মোমবাতি এখন প্রতিবাদের হাতিয়ার। মোমবাতি জ্বেলে প্রায়শই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এ বার তার নির্মাতারাই মোমবাতি হাতে প্রতিবাদের রাস্তায় হাঁটতে চলেছেন।
রাজ্যের মোমবাতি নির্মাতাদের বক্তব্য, কাঁচামালের (প্যারাফিন) দাম বেড়ে যাওয়ায় মোমবাতি শিল্পে অন্ধকার নেমে এসেছে। এই অবস্থায় রাজ্য সরকার তাদের ‘যুক্ত মূল্য কর’ না তুললে অচিরেই উঠে যাবে এই শিল্প। বিষয়টি নিয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ মোম জাতীয় শিল্প গোষ্ঠীর’ পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অর্থ এবং ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প মন্ত্রীর কাছে দরবার করা হয়েছে। এর আগে বিষয়টি নিয়ে বাম সরকারের দ্বারস্থও হয়েছিল সংগঠনটি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। প্রায় ৬ মাস কেটে যাওয়ার পরে বর্তমান রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনারও প্রস্তাব আসেনি। ফলে অনিশ্চয়তা ক্রমশ বাড়ছে। প্রবল উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ২ হাজার পরিবার।
কী কারণে মোম শিল্পে মন্দা দেখা দিয়েছে?
মোমবাতি শিল্পের মূল উপকরণ হল, প্যারাফিন-২। এটি একটি পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য, যা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের অসম ডিভিশন থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত পাঁচ বছরে দফায় দফায় ওই প্যারাফিনের দাম টন প্রতি প্রায় ৬২ হাজার টাকা বেড়েছে। ২০০৭ সালে যেখানে টন প্রতি দাম ছিল, প্রায় ৬০ হাজার টাকা। ২০১২ সালে সেটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ ২২ হাজার টাকার কাছাকাছি। এই অবস্থায় ওই শিল্পের মন্দা ঠেকাতে দেশি এবং বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে অনেক কারখানা মালিকই ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু এখন ওই টাকা মেটানো তো দূর অস্ত, তাঁরা ব্যাঙ্কের সুদও দিতে পারছেন না। ধীরে ধীরে মোমবাতির কারখানাগুলি বন্ধ হতে শুরু করেছে।
এই শিল্প গোষ্ঠীর সম্পাদক সমীর দে বলেন, “চার বছর আগেও পশ্চিমবঙ্গে ১২০০ মোমবাতি তৈরির কারখানা ছিল। |
কিন্তু এই মন্দার ফলে তা কমতে কমতে এখন দাঁড়িয়েছে ৪০০টির মতো। এই ৪০০ কারখানার সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় ২০০০ পরিবার। সঙ্কটে পড়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।”
কিন্তু এই মন্দা কাটানোর উপায় কী?
সমীরবাবুর বক্তব্য, এই শিল্পটি রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অন্তর্গত। কুটির শিল্প বাঁচাতে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার নানা নিয়ম-নীতি গ্রহণ করেছে। যেমন ধূপ, শাঁখা, শঙ্খ, আলতা ইত্যাদির উপর থেকে ‘যুক্ত মূল্য কর’ তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, “আমাদের এই শিল্প থেকেও সরকার ওই ‘যুক্ত মূল্য কর’ তুলে নিক। না হলে এই শিল্পকে আর বাঁচানো যাবে না।” এ নিয়ে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “বিষয়টি আমার দফতরের এক্তিয়ারে পড়ে না। তবু আমরা
অর্থ দফতরের কাছে পাঠিয়েছি। যদি ওই শিল্প গোষ্ঠী আমাদের পরামর্শ চায়, তবে আমরা আলোচনায় প্রস্তুত।” চিন আর জাপানে মোমবাতি তৈরি শুরু হয়েছিল তিমির ফ্যাট থেকে। পরে গাছের নির্যাস থেকে তৈরি করা হত মোম। ভারতে অনেক পরে আসে প্যারাফিন। তবে এখন শুধু অন্ধকারে আলো জ্বালানোতেই সীমাবদ্ধ নেই মোমবাতির কাজ। গত কয়েক বছর ধরে গোটা বিশ্বে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে সেটি। সমীরবাবুদের কথায়, “মোমবাতি শিল্পে মন্দা আসা মানে নীরব প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ হওয়া।” |