১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিক্স, ২০০ মিটার রেস-এর ফাইনাল। স্টার্টিং লাইনে অপেক্ষায় সব্বাই। অপেক্ষায়, কখন বলা হবে রেডি অন ইয়োর মার্ক গো... আর তখনই চিলের মতো ছোঁ মেরে তুলে নেবে কেউ প্রথম পুরস্কার। সেই লাইনে এক জন ছিলেন নর্মান গিলবার্ট প্রিচার্ড। ব্রিটিশ, কিন্তু জন্ম আলিপুরে। তা রেস শুরু হল, পাঁই পাঁই করে এগিয়ে গেলেন কখনও প্রিচার্ড, কখনও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকার বিখ্যাত ওয়াল্টার টিউকস্বেরি। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর শেষমেশ জিতে গেলেন ওয়াল্টার, কিন্তু প্রিচার্ড পেয়ে গেলেন রুপোর মেডেল। আর মজা তো শুরু এখানেই।
ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারছ? এক জন কলকাতার ছেলে, সে হোক না অ্যাংলো, অত বছর আগে অমন বিশাল মঞ্চে ধুন্ধুমার ফেলে দিল! আর আমরা কিনা তাঁকে ভুলেই বসে আছি? প্রিচার্ড ওই বার পাঁচটা ইভেন্টে নেমেছিলেন। তার মধ্যে তিনটেতে ফাইনালে ওঠেন আর দুটোতে, মানে ২০০ মিটার ফ্ল্যাট আর ২০০ মিটার হার্ডলস-এ রুপো। তা হলে কী দাঁড়াল, না নর্মান প্রিচার্ড-ই ভারতের তো বটেই, এশিয়ারও প্রথম অ্যাথলিট, যে অলিম্পিকে পদক জিতেছেন।
|
আলিপুরে জন্ম, ৩, ল্যান্সডাউন রোডে বাড়ি, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা, তার পর কলকাতারই বার্ড অ্যান্ড কোম্পানিতে চাকরি, সবই সত্যি, কিন্তু তাও প্রিচার্ডকে নিয়ে বহু প্রশ্ন হাওয়ায় ঘোরাঘুরি করছে। যার মুখ্য হল, প্রিচার্ড আসলে কোন দেশের, ইংল্যান্ড না ভারত? আরও সহজ করে বলতে গেলে, প্যারিস অলিম্পিকে জেতা মেডেলগুলোও কি তবে ভারতের? রেকর্ড ঘাঁটলে দেখা যাবে, যে ভারত ব্রিটিশ কলোনি হলেও, মেডেলগুলো ভারতের নামেই দেওয়া রয়েছে। কিন্তু কেন এই গণ্ডগোল?
কারণ, প্যারিস-এ যে তখন ঘটা করে অলিম্পিক গেম্স হচ্ছে, সেটাই বেশির ভাগ দেশ জানত না। গ্রিস-এ প্রাচীন অলিম্পিক, সেই কোন কালে হত, তার পর দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল। ১৮৯৬ সালে পের ক্যুবেরতাঁ-র উদ্যোগে আবার মডার্ন অলিম্পিক শুরু হল যখন, উদ্যোক্তরা বেশ ভয়ে ছিলেন, আদৌ এই খেলা হিট হবে কি না। ভয় বজায় ছিল ১৯০০-র প্যারিসেও। ওই সময়ই আবার প্যারিসে শুরু হচ্ছিল প্যারিস ওয়ার্ল্ড ফেয়ার। ফলে এই অলিম্পিক্সকে এই বিশ্বমেলা’র মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে লোক টানার চেষ্টা হল।
প্রিচার্ড-ও প্যারিস-এ গিয়েছিলেন অনেকটা এই মনে, যে একটু মেলা ঘোরা হবে, আবার দু’চারটি ইভেন্টেও দৌড়ানোও হবে। যেহেতু বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি অ্যাথলেটিক ক্লাব ও লন্ডন অ্যাথলেটিক ক্লাব, এই দুই ক্লাবেরই প্রিচার্ড সদস্য ছিলেন, তাই ইভেন্টগুলোয় এই দুই ক্লাবের নামই তিনি রেজিস্টার করান, কোনও দেশের না। মজার কথা হল, অনেক পদকজয়ী তো মৃত্যু অবধি জানতেও পারেননি, যে তাঁরা আসলে অলিম্পিকে পদক পেয়েছিলেন। প্রিচার্ড আট বছর পরে জানতে পেরেছিলেন বটে, কিন্তু আমরা তো আজও জানলাম না, ওই দুটি পদক আসলে ভারতের কি না!
|
২০০ মিটার ফ্ল্যাট আর ২০০ মিটার হার্ডলস-এ রুপো। নর্মান প্রিচার্ড-ই ভারতের তো বটেই, এশিয়ারও প্রথম অ্যাথলিট, যে অলিম্পিকে পদক জিতেছেন। |
|