লড়াইয়ের বীভৎসতার মাপকাঠিতে এর পাশে হেভিওয়েট বক্সিং শিশু চলচ্চিত্র উৎসব।
হাইপ আর উত্তেজনার মাপকাঠিতে এর পাশে আইপিএল টেস্ট ক্রিকেট তুল্য বিশুদ্ধ।
চিৎকার আর সমর্থনের মাপকাঠিতে ইডেন গার্ডেন্সকেও এর তুলনায় সময় সময় মনে হতে পারে সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রাল।
‘এর’ মানে ইউএফসি! কোনও গাইডেড ট্যুর অপারেটর হলে সে এর পর নাটকীয় ভঙ্গিতে মড্যুলেশন এনে বলতলেডিজ অ্যান্ড জেন্টলমেন, ওয়েলকাম টু দ্য ওয়ার্ল্ড অফ ইউএফসি। আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ।
একেবারে গোদা বাংলায় সরলীকরণ, ইউএফসি হল বৈধ উপায়ে পৃথিবীর নৃশংসতম লড়াই।
সত্যি বলতে কী, বিশ্বের বিনোদন জগতের একমেবাদ্বিতীয়ম রাজধানী লাস ভেগাসে পা দেওয়ার আগে ভাবতেও পারিনি ইউএফসি নামে একটা তিন অক্ষরের শব্দ গোটা আমেরিকার দৈনন্দিন লেখচিত্রে যে এমন দোলাচল উপস্থিত করতে পারে!
ব্রাজিলের অ্যান্ডারসন সিলভা ভবিষ্যতে ইউএফসি-র ডব্লু জি গ্রেস হিসেবে বন্দিত হবেন। তিনি লড়াই করতে নামার আগে হাতটা তোলা মাত্র স্টেডিয়াম যা আওয়াজ তুলল, ওয়াংখেড়েতে এইমাত্র সেঞ্চুরি করা সচিন সেটা পেয়ে যাবেন। মিড্লওয়েট ক্যাটেগরিতে সিলভা সেদিন তাঁর টানা ছ’ বছরের খেতাবি লড়াই জিতে ওঠার পর দেখলাম বাঁধভাঙা দর্শকদের ব্রাজিলীয় হলুদ জার্সিতে সই দিচ্ছেন। জার্সিগুলোর প্রত্যেকটার নম্বর দশ। তা হলে কি দর্শকরা
|
বোর্ড হাতে
সুন্দরী |
পেলের ফ্যান? তাই এরা দশ নম্বর এনেছে? নাকি সিলভা নিজেই ফুটবলের মহানায়কের ফ্যান?
একটা টুকরো ভিড়কে জিজ্ঞেস করায় অসহিষ্ণু উত্তর পাওয়া গেলপেলে ছিলেন। আয়ার্টন সেনা ছিলেন। সব অতীত। সিলভা আছেন। জ্বলন্ত বর্তমান। আধুনিক ব্রাজিলের লেজেন্ড। লড়াই যেখানে এখুনি শেষ হল, লাস ভেগাসের সেই এমজিএম গ্র্যান্ড হোটেলের এক কিলোমিটারের মধ্যেই বিখ্যাত সিজার্স প্যালেস। সেই হোটেলের ভেতরকার বক্সিং রিং হল হেভিওয়েট বক্সিংয়ের স্বর্ণসিংহাসন। কত সাম্রাজ্য সেখানে অস্ত গিয়েছে। কত নতুন চ্যাম্পিয়নের সূর্য উদিত হয়েছে। টাইসনদের ওঠা-নামা সব এখানে থেকেই নির্দিষ্ট! নির্ধারিত! নির্মিত!
