হাজারো নির্দেশ আর সতর্কবাণীই সার। রাজ্য জুড়ে স্কুলগাড়ির বেপরোয়া যাতায়াত কোনও ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। যদিও স্কুলগাড়ির এই বেপরোয়া যাতায়াত নিয়ে চিন্তিত খোদ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। কিন্তু এ নিয়ে রাজ্য সরকারের ‘গাফিলতি’কেই দায়ী করছে স্কুলগাড়ি-মালিকদের সংগঠন। পরিবহণমন্ত্রী জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তিনি স্কুলগাড়ি সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলতে বৈঠক করবেন।
বৃহস্পতিবার বালির দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ও দক্ষিণ কলকাতার ডায়মন্ড হারবার রোডে দু’টি পৃথক স্কুলগাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। দু’টিতেই অল্পের জন্য বড় অঘটনের হাত থেকে রক্ষা পায় পড়ুয়ারা। কয়েক জন পড়ুয়ার কমবেশি চোট লাগে। তবে বালির ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন এক পথচারীও। গত জুনেও বালিতে স্কুলগাড়ি দুর্ঘটনায় কয়েক জন ছাত্রী গুরুতর জখম হয়েছিল।
‘পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক আবির রায় বলেন, “স্কুলগাড়ির বেপরোয়া যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হলে, প্রথম একে একটি সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে। কিন্তু প্রশাসনের তরফেই আজও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পারমিটের ব্যবস্থাও হয়নি।” |
‘পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে কলকাতার মাত্র ৮২টি স্কুলগাড়িকে বেলতলা মোটর ভেহিক্লস থেকে পারমিট দেওয়া হয়। এর পরে প্রায় ৮৫০টি গাড়ি টাকা জমা করে। কিন্তু তারা আজও পারমিট পায়নি। আবিরবাবুর অভিযোগ, অসংখ্য গাড়ি ব্যক্তিগত মালিকানা থেকে বাণিজ্যিক গাড়িতে রূপান্তরিত করেও পারমিট পাচ্ছে না। কিন্তু অনেকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ি কিনে তা স্কুলগাড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়েও ফাঁকি পড়ছে। সংগঠনের সদস্যদের কথায়, “বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের গাড়িকে বছরে দশ হাজার টাকা কর দিতে হয়। আর ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত গাড়িকে দিতে হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা। কম পরিমাণ কর দিয়েই ওই গাড়িগুলি স্কুলগাড়ির ব্যবসা করছে।”
সংগঠনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? আবিরবাবুর কথায়, “কলকাতা-সহ অন্যান্য জেলায় স্কুলগাড়ির সংখ্যা কত, তার কোনও রেকর্ড নেই। পারমিটের ব্যবস্থা না হলে কোন গাড়ি বৈধ আর কোনটা অবৈধ, তা-ও বোঝা যাচ্ছে না।”
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন বলেন, “স্কুলগাড়ির মালিক সংগঠনের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসা হবে। কারণ, এর সঙ্গে ছোট ছোট শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। সংগঠনের বক্তব্যও শোনা হবে। প্রয়োজনে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।”
পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বালির বেলানগর থেকে ১৪ জন ছাত্রীকে নিয়ে একটি ছোট স্কুলবাস তীব্র গতিতে আসছিল। তখনই রাস্তা পেরোতে যাওয়া হরিলাল দাসমুন্সী নামে এক ব্যক্তিকে ধাক্কা মারে সেটি। হরিলালবাবুর শরীর বাসের চাকায় আটকে যায়। সেই অবস্থায় তাঁকে কিছুটা টেনে নিয়ে যায় বাসটি। এর পরে বাসটি বালি হল্টের কাছে দাঁড়ানো একটি বেসরকারি বাস ও রাস্তার পাশের গার্ডওয়ালে ধাক্কা মেরে দাঁড়িয়ে যায়। হরিলালবাবুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। বাসচালক ও খালাসি পলাতক।
অন্য দিকে, ডায়মন্ড হারবার রোডে মাঝেরহাট ব্রিজ থেকে নেমে তারাতলা ব্রিজে ওঠার সময়ে একটি ট্যাক্সি রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। তার পিছনেই আসা পড়ুয়া বোঝাই একটি টাটা সুমো ধাক্কা খায় ট্যাক্সিটিতে। সুমোর পিছনে আসা আরও দু’টি গাড়িও পরপর ধাক্কা মারে। এই ঘটনাতেও চার জন পড়ুয়া সামান্য আঘাত পায়। মোমিনপুরের একটি স্কুলের ওই পড়ুয়াদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আবিরবাবু বলেন, “আমরা বলেছিলাম, স্কুলগাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু কিছুই হয়নি।” এ প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “আলোচনা করেই সমস্ত বিষয় ঠিক করা হবে।” |