বন্ধ্যাকরণের অস্ত্রোপচার করতে শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সুমতি বিশ্বাস। সেই অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে চিকিৎসক তাঁর বৃহদন্ত্রে একাধিক ফুটো করে ফেলেছেন বলে অভিযোগ।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ফাঁসিদেওয়ার জ্যোতিনগরের বাসিন্দা সুমতিদেবী গত ১৩ জুলাই অস্ত্রোপচারের পরেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, মহিলার বৃহদন্ত্রের তিন জায়গায় কাটা দাগ বা ফুটো রয়েছে। সেই ছিদ্র দিয়ে মল পেটের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ হচ্ছে। এর পর ১৭ জুলাই অস্ত্রোপচার করে তা পরিষ্কার করা হয়। বৃহদন্ত্রের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এখনও সারানো সম্ভব হয়নি। অস্ত্রোপচার করে তাঁর শরীরের বাইরের অংশে ‘কোলেস্টমি ব্যাগ’ লাগানো হয়েছে। তাতেই মল জমা হচ্ছে।
|
সুমতি বিশ্বাস |
রোগিণীর বাবা নিখিল সরকার অভিযোগ করেছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে ফাঁসিদেওয়া থানায় অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু অভিযোগ নেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলে সুপারের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারেন। তার পর তিনি রোগীর বাড়ির লোকজনকে ডেকে পাঠান। রোগীর পরিবারের তরফে তাঁকে বিস্তারিত অভিযোগ জানানো হয়। রুদ্রনাথবাবু বলেন, “কী করে এমন ঘটনা ঘটল, বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হবে। এমন ঘটনা নিন্দনীয়। সুমতিদেবীর চিকিৎসার যাতে অসুবিধা না হয় সেটাও দেখা হবে।”
সুমতিদেবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এক মেয়ে এবং দুই ছেলে হওয়ার পর তিনি বন্ধ্যাকরণের সিদ্ধান্ত নেন। সুমতিদেবীর মা বিশাখা দেবীর অভিযোগ, “অস্ত্রোপচারের পর মেয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে দেখে চিকিৎসককে জানাই। চিকিৎসক বলেন, ওই রকম ব্যথা নাকি একটু হয়। রাতে যন্ত্রণা বাড়লে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমতিদেবীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেন। আমরা বলি, অত রাতে নিয়ে যেতে সমস্যা হবে। তখন চিকিৎসক জানান, লিখিত দিতে হবে, রোগীর কিছু হলে তার দায় হাসপাতালের নেবে না। এর পরই রাত ১টা নাগাদ মেয়েকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাই।” উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস জানান, সুমতিদেবীর সুস্থ হতে সময় লাগবে। ফাঁসিদেওয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করতে চাননি। তবে, দার্জিলিঙের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক বলেন, “ফাঁসিদেওয়া হাসপাতাল থেকে আমাকে জানানো হয়েছিল যিনি অস্ত্রোপচার করেছেন, তিনি এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। অনিচ্ছাকৃতভাবেই এটা ঘটে গিয়েছে। তাই ওই রোগিণীকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রেখে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়। এই ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে বিমা করানো থাকে। সেই ক্ষতিপূরণ যাতে রোগিণী পান, তার চেষ্টা করছি।” |