লেগেই রয়েছে সংঘর্ষ, বোমাবাজি। গণ্ডগোলের মাঝে পড়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। মঙ্গলকোটে এই সব হানাহানি রুখতে এ বার জনসংযোগ বাড়ানোয় উদ্যোগী হল পুলিশ।
মঙ্গলকোট থানার উদ্যোগে নওয়াপাড়া গ্রামে আয়োজিত হল স্বাস্থ্যপরীক্ষা শিবির। রবিবার বৃষ্টির মধ্যেও স্বাস্থ্যপরীক্ষা করালেন ৩৮৬ জন। বিনামূল্যে ওষুধও দেওয়া হল অনেককে। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এই শিবিরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলেন দুর্গাপুর মিশন হাসপাতাল ও সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নওয়াপাড়া গ্রামে একশো দিনের কাজকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল বাধে। বোমায় নিহত হন স্থানীয় মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা লাল্টু মল্লিক নামে এক যুবক। গুরুতর জখম হন তাঁর দাদা জিয়ার মল্লিক। নিহতের স্ত্রী বুড়ি বিবি স্থানীয় তৃণমূল নেতা কাশেম কাজি-সহ ২৯ জনের নামে পুলিশে অভিযোগ করেন। ঘটনার পরে গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়। এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। দিন কয়েক আগে পুলিশ ক্যাম্প তুলে নেওয়া পরে গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন তাঁরা। তবে মল্লিকপাড়ায় ‘আতঙ্ক’ এখনও কাটেনি। ঘটনার পরে প্রায় মাসখানেক পরেও ঘরছাড়া ওই পাড়ার কিছু পুরুষ। |
এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ ওই পাড়ার অনেকেই। তবে নিহতের বৌদি রূপা বিবির অভিযোগ, ‘‘দোষীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নিরীহ ৬ জনকে ধরল পুলিশ। এক জনের বাড়িতে পাঁচ বার ভাঙচুর চালানো হয়েছে।” তাঁর প্রশ্ন, “রাতের বেলা নিরীহ মানুষজনের বাড়িতে ঢুকে যদি তল্লাশি চালানো হয়, তবে আতঙ্ক তৈরি হবে না কেন?” যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ মঙ্গলকোটের ওসি দীপঙ্কর সরকার। তাঁর দাবি, “অভিযুক্তেরা পলাতক। এ ছাড়া কেউ পুলিশের ভয়ে বাইরে রয়েছেন বলে জানা নেই।”
তবে হানাহানি বন্ধ করতেই যে জনসংযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ, তা মেনে নিয়েছেন পুলিশকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহকুমার এক পুলিশকর্তার দাবি, পুলিশের ভয়ে বাইরে থাকা নিরীহদের বাড়ি ফিরতে আহ্বান জানানো হয়েছে। সদ্য ঘরে ফেরা যুবকদের এ দিন স্বাস্থ্যশিবিরে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস বলেন, “আমরা চাই, মানুষ নির্ভয়ে আমাদের কাছে আসুক। হানাহানি বন্ধ হোক। তাই যে সব এলাকায় অশান্তি হচ্ছে, সেখানে জনসংযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ হয়েছে।” মঙ্গলকোট গ্রামে সম্প্রতি পুলিশের উদ্যোগে হয় ফুটবল প্রতিযোগিতা। এসডিপিও জানান, মঙ্গলকোটের ধারসোনা গ্রামেও স্বাস্থ্যশিবির হবে। কিছু দিন আগে ওই গ্রামে বোমার এক মহিলা-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল।
তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “এলাকায় শান্তি ফেরাতে পুলিশের এই উদ্যোগ খুবই ভাল।” কংগ্রেস নেতা জগদীশ দত্তের মতে, “সব স্তরের মানুষ এগিয়ে এলেই পুলিশের এই উদ্যোগ সফল হবে।” সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের দাবি, “পুলিশের এই ভূমিকা ভাল, তবে গ্রামছাড়াদের ফিরিয়ে এনে এ ধরনের উদ্যোগ হলে তা সর্বাত্মক হত।” আর নওয়াপাড়ার বাসিন্দা খাইরুন্নেসা বিবি, কাজি গোলামউদ্দিনের বলছেন, “এই ধরনের উদ্যোগ হলে অযথা আতঙ্ক তৈরি হবে না। আমরা চাই হানাহানি বন্ধ হোক। গ্রামে শান্তি ফিরুক।” |