এমজিএম এমনিতে লাস ভেগাসের এক অপরিহার্য ঠিকানা। গত কুড়ি বছর ধরেই পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। তিরিশ তলা এই হোটেলের বিস্তৃতি নিউ মার্কেটের দ্বিগুণ। ভেতরে রয়েছে একটা নদী। পাঁচটা সুইমিং পুল। জলপ্রপাত। উনিশটা রেস্তোরাঁ। ১,৭১,৫০০ স্কোয়ার ফিট সমন্বিত ভেগাসের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো। ৩,৮০,০০০ স্কোয়ার ফিট জুড়ে কনভেনশন সেন্টার। বিশাল স্পা। এই হোটেল মাত্র কিছু
দিন আগেও বানিয়ে রেখেছিল পাঁচটা সিংহের খাঁচা। আজ্ঞে হ্যাঁ। সেখানে জীবন্ত সিংহের
নড়াচড়া প্রত্যক্ষ করার জন্য সারা পৃথিবী থেকে আসত পর্যটক।
কিন্তু এমজিএম গ্র্যান্ডের বুকে যে এমন পেল্লাই সাইজের স্টেডিয়াম আছে, সেখানে পনেরো-সতেরো হাজার লোক বসতে পারে কে জানত! কে জানত তারা প্রথম মিনিট থেকে কানে তালা লাগিয়ে দেওয়া এমন চিৎকার জুড়তে পারে। আর সেই চিৎকারকে আরও উচ্চগ্রামে, আরও হাইপ্ড করে দিতে পারে পারিপার্শ্বিক। কেবিসি-শো-তে যেমন হোস্টের ঠিক ওপরটায় অসাধারণ লাইটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট থাকত, তাকে মনে মনে দশ দিয়ে গুণ করুন। আর ছড়িয়ে দিন গোটা স্টেডিয়ামে। বসিয়ে দিন চারদিকে ভিডিও স্ক্রিন। মধ্যিখানে লোহার রিং। যেখানে পাঁচ মিনিট করে তিন রাউন্ডের লড়াই। কোন রাউন্ড কখন হচ্ছে বোঝার জন্য কোনও স্কোর বোর্ডটোর্ড নেই।
একমাত্র বোর্ড - সুন্দরী মহিলারা। তারা হাতে বোর্ড নিয়ে বিরতির সময় চারপাশে ঘুরছে। হাই ভোল্টেজ পরিবেশের সঙ্গে অসাধারণ সামঞ্জস্য রেখে এদের সাজ-পোশাক। দ্রুতই বোঝা গেল এরা ইউএফসি-র অলিখিত চিয়ার গার্ল। এমনই যৌন উত্তেজক এদের উপস্থিতি যে আইপিএল চিয়ারগার্লদের তুলনায় শাড়ি পরা রক্ষণশীল স্কুল দিদিমণি মনে হতে পারে। স্থানীয় সাংবাদিক বললেন, এদের কেউ কেউ নাকি বিখ্যাত মডেল। নিজস্ব ক্লোদিং লাইন পর্যন্ত রয়েছে।
প্রেস বক্সটাও বিশাল। উপচে পড়া ভিড়। ভারত থেকে সোনি টিভির মাধ্যমে আমরা যে তিনজন আমন্ত্রিত, তার একজন বলল, “ইন্ডিয়া বিশ্বকাপ জিতে ওঠার পরেও তো প্রেস কনফারেন্সে এর অর্ধেক ভিড় দেখিনি।” পর্যবেক্ষণটা নিখাদ খাঁটি। |
ওহ, আসল কথাটাই এতক্ষণ বলা হয়নি। ইউএফসি হল বক্সিং, মার্শাল আর্টস আর জুজুৎসু মিলে তিনমেশালি ভয়ঙ্কর লড়াই। অর্থাৎ চ্যাম্পিয়নকে একই সঙ্গে মাইক টাইসন, ব্রুস লি আর সেকালের গামা পালোয়ান হতে হবে। পুরুষকারের কঠিনতম বৈধ পরীক্ষা। হিংস্রতার বিচারে পাশে রাখার মতো কাউকে পাচ্ছি না।
ক্রিকেটের লোকগাথা হল আশির দশকে ভয়ঙ্কর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসাররা যখন পরের পর ব্যাটসম্যানকে নাকে, মুখে মেরে রক্তাক্ত করছে, মাঠে থাকা এক অখ্যাত আমেরিকান নাকি শিউরে উঠে বলেছিলেন, “ওহ মাই গড! দিস ইজ দ্য বিগেস্ট ব্লাড স্পোর্ট ইন দিজ ওয়ার্ল্ড।” ক্রিকেট যে বিশ্বের বৃহত্তম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, এটা পরবর্তী কালে ক্রিকেটের মাচো মহিমা বোঝাতে ব্যবহারও করেছেন লিখিয়েরা। এমজিএম-য়ের স্টেডিয়ামে বসে হচ্ছিল দাবিটা অন্তত আজকের জন্য অসার।
ইউএফসি নিয়ে এসব বিজ্ঞাপনী ক্যাচ লাইনের প্রয়োজনই নেই। কোনও লড়াইতে যদি আপনি রক্ত দেখতে না পান সেটা একান্তই আপনার দুর্ভাগ্য বলতে হবে। এখানে তো কুস্তির প্যাঁচে ফেলে দিয়েও প্রতিদ্বন্দ্বী ঘুসি চালিয়ে যাচ্ছে চোখেমুখে। সাঁতারের মেডলির মতো। সব স্ট্রোক চলতে পারে। হাতের নাগালে না পেলে ক্যারাটের লাথি চলতে পারে। স্লাইড চলতে পারে। মারামারিতে সব ব্যাকরণসিদ্ধ। শুধু বেআইনির ভেতর: প্রতিপক্ষকে কামড়ানো চলবে না।
