্যর্থতা শ্যুটিং রেঞ্জেও। হিনা সিধু এবং অনুরাজ সিংহ কেউই যোগ্যতাপর্ব টপকাতে পারেননি। কেন এই ব্যর্থতা? তিরন্দাজির ক্ষেত্রে ঘুরে-ফিরে আসছে সেই পুরনো অজুহাতের কথা। হাওয়া। সুওরো যেমন বলছেন, “হাওয়াটা আজ একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হাওয়ার জন্য তির বেঁকে যাচ্ছিল।”
আর শ্যুটিংয়ে হিনার ব্যর্থতা নিয়ে জাতীয় কোচ সানি টমাসের ব্যাখ্যা, “প্রচণ্ড চাপ ছিল ওর উপর। সামলাতে পারল না। প্রথম অলিম্পিকে নেমেছিল তো।”
প্রথম অলিম্পিক আবার অপ্রত্যাশিত সৌভাগ্য নিয়ে হাজির হল বিষ্ণু বর্ধনের কাছে। ডাবলসে লিয়েন্ডার পেজের পার্টনার সিঙ্গলসেও খেলার সুযোগ পেয়ে গেলেন। জার্মানির স্কোলসক্রাইবার শেষ মুহূর্তে টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ানোয়। বিষ্ণুই (৩০২) ছিলেন সুযোগ না পাওয়া প্লেয়ারদের মধ্যে ক্রমপর্যায়ে সবার আগে। ফলে ‘লাকি লুজার’ হিসেবে সিঙ্গলসে ঢুকে পড়লেন। অলিম্পিক টেনিসে ভারতের দ্বিতীয় সিঙ্গলস প্লেয়ার বিষ্ণু খেলবেন স্লোভাকিয়ার কাভচিচের বিরুদ্ধে। |