মহিষমর্দিনী পুজো
হিসেব নিয়ে ক্ষোভ কমিটির অন্দরেই
দিন তিনেক পরেই পুজো। তার ঠিক আগে আয়-ব্যয় ও প্রতি বছরের জমা হওয়া সম্পদের হিসেব প্রকাশ্যে আনার দাবি জানাল কালনার মহিষমর্দিনী পুজো কমিটির একাংশ। এই দাবিতে মহকুমাশাসক, বিধায়ক-সহ বিভিন্ন স্তরে চিঠি পাঠিয়ে হস্তক্ষেপের আবেদন করা হয়েছে। কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই পুজো। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায় দু’শো বছরের পুরনো এই পুজোর দায়িত্ব প্রথম থেকেই রয়েছে শহরের কিছু ব্যবসায়ীয়ের হাতে। মূলত বৃত্তিধারী ব্যবসায়ী নামেই পরিচিত তাঁরা। তারা ওই পুজো কমিটির সদস্যও। হিমঘর বা ধান-চালের কারবার-সহ নানা ব্যবসা রয়েছে তাঁদের। পণ্য বিক্রির সময়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কিছু পয়সা তাঁরা দেবী মহিষমর্দিনীর নামে ‘ঈশ্বর-বৃত্তি’ হিসেবে গ্রহণ করেন। নিয়ম অনুযায়ী, ‘ঈশ্বর-বৃত্তি’ বাবদ যে অর্থ সংগৃহীত হয়, পুজোর সময়ে বৃত্তিধারীদের তা দিয়ে দিতে হয়। অন্য দিকে, দেবীর সোনা-রূপোর অলঙ্কার রাখা থাকে ব্যাঙ্কে। পুজোর সময়ে পুলিশি প্রহরায় সেই বাক্সবন্দি গয়না ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে এসে পরানো হয় দেবীকে। পুজো মিটে গেলে ফের তা ব্যাঙ্কেই রেখে আসা হয়। এছাড়াও, ভক্তেরা প্রতি বছর পিতল কাঁসার নানা আসবাবপত্র মানত করেন। পুজোর সময়ে তা দিয়ে সাজানো হয় মন্দির।
—নিজস্ব চিত্র।
পুজো মিটলেই সেগুলি পাঠিয়ে দেওয়া হয় শহরের একটি আসবাবের দোকানে। পরের বার পুজোর সময়ে ফের সে গুলি পালিশ করে নিয়ে আসা হয়। বৃত্তিধারী ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, বহু বছর ধরে পুজো কমিটি থাকলেও তার কোনও সরকারি রেজিস্ট্রেশন নেই। বৃত্তিধারী ব্যবসায়ী তথা পুজো কমিটির সদস্য অমরকুমার রেজের অভিযোগ, “বহু বছর ধরে ভক্তেরা দেবীর উদ্দেশে যে সোনা-রূপোর অলঙ্কার নিবেদন করেন তার হিসেব কেউ জানে না। পিতল-কাঁসার মূল্যবান জিনিসেরও কোনও হিসেব নেই।” তিনি দাবি করেন, ব্যাঙ্কে গয়না জমা দেওয়া বা সেখান থেকে তা নিয়ে আসার দায়িত্ব রয়েছে গুটি কয়েক বৃত্তিধারীর হাতে। অমরবাবুর ক্ষোভ, “ঈশ্বর-বৃত্তি দেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। অথচ তারা জানেন না, ঈশ্বর বৃত্তির টাকা কোন খাতে খরচ হচ্ছে। স্বচ্ছতা আনতে পুজো কমিটির উচিত, আয়-ব্যয়ের হিসেব প্রকাশ্যে আনা। কোন বছর দেবীর কী পরিমাণ গয়না ছিল তা সাধারণ মানুষ এমনকী বৃত্তিধারীদের একাংশেরও অজানা। এই পদ্ধতির অবসান হওয়া উচিত।” আর এক বৃত্তিধারী বিকাশ সেনের দাবি, “হাজার হাজার মানুষ পুজোয় যোগ দেন। অথচ তারা সত্যিটা জানবেন না, তা তো হয় না! আমরা এই ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই।”
বিষয়টি আগেও একাধিক বার পুজো কমিটির আলোচনায় উঠেছে বলে দাবি অমরবাবুর। তিনি বলেন, “এর আগেও বিষয়গুলি নানা ভাবে পুজো কমিটির গোচরে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাত লাভ হয়নি। তাই প্রশাসনকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাতে উদ্যোগী হয়েছি।”
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুজো কমিটির সম্পাদক বিজন শেঠ। তাঁর দাবি, বছরে দু’বার কমিটির বৈঠকে আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করা হয়। পুজোর দানসামগ্রীও কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের সামনেই গয়না এনে দেবীকে পরানো হয়। তাঁর কথায়, “এমন কোনও বছর নেই, যেখানে ব্যাঙ্ক থেকে দু’বার গয়না বের করা হয়েছে।” যদিও বৈঠকে আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়া হয় বলে মানতে চাননি অমরবাবু।
প্রশ্ন উঠেছে, লক্ষ লক্ষ টাকা পুজোর সময়ে ব্যয় করা হয়। অথচ তার কোনও অডিট রিপোর্ট নেই কেন? কেনই বা পুজো কমিটির কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই? বিজনবাবুর যুক্তি, “আমরা প্রথার বাইরে যেতে চাই না। প্রশাসন উদ্যোগী হলে কমিটিও সহযোগিতা করবে।”
সম্প্রতি মহিষমর্দিনী পুজো নিয়ে কালনা থানায় একটি বৈঠক বসে। হাজির ছিলেন পুরসভার উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ। দেবপ্রসাদবাবু বলেন, “স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রশাসন ও স্থানীয় মানুষদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া উচিত। আমরা তা বৈঠকে জানিয়েছি।” তাঁর অভিযোগ, “এই পুজোকে সর্বজনীন বলা হলেও তা কুক্ষিগত করে রেখেছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ।”
পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন দেবনাথ বলেন, “আমি মনে করি, এই পুজো সর্ব সাধারণের। তাই পুজোর সব কিছুই সাধারণ মানুষের জানা উচিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.