এই দুনিয়ায় সকল ভাল! এমন কী, ফ্যাট-ও ভাল।
খাবারে ‘ফ্যাট’-এর কথা শোনামাত্র আশঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
হৃদযন্ত্রের যত্ন নিতে গিয়ে ফ্যাট-যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু নির্বিচারে ফ্যাট-বর্জনের প্রবণতাকে বিপজ্জনক বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারণ এমন অনেক ‘ভাল ফ্যাট’ রয়েছে, যাদের অভাবে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ফ্যাট-যুক্ত কোনও খাবার বাতিলের তালিকায় ফেলার আগে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন তাঁরা।
কী রকম? হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, হার্টের রোগীদের স্যাচ্যুরেটেড ফ্যাট খেতে বারণ করা হয়। “কিন্তু আনস্যাচ্যুরেটেড ফ্যাট খাবারে থাকা খুব প্রয়োজন।” স্যাচ্যুরেটেড ফ্যাট বা ‘খারাপ ফ্যাট’ থাকে ঘি, পাম তেল, নারকেল তেলের মতো জিনিসে। বারবার একই তেলে ভাজা খাবারেও জমা হয় এই ধরনের ফ্যাট। তার থেকে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু তা এড়িয়ে চলতে গিয়ে অনেকেই ভাল ফ্যাট খাওয়াও বন্ধ করে দিচ্ছেন। ‘‘ভাল ফ্যাট’ শরীরে না থাকলে চর্মরোগ, অপুষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে। শরীরে কিছু কিছু হরমোন তৈরি না হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
তা হলে গড়পড়তা মানুষ ফ্যাট এড়িয়ে চলার রাস্তায় হাঁটছেন কেন? আর এক হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ অশোক করের মত হল, গোল বেধেছে অন্যত্র। “ফ্যাট-ফ্রি কথাটা ঠিক অর্থে ব্যবহার করা হয় না বলেই এত সমস্যা।” তিনি জানান, শরীর সুস্থ রাখতে পরিমিত আহার সব সময়েই প্রয়োজন। তবে অনেকেই অতিরিক্ত সচেতন হতে গিয়ে সব ধরনের ফ্যাট এড়িয়ে চলার ভুল করে থাকেন। তিনি বলেন, “ইলিশ মাছ এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের তেল খেতে বলি রোগীদের। অনেকেই এ সব এড়িয়ে চলতে চান।” কিন্তু মাছের তেল শরীরের জন্য ভালই। সয়াবিন তেল, বাদাম তেল, সর্ষের তেল খাওয়াও বেশ উপকারী। চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, কোলেস্টেরল মাত্রেও ক্ষতিকারক নয়। কিছু ধরনের কোলেস্টেরল বরং মানুষের শরীরে থাকা খুবই জরুরি।
ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থেকে হৃদ্যন্ত্রের যে ক্ষতি হতে পারে, সে তথ্য এখন অধিকাংশেরই জানা। সেই রোগের নাম ‘অ্যাথেরোসক্লেরসিস’। ধমনীর গায়ে ‘লো ডেন্সিটি লাইপো-প্রোটিন’ (এল ডি এল) বা ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ জমে গিয়ে ধমনীকে সরু করে দেয়। এর থেকে স্ট্রোক, কিডনির সমস্যার পাশাপাশি আরও নানা ধরনের রোগ হতে পারে। শুভ্রবাবু জানালেন, শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ‘হাই ডেন্সিটি লাইপো-প্রোটিন’ (এইচ ডি এল) বা ‘ভাল কোলেস্টেরল’ এই সব সমস্যা রুখতে সাহায্য করে। ধমনীর দেওয়ালে জমে যাওয়া এল ডি এল-কে সরিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখে। শুভ্রবাবু বলেন, “এইচ ডি এল যাতে যথেষ্ট তৈরি হয় শরীরে, সে দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। শুধু খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর নয়, নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন।” ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ধূমপান বন্ধ করা জরুরি। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, খাবারে যাতে অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট না থাকে।
এইচ ডি এল বাড়াতে জীবনযাত্রা সম্পর্কে সচেতন থাকা যে খুব প্রয়োজনীয়, সে ব্যাপারে একমত হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ অরুণাংশু গঙ্গোপাধ্যায়ও। তাঁর মতে, রোজ আধ ঘণ্টা করে হাঁটলে বা অ্যারোবিক্স করলে অনেকটাই ফল পাওয়া যায়। ফল, সব্জি, ওটস্, অলিভ অয়েল, পি-নাট বাটারের মতো খাবারে মোনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এই জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ছাঁকা তেলে মাছ রান্না করলে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ইলিশের মতো বড় মাছ ভাপে রান্না করে খেলেই শরীরের পক্ষে সবচেয়ে ভাল।
শরীরে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ানোর জন্য অনেক ওষুধও আছে। তবে সে ভাবে হার্টকে কতটা রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে চিকিৎসক মহলে। তাঁদের মতে, স্বাভাবিক পদ্ধতিতে এইচ ডি এল তৈরি হলে শরীরে এমন আরও কিছু পরিবর্তন ঘটে, যা হার্টকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। ওষুধের মাধ্যমে কোলেস্টেরল বাড়ালে তা না-ও হতে পারে। তাই ‘হার্টও ভাল, ফ্যাটও ভাল’ রাখতে গেলে সবার চাইতে ভাল উপায় একটিই!
সচেতন জীবনযাত্রা। |