ভাইকে দেড় বছর ঘরে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগে ধৃত দুই দিদিকে শুক্রবার ১৪ দিনের জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন লালবাগ এসিজেএম আদালতের বিচারক। বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেফতার করা হয়। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সম্পত্তির লোভে ষড়যন্ত্র করে ওই যুবককে গত দেড় বছর ধরে ঘরে আটকে রাখা হয়। ওই ঘটনায় দুই দিদির সঙ্গে তাদের স্বামী আজাদ শেখ ও আপেল শেখও জড়িত। তাদের খোঁজে পুলিশের তল্লাশি চলছে।”
ভগবানগোলা-১ ব্লকের রামবাগের একটি দোতলা বাড়ির একটি ঘরে ওই যুবককে আটকে রাখে বলে তাঁর দুই দিদির বিরুদ্ধে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ভগবানগোলা থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়ি থেকে কামরুজ্জামান সরকার নামে ২৮ বছরের যুবককে উদ্ধার করে কানাপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তির বন্দোবস্ত করে। পরে ওই রাতেই তাঁকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবকের বাবা হাজি আবদুল রশিদ সরকার বেশ কয়েক বছর আগে মারা যান। তাঁর মাছ ও ফলের ব্যবসা ছিল। এ ছাড়াও গ্রামে আটা কল ছিল। কামরুজ্জামানেরা পাঁচ ভাইবোন। দুই বোন ছোট। বড় দুই দিদি বিবাহিত। তাদেরই গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দুই দিদি ও জামাইবাবু সম্পত্তির লোভে ভাইকে ষড়যন্ত্র করে আটকে রাখে। পুলিশও দুই বোনের স্বামীদের খোঁজে তল্লাশি করছে। কিন্তু ঘটনার পরেই তারা পলাতক।
ওই দোতলা বাড়ির বাইরের কোলাপসিবল্ গেটেও বাইরে থেকে তালা ঝোলানো থাকত। বাড়ির সমস্ত জানালা-দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে রাখা হত। বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। বুধবার গভীর রাতে একটি গাড়ি বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পাড়া-প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। তাঁরাই ভগবানগোলা থানায় খবর দেন। সেই মত ওই দিন সকালে ভগবানগোলা থানার পুলিশ বাড়ির তালা ভেঙে দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজ ওই যুবককে উদ্ধার করে। পুলিশ সুপারের কথায়, “দীর্ঘ দিন প্রায় অভূক্ত থাকায় শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন ওই যুবক। স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতেও পারছেন না ওই যুবক। গ্রামবাসীদের সহায়তায় পুলিশ ওই যুবককে ঘর থেকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তির বন্দোবস্ত করে।
কামারউজ্জামানের এক আত্মীয় ভগবানগোলার ব্লক কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি নাজ্জাক হোসেন বলেন, “কামরুজ্জামান একটু জড়বুদ্ধি সম্পন্ন। কিন্তু দারুণ স্বাস্থ্য ও তেমনি দেখতে সুন্দর। ভীষণ ভাল কথাও বলে। গত দেড় বছর ধরে কামরুজ্জামানকে গ্রামে দেখতে পাইনি। জিজ্ঞেস করা হলে ভেলোরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। তার আগে ভান্ডারায় এক দিদির বাড়িতে রেখে চিকিৎসা হচ্ছে বলেও জানায়।”
পুলিশ জানায়, দোতলা ওই বাড়ির একটি ঘরে তালা বন্দি করে রাখা হত। ফলে খাওয়া এবং প্রাত্যঃকৃত্য ওই ঘরেই করতে হত। ঘরের মধ্যে শুধু এক বালতি জল ও একটি মগ রাখা ছিল। দুর্গন্ধে ঘরে ঢোকা যাচ্ছিল না। উদ্ধারের পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। |