ওডাফা ওকোলি আর টোলগে ওজবের পাশাপাশি লড়াই করে নতুন পরিচয় পত্রের সন্ধানে দুই নাইজিরিয়ান।
কলকাতায় পা রেখেই স্ট্যানলি ওকোরোইগি আর ইচেজোনা আনিয়েচি টের পাচ্ছেন, এ বারের মরসুম একেবারে আলাদা। অনেক চাপ। রবিবার দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত শপিং মলের ভিতরে দাঁড়িয়ে ছোটখাটো চেহারার স্ট্যানলি বলছিলেন, “মোহনবাগান আমার কাছে স্বপ্নের মতো। এত বছর ধরে অপেক্ষা করেছি, এই সুযোগটা পাওয়ার জন্য। আমার লক্ষ্য শুধু ভাল খেলা নয়, সেটাকে ধরে রাখাও।”
আর লম্বা ইচে? স্ট্যানলির বহু দিন কলকাতায় খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও, ইচের এক বছর খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সাদার্ন সমিতি ছেড়ে সদ্য মোহনবাগানে এসেছেন। শহরে পা দিয়েই দমদম বিমানবন্দরে ইচে চাপের কথা মানতে চাইলেন না অবশ্য, “বড় ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা আমার আছে। তাইল্যান্ড ও নাইজিরিয়ায় খেলেছি। তাই আমার কোনও চাপ নেই। এটাই শুধু জানি, ভাল পারফর্ম করতে হবে।” ইচে রবিবার এলেও, স্ট্যানলি চলে এসেছেন চব্বিশ ঘণ্টা আগে। শনিবারের পুরো রাত ইস্টবেঙ্গলের পেন ওরজি-র সঙ্গে কাটিয়েছেন গির্জায়। রবিবার রাতে বিমানবন্দরে কথা হয় ইচের সঙ্গেও। দু’জনেই সোমবার সকালে দুর্গাপুরের আবাসিক শিবিরে যোগ দেবেন। তার আগে দু’জনেই বলছিলেন, “আমরা যে কোনও জায়গায় খেলার জন্য প্রস্তুত। কোচ যে ভাবে চাইবে আমরা সে ভাবেই খেলব।” বিমানযাত্রার ক্লান্তি চোখেমুখে। তবু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় হাসছিলেন বড় চেহারার ইচে। |
অলোক মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে ছ’বছর আগে পোর্ট ট্রাস্টে আত্মপ্রকাশ ঘটে স্ট্যানলির। মাঝে এক বছর দিল্লির ক্লাবে, এক বছর রঘু নন্দীর এরিয়ানে। কিন্তু সেখানেও তাঁর কপালে ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই জোটেনি। অবশেষে নাইজিরিয়ানকে দিশা দেখান সেই অলোকই। গত বছর মহমেডানে এসে তাঁর নতুন জন্ম হয়। দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগ এবং কলকাতা লিগ মিলিয়ে মোট ১২টা গোল করে মোহনবাগানের দরজা খুলে ফেললেন স্ট্যানলি। ইচের অবশ্য ভারতে প্রথম ক্লাব সাদার্নই। সেখানকার কর্তারা ইচের পারফরম্যান্সে খুশি। দু’টো গোলও করেছেন তিনি।
স্ট্যানলির কাছে মোহনবাগান ‘স্বর্গ’ হলে, হোসে রামিরেজ ব্যারেটো ‘দেবতা’। যাঁকে এক ঝলক দেখার তাগিদে কত বারই না ছুটে গিয়েছেন যুবভারতীতে। নিঃশব্দে, আড়ালে গ্যালারিতে বসে উপভোগ করেছেন ‘দেবতা’র স্কিল। ছ’বছরের কঠোর পরিশ্রমের পরে মোহনবাগানের দরজা খুললে কী হবে, ব্যারেটো তো নেই। যা শুনে আফসোস ধরা পড়ে স্ট্যানলির গলায়, “ব্যারেটো আমার আদর্শ। লুকিয়ে লুকিয়ে ওর কত খেলা দেখেছি। মোহনবাগানে ও থাকলে সব ইচ্ছা পূরণ হয়ে যেত। এত বড় মাপের ফুটবলার খুব কমই এসেছে ভারতে।”
ব্যারেটোকে না পেলেও, স্বদেশীয় ওডাফাকে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত স্ট্যানলি। বললেন, “ওডাফা যখন সবে এসেছে, তখন থেকেই ওর সঙ্গে আমার আলাপ। কলকাতা ময়দানে আমরা এক সঙ্গে প্রচুর অনুশীলন করেছি। সে সময় আমরা বলতাম, যেখানেই খেলব একসঙ্গে খেলব। সেটা হয়ে ওঠেনি। এত বছর পরে ওর পাশে খেলব। ভাবলে দারুণ লাগছে।” ইচেকে প্রশ্ন করা হল, মোহনবাগানের দুর্বল রক্ষণ সামলাতে পারবেন? তাঁর জবাব, “এখনই আমার পক্ষে সমর্থকদের জন্য কিছু বলা সম্ভব নয়। আগে মাঠে নামি। তবে এটুকু বলতে পারি মাঠে আমার সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করব।” |