পরীক্ষায় কড়া নজরদারি নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে গোলমাল ও ভাঙচুরের জন্য শুক্রবার নদিয়ার রানাঘাট এবং বগুলা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ইংরেজি আবশ্যিক পত্রের পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেল। মোট ১১ ছাত্রকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে পুলিশ ও র্যাফ। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল যে, বগুলা ও মাজদিয়া কলেজ থেকে ছাত্রীদের বার করে আনতে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বাসের ব্যবস্থা করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহের নিয়ামক বিমলেন্দু বিশ্বাস বলেন, “এই দিন নদিয়া ওবং মুর্শিদাবাদ জেলার মোট ৩৮টি কলেজে পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষা বহির্ভূত কারণেই রানাঘাট ও বগুলা কলেজে গণ্ডগোল হয়েছে। সেখানে প্রথম বর্ষের সাধারণ আবশ্যিক ইংরেজির পরীক্ষা চলছিল। ওই পরীক্ষা আপাতত বাতিল করা হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে।” তিনি বলেন, “চাকদহ ও মাজদিয়া কলেজেও পরীক্ষা ভণ্ডুলের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি। সর্বত্রই র্যাফ ও পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাসে করে বগুলা ও মাজদিয়া কলেজের ছাত্রীদের বার করে আনতে হয়েছে।” ঘটনার সূত্রপাত রানাঘাট কলেজে। ওই কলেজে আসন পড়েছিল বগুলা কলেজের ছাত্রদের। পরীক্ষা শুরু থেকেই কড়া নজরদারি করা হচ্ছে বলে ছোটখাট গোলমাল লেগেই ছিল। অভিযোগ, এ দিন তারা পরীক্ষাকেন্দ্রে ‘কড়া নজরদারির প্রতিবাদ’ করতে গিয়ে কলেজে ভাঙচুর করেছিল। তখন তার প্রতিবাদ জানায় রানাঘাট কলেজের ছাত্রেরা। শুরু হয় তর্কাতর্কি। তা গড়ায় হাতাহাতিতে। উভয় পক্ষের ৬ জন ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন। তখনই বগুলা কলেজের কয়েকজন ছাত্র সিদ্ধান্ত নেন, মারধর করা হয়েছে বলে প্রতিবাদে তাঁরা পরীক্ষা দেবেন না। সে খবর পৌঁছে যায় বগুলা কলেজেও। সেখানে আসন পড়েছিল মাজদিয়া ও চাকদহ কলেজের ছাত্রীদের। ওই ছাত্রীদের কয়েক জনের খাতা, কলম কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ৪ পরীক্ষার্থীনী আহতও হয়েছেন। সে খবর তারপরে পৌঁছয় মাজদিয়া কলেজে। সেখানে বগুলা কলেজের ছাত্রীদের আসন পড়েছিল। এ বার সেখানেও পরীক্ষা ভণ্ডুল করে দেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। রানাঘাট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ধৃতিকণা বিশ্বাস বলেন, “কড়া নজরদারি দেওয়া চলবে না বলে ছাত্রেরা বৃহস্পতিবারেও ভাঙচুর করেছে। এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ বগুলা কলেজের ছাত্রেরা ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। চেয়ার টেবিল আলো ভাঙচুর করে। এরই প্রতিবাদ করেছিল আমাদের কলেজের ছাত্রেরা। এরপরেই গণ্ডগোল শুরু হয়।”
রানাঘাট ও চাকদহের কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হাতে। বগুলা কলেজের ছাত্র সংসদ ছাত্র পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন। মাজদিয়া কলেজের ছাত্র সংসদ এসএফআইয়ের দখলে। তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান ও বিধায়ক নরেশচন্দ্র চাকীর কথায়, “ষড়যন্ত্র করে ছাত্র পরিষদ ও এসএফআইয়ের কর্মীরা গণ্ডগোল করছে। সমস্ত পরীক্ষা ভণ্ডুল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা চায় না শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে’র কথায়, “পরীক্ষায় টুকতে দেওয়ার দাবি নিয়ে এমন গণ্ডগোলের কথা গত ৩৪ বছরে শোনা যায়নি। এর ফলে ভাল ছাত্রেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
জেলা কংগ্রেসের সভাপতি শঙ্কর সিংহ বলেন, “ঘটনাটি খুবই নিন্দ্যনীয় ও দুঃখজনক। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অথচ প্রশাসনের কোনও ভূমিকা নেই।” শঙ্করবাবু বলেন, “পুলিশ ওই ঘটনার পরে অন্যায়ভাবে কয়েকজন ছাত্রকে মারধর করেছে ও ধরে নিয়ে গিয়েছে। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।” সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “নরেশবাবু কী কারণে ছাত্র পরিষদকে দায়ী করছেন, তা জানি না।” জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “পরীক্ষা নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে চাকদহে রেল অবরোধ করতে গিয়েছিল কিছু ছাত্র। তাঁদের মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য দিকে রানাঘাট কলেজে ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও তিন জনকে।” জেলাশাসক অভিনব চন্দ্র বলেন, “বগুলা কলেজে কেন পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |