কলকাতা পুরসভায় মাস ছয়েক ঘুরেও টালির নালা সংস্কারের বিষয়ে একটি তথ্য জানতে পারেননি বেহালার মিহির দত্ত। বাধ্য হয়ে তিনি রাজ্য তথ্য কমিশনের দ্বারস্থ।
খড়দহের বিমল চন্দ টিটাগড়ের একটি কারখানায় কাজ করতেন। প্রায় ১০ বছর কারখানাটি বন্ধ থাকায় পাওনাগণ্ডা পাননি। কারখানা খোলার ব্যাপারে রাজ্যের শ্রম দফতর কী ব্যবস্থা নিয়েছে, ব্যারাকপুরে ডেপুটি লেবার কমিশনারের দফতর থেকে তা বারবার জানার চেষ্টা করেছেন তিনি। সন্তোষজনক জবাব না-পেয়ে রাজ্য তথ্য কমিশনের দ্বারস্থ তিনিও।
এই ভাবে প্রতিদিন মিহিরবাবু, বিমলবাবুদের হাজারো আবেদনের চাপে কার্যত হিমশিম খাচ্ছে রাজ্য তথ্য কমিশন। প্রতি মাসে একশো আবেদনের শুনানি করেও পরিস্থিতির সামাল দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানান রাজ্যের মুখ্য তথ্য কমিশনার সুজিতকুমার সরকার। কমিশনে তিনি ছাড়া রয়েছেন দু’জন তথ্য কমিশনার। তবু আবেদনের পাহাড় জমছে। সুজিতবাবুর কথায়, “কমিশনে তিন হাজারেরও বেশি আবেদন পড়ে আছে।”
তথ্য জানতে চাওয়া নাগরিকদের আবেদন জমে যাচ্ছে কেন? এক কথায় উত্তর, তথ্য জোগান দেওয়ার জন্য জেলা, মহকুমা বা ব্লক স্তরে যথেষ্ট অফিসারের ব্যবস্থা করা হয়নি। নিচু স্তরে তথ্য না-পেয়ে বা পাওয়া জবাবে তুষ্ট হতে না-পেরে অনেকেই রাজ্য তথ্য কমিশনে আবেদন করছেন। সেখানে জমে যাচ্ছে আবেদনের পাহাড়। তথ্যের অধিকার আইন বলবৎ হওয়ার পরে সাত বছর কেটে গিয়েছে। কথা ছিল, আইন বলবৎ হওয়ার একশো দিনের মধ্যে সরকারের প্রতিটি দফতর জেলা, মহকুমা, ব্লক স্তরে পাবলিক ইনফর্মেশন অফিসার বা পিআইও নিয়োগ করবে। কিন্তু পঞ্চায়েত দফতর ছাড়া সরকারের আর কোনও দফতর এখনও এই কাজ করে উঠতে পারেনি। কেন এই কাজ করা যায়নি? রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পুর্ণেন্দু বসু বলেন, “আমি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।” একই কথা জানান নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
তথ্যের অধিকার আইনে বলা আছে, আবেদনকারী প্রথমে ব্লক বা মহকুমা বা জেলা স্তরে কোনও দফতরে নির্দিষ্ট তথ্য জানতে চেয়ে যদি তা না-পান অথবা পেলেও যদি সন্তুষ্ট না-হন, তিনি রাজ্য স্তরে সংশ্লিষ্ট দফতরের স্টেট ইনফর্মেশন অফিসার বা রাজ্য তথ্য অফিসার (এসপিআইও)-এর কাছে আবেদন করবেন। সেখানেও একই পরিণতি হলে তিনি একেবারে শেষ ধাপে আবেদন করতে পারেন রাজ্য তথ্য কমিশনে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে জেলা, মহকুমা, ব্লক স্তরে তথ্য অফিসারই যে নেই! যেখানে আছে, সব সময় সেখানে পাওয়া তথ্যে আবেদনকারী সন্তুষ্ট হতে পারছেন না।
পিআইও নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের গা-ছাড়া মনোভাবের কারণ কী? এক সরকারি কর্তার কথায়, অধিকাংশ দফতরে অধস্তন অফিসারকে ওই দায়িত্ব দিয়ে দেখা গিয়েছে, কাজ হচ্ছে না। কারণ, আবেদনকারীকে জানানোর জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ঊর্ধ্বতন অফিসারের সাহায্য নিতে হবে। বিভিন্ন কারণে সেটাই পেরে উঠছেন না বহু অধস্তন অফিসার। মুখ্য তথ্য কমিশনার সুজিতবাবু বলেন, “জেলা স্তরে কাকে পিআইও নিয়োগ করা হবে, তা ঠিক করবে সংশ্লিষ্ট দফতর। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।”
নিয়ম অনুযায়ী সব সরকারি অফিসে পিআইও-র নাম নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে রাখার কথা। অভিযোগ, প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই তা না-থাকায় বহু মানুষ আবেদনই করতে পারছেন না। পঞ্চায়েত দফতরে এই ব্যবস্থা থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতাদের ভয়ে পিআইও আবেদনকারীকে ‘প্রকৃত তথ্য’ সরবরাহ করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। তথ্য কমিশনার জানান, গত কয়েক বছরে সব চেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে কলকাতা ও অন্যান্য পুরসভাকে নিয়ে। তার পরেই তালিকায় রয়েছে ভূমি সংস্কার, শিক্ষা, রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ। |