মাথা দিয়ে ঢুসো মারা যাবে না।
কুঁচকির দিকে চোরাগোপ্তা ঘুসি চলবে না।
গোপন অঙ্গ টার্গেট করা যাবে না।
বিশ্বপর্যায়ে এই ইভেন্ট শুরু হয়েছে বছর কুড়ি হল। কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় এমনই প্রসিদ্ধি পেয়ে গিয়েছে যে লড়াইয়ের দিন শহর নয়, গোটা দেশ সরগরম থাকে। লাস ভেগাসের রাস্তায় বিশাল বিশাল হোর্ডিং। এফএম-য়ে অনুষ্ঠান। টিভি খুললেই ইউএফসি নিয়ে আলোচনা। আজ এমজিএম-য়ের আশেপাশে এমন ট্র্যাফিক জ্যাম যেন সল্ট লেক স্টেডিয়ামে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ শুরুর আগে করুণাময়ী থেকে বাইপাসের রাস্তায় ঢোকার নির্বুদ্ধিতা দেখিয়েছেন। ফক্স স্পোর্টস সারা আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে এই ইভেন্টকে। যার মেয়াদ নিয়ে ক’বছর আগেও তীব্র সংশয় ছিল। আজ মায়ামির বিশ্ববিখ্যাত নাইটক্লাব ম্যাঙ্গোজের বাইরে ইউএফসি-র পোস্টার। ম্যানহাটনের রাস্তাতেও। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগেই সেনেটর জন ম্যাককেনের তীব্র আপত্তিতে ইউএফসি নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল। ম্যাককেন দাবি তুলেছিলেন আমেরিকার ৫০-টা প্রদেশ যেন অবিলম্বে এই নৃশংস যুদ্ধকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দেশ জুড়ে উঠে যাওয়া তীব্র বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ম কিছু বদলানো হয়। ঠিক হয় ঢুসো মারা যাবে না। কুঁচকির দিকে লাথিও চলবে না। কিন্তু
|
রক্তাক্ত সোনেন |
সংশোধিত হওয়ার পর ইউএফসি-ই আমেরিকার নবীন উত্তেজক স্পোর্ট। মার্কিনি খেলাধুলোর ওয়াল স্ট্রিটে যার শেয়ারদর ক্রমশ বাড়ছে।
আর প্রকাশ্য জুয়াও চলছে ম্যাচের ওপর। পশ্চিমী দেশগুলোয় স্পোর্টস বেটিং আইনসিদ্ধ। এ বারে শুনলাম বিশ্ব মিডলওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাবি লড়াইয়ে সিলভা বনাম চ্যালেঞ্জার শল সোনেন নিয়ে এমনই উত্তেজনা যে হেভিওয়েট বক্সিংয়ের পুরনো সব জুয়ার রেকর্ড ধূলিসাৎ।
আগেই লিখেছি দক্ষিণ আমেরিকার সিলভাকে ভবিষ্যৎ ইউএফসি দেখবে ডব্লু জি গ্রেস হিসেবে। এমনই মহিমা তাঁর যে উত্তর আমেরিকার রিংয়ে দাঁড়িয়ে স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধেও স্থানীয় সমর্থন আদায় করে নিতে পারেন। যা দেখে মনে হবে, সংঘাতটা ঘটছে সাও পাওলোয়, ভেগাসে নয়।
সোনেন কথা বলতে ভালবাসেন। খেতাবি যুদ্ধের আগে তাঁর সংখ্যালঘিষ্ঠ সমর্থকদের রক্ত গরম করে দিতে নানান কথা বলেছেন। যা শুনে অ্যান্ডারসন সিলভার প্রতিক্রিয়া: যুদ্ধটা হবে রিংয়ের ভেতর। সেখানকার আইন আলাদা। সেখানে কথা চলে না। চলে হাত।
খেতাবি লড়াই পাঁচ রাউন্ডের। কিন্তু রাতের সবশেষ আইটেম সেটা। যেন লেডি গাগার কনসার্ট। তার আগে বাইরের অন্য সিঙ্গাররা।
অথচ সেখানেও তো গভীর আকর্ষণ লুকিয়ে। টিটো অর্টিজ নামক অ্যাথলেট পনেরো বছর পর আজ রিং থেকে প্রকাশ্যে অবসর নিচ্ছেন। তাঁকে ঘিরেও আবেগের কী ভূমিকম্প। এই ঘোর ইন্টারনেট আমলেও আমেরিকান স্পোর্ট বলতে আমরা বেসবল, বাস্কেটবল বা আমেরিকান ফুটবল বুঝে এসেছি। ইউএফসি নামক স্পোর্টস বিনোদন যে এই পর্যায়ে শেকড় গেড়েছে কে জানত!
