উত্তরবঙ্গের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে পর্যটন নিয়ে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে মন্ত্রী ওই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কলকাতা ফিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত যাতে বিভিন্ন রাস্তার গর্ত বোঝাই-র কাজ করা হয় তার অনুরোধ করবেন মন্ত্রী। বিষয়টি স্থানীয় বিধায়ক তথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টর্চাযকেও দেখার অনুরোধ করে মন্ত্রী। পর্যটন মন্ত্রী বলেন, “তিন দিন ধরে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলার একাংশ ঘুরলাম। রাস্তাঘাটের হাল না বলাই ভাল। যা দেখলাম, শুনলাম তা ভয়াবহ। পর্যটকেরা তো বিমানবন্দর বা স্টেশনে নেমেই ফিরে যাবেন। জাতীয় সড়ক নিয়ে সমস্যা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তা দেখছেন। তবে দ্রুত যাতে কিছু কাজ করা যায় তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে বলব।” এর পাশাপাশি, পর্যটন মন্ত্রীর কটাক্ষ, “ডুয়াসের্র জঙ্গল এলাকায় রাস্তাঘাট তো মানুষ নয়, পশু চলাচল করার যোগ্য। এযেন রাস্তায় মানুষের সক্ষমতার শারীরিক পরীক্ষা চলছে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন।” সরকারি সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের ৩১, ৩১-এ, ৩৪, ৩১-সি, ৩১-ডি ছাড়াও ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থা বেহাল। বড় বড় খানাখন্দে জাতীয় সড়কগুলি ভরে গিয়েছে। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তাগুলি পুকুরে পরিণত হচ্ছে। রাজ্য সড়কেরও অনেকটা একই হাল। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলার অবস্থা এরমধ্যে সবচেয়ে খারাপ। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয় সড়ক কতৃর্পক্ষের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতৃত্বকে আন্দোলনে নামার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, রাজ্য হাইওয়ে কমিশনের মাধ্যমে রাজ্য সড়কের কাজ করার কথাও জানান। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সেবক দুই মাইল এলাকায় একটি বিলাসবহুল হোটেলে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিধায়ক রুদ্রনাথবাবু, পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত-সহ পাহাড়, ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতেরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ফোসিনের প্রতিনিধিরাও। সভায় মন্ত্রী জানান, রাজ্যে একটি ট্যুরিজম বোর্ড তৈরি করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। বোর্ড পর্যটন দফতরের বিভিন্ন কাজকে দিক নির্দেশ, সাহায্য করবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ওই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করবেন। বোর্ডের উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এ ছাড়া তৈরি করা চিন্তভাবনা চলছে একটি পর্যটন আইনেরও। বন্ধ, ধর্মঘটকে ‘আপৎকালীন’ পরিষেবা হিসাবে চিহ্নিত করার দাবি পর্যটনের এই আয়োজক সংগঠনের তরফে তোলা হয়েছে। মন্ত্রীকে এদিন বিষয়টি দেখার জন্য বলা হলে তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিধানসভায় বিষয়টি তুলব। অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি, সিকিমে রাজ্যের নম্বরের গাড়ি চলাফেরা নিয়ে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা নিয়ে আগামী ২৮ জুলাই কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়ের সঙ্গে আলোচনা করব। ওই রাজ্যের গাড়ি এখানে অবাধে চলবে। অথচ আমাদের গাড়ি সিকিমের তিনটি জায়গা ছাড়া যেতে পারবে না এটা হতে পারে না। পাশাপাশি, বাগডোগরায় যাতে আরও বেশি পরিমাণে বিমান চলাচল করে তাও কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানো হবে। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘রোডশো’ এবং সেমিনার, আলোচনা সভা করার কথাও পর্যটন মন্ত্রী জানিয়েছেন। এই এলাকায় নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, ভিলেজ পর্যটন, হেলিকপ্টার সার্ভিস, বিভিন্ন এলাকায় টুরিস্ট তথ্য সম্বলিত বোর্ড, গলফ কোর্স, চা পর্যটনের নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে পর্যটনমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি জানান, আমার টুরিস্ট ট্যাক্সি নামক একটি স্বনির্ভর প্রকল্প তৈরি করছি। সেখানে আমরা বিলাসবহুল গাড়ি কিনব। উৎসাহী যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার পরে তাঁরা সেগুলি চালাবে। এবং সহজ মাসিক কিস্তিতে ধীরে ধীরে দাম শোধ করবেন। এদিন অনুষ্ঠানে শিলিগুড়ি বিধায়ক রুদ্রনাথবাবু পর্যটন মন্ত্রীকে পর্যটন দফতরের টুরিস্ট লজ ‘মৈনাকে’র পরিষেবার মান বাড়ানোর জন্য নজর দেওয়ার অনুরোধ করেন। |