পরিবহণ থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন তাঁরা। তবে অন্তত শিক্ষার বিষয়ে চরম প্রতিপক্ষের ভূমিকা নিলেন না বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বরং সহযোগিতারই আশ্বাস দিলেন সরকারকে। বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করতে যায় বামফ্রন্টের সাত প্রতিনিধির একটি দল। পরে বিরোধী দলনেতা বলেন, “আমরা পারস্পরিক মত বিনিময়ের জন্যই এসেছিলাম। সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।”
রাজ্যে অবৈতনিক, সর্বজনীন এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা সুনিশ্চিত করা, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার বিরোধিতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের শূন্য পদ পূরণ, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করার মতো এক গুচ্ছ দাবিতে এ দিন ব্রাত্যবাবুর কাছে স্মারকলিপি দেন বামফ্রন্টের প্রতিনিধিরা। সূর্যকান্তবাবু পরে বলেন, “শিক্ষা রাজ্য ও কেন্দ্রের যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়। কিন্তু রাজ্যের ঘাড়ে যে-দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা পালন করার মতো অর্থ নেই। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির জন্য বরাদ্দ অর্থ এবং অধিকার দু’টোই বাড়িয়ে দিক। আমরা রাজ্যকে সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।” |
বিরোধী পক্ষের সঙ্গে মুখোমুখি ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রীও খুশি। ব্রাত্যবাবু জানান, বাম প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁর ভাল লেগেছে। তিনি বলেন, “শিক্ষা ক্ষেত্রের অনেক বিষয়েই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ওঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর উপরে আস্থা প্রকাশ করে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর কথাও বলেছেন।” শিক্ষামন্ত্রী জানান, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরি, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার অধিকার আইন সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছেন বাম প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা। তিনি জানান, শিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্যাগুলির বেশির ভাগই যে অনেক পুরনো, বিরোধী পক্ষের প্রতিনিধিরা সে-কথাও মেনে নিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ওঁরা রাজ্যের কলেজগুলি নিয়ে ‘ম্যাপিং’ (কোন জেলার কোথায় কোন কলেজ আছে, তার মানচিত্র)-এর কথা বলেছেন। ওঁদের জানিয়েছি, সেই কাজ হয়ে গিয়েছে।” মন্ত্রী জানান, বাম শিবির নতুন করে ‘সেল্প-ফিনান্সিং’ (সরকারি সাহায্যহীন) পাঠ্যক্রম চালু করার বিরোধী। নতুন সরকার যে ওই পাঠ্যক্রম আর চালু না-করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বাম প্রতিনিধিদের তা জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের পাঠ্যক্রমের জন্য নতুন নিয়মনীতি তৈরি করা হচ্ছে।”
শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার সমাধান করে সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরানোর কথা ছিল বামেদের স্মারকলিপিতে। কিন্তু এ দিনের বৈঠকে সেই সব বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছে দু’পক্ষই। সূর্যকান্তবাবু বলেন, “এ ব্যাপারে একক ভাবে উচ্চশিক্ষা দফতরের কিছু করার নেই। এটা গোটা প্রশাসনের বিষয়। এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।” |