কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতিতে সেখানকার রেজিস্ট্রারও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে আগেই। এ বার নিজেরই শংসাপত্র জাল করার অভিযোগ উঠল ওই রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। শুক্রবার এই অভিযোগে হরিণঘাটা থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন কল্যাণীর মহকুমাশাসক শৈবাল চক্রবর্তী। আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে গড়া কমিটিতে অন্যতম অভিযুক্ত রেজিস্ট্রারকেও রেখেছিল পরিচালন সমিতি। এ দিন সংবাদপত্রে সেই খবর প্রকাশের পরেই ওই কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রেজিস্ট্রার।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, রেজিস্ট্রার অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৮৯ সালে চাকরি পাওয়ার সময় যে-সব শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের শংসাপত্রটি জাল বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর অন্য শংসাপত্রগুলি আসল কি না, তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানান মহকুমাশাসক। |
শুধু শংসাপত্র জালের অভিযোগই নয়। রেজিস্ট্রার হওয়ার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষায় ন্যূনতম যত নম্বর থাকা আবশ্যিক, অশোকবাবুর তা নেই বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার স্তরের পদে চাকরি পেতে গেলে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষাতেই ৫৫ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেতে হয়। কিন্তু অশোকবাবুর তা নেই। তিনি যে-সব শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৩ শতাংশ, বিএ পরীক্ষায় ৪৪ শতাংশ এবং এমএ-তে ৪৪.৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। তা ছাড়া তিনি যে-সব শংসাপত্র জমা দিয়েছেন, সবই হাতে লেখা। এই সব বিষয় থেকেই সন্দেহ হয়েছিল মহকুমাশাসকের।
জেলা প্রশাসনের তরফে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে অশোকবাবুর শংসাপত্রের প্রতিলিপি পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সেটি আসল কি না। উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের তরফে ডেপুটি সেক্রেটারি শুক্রবার এক চিঠিতে জানান, শংসাপত্রটি জাল। তার পরেই জেলাশাসকের নির্দেশে থানায় এফআইআর দায়ের করেন মহকুমাশাসক। রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ৪২০, ৪৬৮ এবং ৪৭১ ধারা (জালিয়াতি ও সরকারকে প্রতারণা)-য় অভিযোগ এনেছেন তিনি। তার পরেই রেজিস্ট্রার বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বাড়িতে গিয়েও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ।
অশোকবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “তদন্তে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। মহকুমাশাসক যে-সব কাগজপত্র চেয়েছিলেন, তাঁকে সেগুলো দিয়েছি। এর মধ্যে কোনও ধোঁয়াশা নেই।”
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ফিনান্স কন্ট্রোলার-সহ আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তদন্ত চলছে। এর মধ্যে রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে শংসাপত্র জালের অভিযোগ ওঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। শিক্ষক ও কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এখানে আরও অনেককেই চাকরি দেওয়া হয়েছে। অথচ চাকরি পাওয়ার যোগ্যতাই নেই তাঁদের। |