টিটোর বিদায়ী ম্যাচ ঘিরে যে পরিমাণ আবেগ, এ তো মনে হচ্ছে ইউএস ওপেনে জীবনের বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামছেন ক্রিস এভার্ট। যেখানে চেয়ার আম্পায়ারের চোখেও জল। একবার মনে হল একেবারে অচেনা এই স্পোর্ট। বিশ্বাসযোগ্যতার কোনও ইতিহাস নেই। কে বলতে পারে ডব্লু ডব্লু এফ-য়ের মতো হবে না। টিটোকে নিশ্চয়ই আজ জিতিয়ে দেওয়ার কঠিন চিত্রনাট্য তৈরি।
বিশাল চেহারার টিটো রিং-য়ে ঢোকা মাত্র জনতার সে কী গর্জন। আর প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রতিপদে তীব্র টিটকিরি। সারাক্ষণ চড়া সুরের মিউজিক, ভিডিয়ো স্ক্রিনে প্রক্ষেপণ, মহিলা রিং গার্লস আর দর্শক মিলে এমন অ্যাড্রেনালিন নিষ্ক্রমণকারী ব্যাপার যে সত্যি আইপিএল-য়ের শেষ ওভারকে মনে হবে গত জন্মের কিছু।
এ দিকে টিটো ম্যাচে বেশ মার খেলেন। রক্তটক্ত খেয়ে পাল্টা ঢুসো দিলেন পরের রাউন্ডে। কেউ কাউকে নক আউট করতে পারেনি। চূড়ান্ত বিচার এবার তিন বিচারকের হাতে। তাঁরা যা রায় দেবেন। জনতা তো তাদের পছন্দ আগেই সোচ্চারে জানিয়ে দিয়েছে। আরও নিশ্চিত হওয়া গেল টিটোকে আটকায় কে! বিচারকদের দায় পড়েছে এই জনসমর্থনের বিরুদ্ধে যেতে।
টিটো নিজেও সেটা জানেন। আগাম জেতার অভিনন্দন গ্রহণকারী হাত তুললেন। বিশাল গর্জন ধেয়ে এল তাঁর দিকে।
বিশাল নৈঃশব্দ্যও। কারণ বিচারকেরা সর্বসম্মতিক্রমে রায় দিলেন, টিটো বিজিত। কী অদ্ভুত দৃশ্য। বিজয়ী কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দর্শক প্রথমে স্তব্ধবাক। এ বার ধিক্কার জানাতে শুরু করেছে বিচারকদের। টিটোর রক্তমাখা মুখ থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তিনি এমনই আশ্চর্য যেন মুখ থেকে বাকি রক্তও কেউ শুষে নিয়েছে। বিজয়ী ফরেস্ট গ্রিফিনকে ইন্টারভিউ নিতে রিংয়ে ঢুকেছেন টিভি সাংবাদিক। গ্রিফিন নতমস্তকে বললেন, “জনতার কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। আপনাদের আবেগকে আমি অসম্মান করে ফেললাম।”
এ বার ভরপুর আবেগের আস্তরণ ঢেকে ফেলল গোটা স্টেডিয়ামকে। অবাক হয়ে ভাবছি, এ তো কর্ণ জোহরের চড়া সেন্টিমেন্ট মাখা বক্স অফিস ধরার ছবি!
