একের পর এক সম্মেলন। নিজেদের দাবির পক্ষে নানা যুক্তি। নতুন জেলার সদর হিসেবে উপযুক্ত দুর্গাপুরই, এই দাবি তুলে একজোট হয়েছে শহরের বেশ কিছু সংগঠন। তাদের দাবি, একটি নিরপেক্ষ কমিটি গড়া হোক। সেই কমিটিই বিচার করুক তাদের শহর সদর হওয়ার ব্যাপারে বেশি উপযুক্ত কি না।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নতুন জেলা গঠন হলে আসানসোলে সদর হতে পারে। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অবশ্য বলেন, “নতুন জেলার ব্যাপারে যা বলার তা রাজ্য স্তরে বলা হবে।” দুর্গাপুরের একটি বণিক সংগঠনের সভাপতি রমাপ্রসাদ হালদারের দাবি, “দুর্গাপুর শহর খনি এলাকা না হওয়ায় এখানে ধসের সম্ভাবনা নেই। তাই আমাদের মতে, এখানেই জেলা সদর হওয়া উচিত। আমাদের আবেদন, রাজ্য সরকার একটি নিরপেক্ষ কমিটি গড়ুক। তারা সব দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিক।” বণিক সংগঠনের অন্যতম কর্তা কবি দত্তের আবার দাবি, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় দুর্গাপুরকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।
গত কয়েক বছরে এই শহরে শিল্প কারখানার পাশাপাশি নতুন নতুন স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজ, তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক, শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, তারকা হোটেল, বিভিন্ন সংস্থার শো-রুম গড়ে উঠেছে। শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে উঠছে অন্ডাল বিমাননগরী। তাঁর দাবি, দুর্গাপুরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভাল। তাই সদর হওয়ার উপযুক্ত। একই রকম মত দুর্গাপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অনুপম মুখোপাধ্যায়েরও। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সমীর বসুর দাবি, দুর্গাপুরের রাস্তাঘাট চওড়া এবং যানজটমুক্ত। তাই সদর কার্যালয় হলে শহরের উপরে যে বাড়তি চাপ আসবে, তা সহ্য করার ক্ষমতা এই শহরের আছে। দুর্গাপুরকে জেলা সদর করার দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে অন্ডালের উখড়ার বণিক সংগঠনও। সংগঠনের সভাপতি মহাদেব দত্তের কথায়, “পরিকল্পনা মাফিক গড়া দুর্গাপুর শহরে নতুন জেলা সদর হলে আমাদের সুবিধা হয়।”
দুর্গাপুর নাগরিক মঞ্চের পক্ষে শিক্ষক জইনুল হক জানান, বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম ও পুরুলিয়া জেলার প্রায় কেন্দ্রে অবস্থিত দুর্গাপুর। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে যাতায়াতের অন্যতম ‘করিডর’ও এই শহর। জাতীয় সড়ক ধরে রাজ্যের রাজধানী কলকাতা পৌঁছনো যায় মাত্র তিন ঘণ্টায়। তিনি বলেন, “অন্ডাল বিমাননগরী চালু হয়ে গেলে উড়ান মানচিত্রেও এই শহর জায়গা করে নেবে। তাই দুর্গাপুরেই জেলা সদর হলে ভাল হয়।” বণিক সংগঠনের কর্তা কবিবাবু বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছি। তাঁর কাছে বিষয়টি জানাব।” জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক সুশীল ভট্টাচার্যের জন্ম চুরুলিয়ায়। বড় হয়েছেন দুর্গাপুরে। শিক্ষকতা ও সাহিত্যচর্চা এই শহরেই। তাঁর মতে, “আমার জন্ম আসানসোল মহকুমায়। তাই সেখানে সদর হলে ভাল লাগবে। তবে দুর্গাপুরের পরিকাঠামো বেশ উন্নত। এখানে সদর হলে সার্বিক সুবিধা হবে।” |