রাজ্যে পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রকে দুষলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। তবে একই সঙ্গে করের হার কমিয়ে সাধারণ মানুষকে অন্তত কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার বল ঠেলে দিলেন রাজ্য সরকারের কোর্টে। সেই প্রসঙ্গে নস্যাৎ করলেন ঋণ শুধতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হওয়া নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবিও।
রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি এ রাজ্যে তেলের দাম বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন অসীমবাবু। সেখানে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি করে তিনি বলেন, “একেবারে হঠাৎ করে বাড়তি ভর্তুকি বওয়ার দায় যে কেন্দ্র নিজেদের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলছে, তা অযৌক্তিক, অন্যায়। কারণ, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ মানুষ।” তাঁর অভিযোগ, “অপেক্ষাকৃত বিত্তশালীদের কাছ থেকে সামান্য বেশি কর আদায় করলেই অন্তত ৩ লক্ষ কোটি টাকা আয় বাড়াতে পারে কেন্দ্র। কিন্তু সেই পথ এড়িয়ে তাদের চোখ গরিবের ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের দিকে।”
প্রত্যেক রাজ্যের জন্য আলাদা ভাবে আদায়-অযোগ্য করের ভার (ইররিকভারেব্ল ট্যাক্সেস) হিসেব করার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে ২০০৩ সালের একটি নির্দেশিকার কথা উল্লেখ করেছে তেল সংস্থাগুলি। এ দিন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অসীমবাবু। তিনি বলেন, “এত দিন তা হলে এ নিয়ে কেন চুপ ছিল কেন্দ্র? কেনই বা এ নিয়ে পদক্ষেপ করার আগে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলল না তারা?” কেন্দ্রের প্রতি অসীমবাবুর এই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কার্যত এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তাঁকে। যদিও অসীমবাবুর দাবি, বহু আগে থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন তাঁরা।
একই সঙ্গে মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেওয়ার দায় রাজ্যের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “২০০৮-’০৯ সালে তেলের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ার সময় কিছু দিনের জন্য পেট্রোল, ডিজেল উভয়ের ক্ষেত্রেই বিক্রয় করের হার কিছুটা কমিয়েছিলাম আমরা। এতে ৪৫০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় হয়তো সম্ভব হয়নি। কিন্তু কিছুটা সুবিধা হয়েছিল সাধারণ মানুষের। আশা করি, সেই একই পথে হাঁটার কথা ভেবে দেখবে রাজ্য।”
এই প্রস্তাবের জবাবে রাজ্য যে প্রথমেই তার দেউলিয়া দশার কথা বলবে, তা বিলক্ষণ জানেন অসীমবাবু। যে কারণে এই সূত্রেই তিনি জানিয়েছেন, “বর্তমান রাজ্য সরকারের বাজেটের বয়ান অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে সম্ভাব্য আয় এক লক্ষ কোটি টাকা। সেখানে সুদ-আসলে মেটাতে হবে ২৫ হাজার কোটি। এর সঙ্গে সরকারি কর্মী ও শিক্ষক-অশিক্ষদের বেতন-পেনশনের দায় যোগ করলেও মোট ব্যয়ের অঙ্ক দাঁড়াবে ৬৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে তার পরেও হাতে থাকবে ৩৪ হাজার কোটি।” সুতরাং সুদ গুনতে গিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পরিসংখ্যান বিভ্রান্তিমূলক বলে মনে করছেন তিনি।
প্রায় আড়াই দশক রাজ্যের অর্থ দফতরের ভার সামলানো অসীমবাবু জানান, আড়াই বছর আগেই তেলের দাম নির্ধারণের বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আনতে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছিল বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে তৈরি ক্ষমতাপ্রাপ্ত মন্ত্রিগোষ্ঠী। বলা হয়েছিল, অশোধিত তেলের দাম, শোধনের খরচ, মুনাফার হার-সহ প্রতিটি আলাদা খাতে ব্যবসার খতিয়ান স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরুক তেল সংস্থাগুলি। যাতে পরিষ্কার হয়, কখন কোন পরিস্থিতিতে কতখানি লাভ বা ক্ষতি হচ্ছে তাদের। কিন্তু সেই দাবি এখনও মেটেনি।
অসীমবাবুর মতে, কেন্দ্রের উচিত অবিলম্বে বিষয়টি সব রাজ্যের কাছে খোলসা করা। যেমন উচিত দেশে তেল ও গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি কী ভাবে এগোচ্ছে, তা নিয়ে প্রতি বছর রিপোর্ট প্রকাশ করা। নইলে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে এই ধোঁয়াশা ভবিষ্যতে আরও সমস্যার জন্ম দেবে বলে অসীমবাবুর দাবি। |