এমজিএম গ্র্যান্ড আয়তন বিচারে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হোটেল। কিন্তু সেটা যে আবেগ উৎপাদনের এমন কারখানা কে জানত!
ভিডিয়ো স্ক্রিনে এর পর দেখাচ্ছে, সদলবলে জনতার মধ্যে থেকেই রিংয়ের দিকে হাঁটছেন অ্যান্ডারসন সিলভা। আর মনে হচ্ছে যেন কনসার্টে এ বার শেষ শিল্পী মঞ্চে উঠে এলেন। আর তিনি লেডি গাগা মাইকের সামনে যাওয়ার কত আগেই কী তুমুল হাততালি।
তা কিছুক্ষণের মধ্যে লড়াই শেষ। সিলভা ফের চ্যাম্পিয়ন। রক্ত, থেঁতলানো মুখকে বরফ এবং অন্যান্য ওষুধে পরিচর্যা করে কোনও রকমে রক্ত থামিয়েছেন শল সোনেন। সিলভা এ বার টিভি সাংবাদিককে বললেন, “শলকে বিদ্রুপ করছেন কেন আপনারা, স্টেডিয়ামের দর্শক? ও এত বড় অ্যাথলিট। প্লিজ টিটকিরি বন্ধ করুন।” এ বার সাংবাদিক জানতে চান, সিলভা, লড়াইয়ের
আগে এতগুলো অপমানজনক কথা আপনার সম্পর্কে বলেছিল। জিতে উঠে আপনি পাল্টা কিছু বলবেন না?
সিলভা বললেন, “বলব তো। শল-কে আমার বাড়িতে বারবিকিউতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। একসঙ্গে খাব।”
আবার হাই-ভোল্টেজ আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণ!
এক এক সময় মনে হচ্ছিল সোনি এন্টারটেনমেন্ট চ্যানেল নিয়মিতভাবে দেশে ইউএফসি দেখাতে শুরু করেছে ঠিকই। কিন্তু এই যে গোটা স্টেডিয়ামের অবিশ্বাস্য কোলাজ কী করে বোঝাবে! তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, আমাদের দেশে সিরিয়ালের যাঁরা ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন, সেই মা-মাসিমারা দেখবেন এমন নৃশংস যুদ্ধ? এ তো খালি হাতে মানুষ মেরে ফেলার আগের স্টেশন অবধি যাওয়া।
ইউএফসি অবশ্য খুব আশাবাদী। এশীয় বাজারকে এবার তারা চাঁদমারি করেছে। ফিফার ভারতে ফুটবল প্রসারে যা মনোযোগ, কথাবার্তায় মনে হচ্ছে এদের উদ্যোগ অবশ্যই তার বেশি হবে।
সহ-ভারতীয় সাংবাদিক অবশ্য মনে হল না এ সব ভাবনায় আক্রান্ত বলে। তিনি শুনেছেন বিশ্ব পোকার চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য শ্যেন ওয়ার্ন এখন লাস ভেগাসে। সঙ্গে লিজ হার্লিও রয়েছেন। সেলিব্রিটি জুড়িকে পেলে একটা জম্পেশ ইন্টারভিউ হয়ে যায়। কিন্তু ধারেকাছে কোথাও খোঁজ নেই তাঁদের।
এই সাংবাদিক অবশ্য খুঁজছিলেন খোদ লাস ভেগাসে বসবাসকারী সেলিব্রিটি জুড়িকে। স্টেফি গ্রাফ আর আন্দ্রে আগাসি কি নেই আজকের এমন উপচে পড়া মর্যাদাব্যঞ্জক ভিড়ে? উত্তর আমেরিকার হু’জ হু রা আজ সব এখানে। আর ভেগাসে বসবাসকারী সেলিব্রিটি দম্পতিকে বাদ দিয়ে তো হু’জ হু-র তালিকাই হয় না।
রাত গড়িয়ে গেল। সিলভা সমর্থকদের ঘরে ফেরার কোনও তাড়া নেই। হোটেলে শুধু হলুদ জার্সি। আর চিৎকার। সেখানে কোথায় স্টেফি! কোথায় আগাসি!
ইউএফসি আসলে অন্য গ্রহ। সেই গ্রহান্তরে সব কিছু আলাদা। সব কিছু নতুন। |