নিজেদের জমির সব্জি হাটে বেচতে এসে ফড়েদের কাছে উপযুক্ত দাম না পেয়ে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার রামচন্দ্রপুর হাটের কাছে রাস্তা অবরোধে করে সোমবার বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল হাট থেকে ফড়েরা যে দামে তাঁদের কাছে সব্জি নেবেন বলছেন তাতে তাঁদের লাভ তো দূরের কথা চাষের খরচও অনেক ক্ষেত্রে উঠবে না। অন্যদিকে ফড়েদের যুক্তি, আগে তাঁরা ওভারলোডিং করে মাল নিয়ে যেতেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের কড়াকড়িতে তাঁদের সেই পথ বন্ধ। ফলে মাল বহনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় পড়তায় পোষাচ্ছে না। এই অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ অবরোধ-বিক্ষোভ চলে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। কিন্তু চাষিদের এই অবরোধ-বিক্ষোভ যাতে মহকুমার অন্য হাটগুলিতেও না ছড়ায় সে জন্য সব পক্ষকে নিয়ে এক বৈঠকের ব্যবস্থা করে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার স্বরূপনগরে মহকুমাশাসকের উদ্যোগে ওই বৈঠকে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিক-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দল। ঠিক হয়, ফসলের দাম সময় বিশেষে ওঠানামা করতে পারে। তাই বলে এমন যাতে না হয় যে ১০ টাকা কেজি সবজি হঠাৎ ২-৩ টাকায় নেমে যাবে। এমন হলে চাষিদের বড় রকমের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এ ব্যাপারে ফড়েদের সতর্ক করতে একটি নজরদারি কমিটি থাকবে।
বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “ কোনও বিক্রেতা যাতে রাসতার উপরে সব্জি নিয়ে না বসেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। ব্যাপারীরা ফসলের দাম যাতে হঠাৎ কমিয়ে চাষিদের ক্ষতি করতে না পারে তা দেখার জন্য স্থানীয় যুবকদের নিয়ে একটি নজরদারি কমিটি গঠনের কথা হয়েছে।” প্রসঙ্গত, বসিরহাট মহকুমায় এমন হাটের সংখ্যা ৫০টি। যেখানে চাষিদের কাছ থেকে সব্জি কিনে নেন ফড়েরা। সরকারি এই নজরদারি কি সব হাটেই থাকবে? এর উত্তরে শ্যালবাবু বলেন, ‘‘আপাতত স্বরূপনগর এলাকায় এই নজরদারি থাকলেও পরে ধীরে ধীরে অন্য হাটগুলিতেও তা ব্যবস্থা করা হবে।” এ দিন বৈঠকে অনেকেই জানান, শহরের বাজারে নজরদারি বাড়ানোর ফলে আধা শহর কিংবা গ্রামের খুচরো বাজারে সবজির দাম বাড়ছে। কিন্তু সে দিকে কারও নজর নেই।
চাষিদের অভিযোগ, শহরের মানুষের কথা ভেবে সব্জির দাম কমাতে গিয়ে সরকার তাঁদের কথা ভাবছেন না। সার, কীটনাশকের দাম প্রচণ্ড বেড়ে যাওয়ায় চাষের খরচ বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে ফড়েদের কাছে তাঁরা ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। ফলে তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বাদুড়িয়ার রামচন্দ্রপুর ছাড়াও বিথারি, চাতরা, শাণড়াপুল, হটাৎগঞ্জ, চারঘাট এলাকাতেও বিশাল হাট বসে। এই সব হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৪০০-৫০০ গাড়িভর্তি সব্জি রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে যায়। রামচন্দ্রপুরের হাটে প্রায় ১০ হাজার চাষি সব্জি বিক্রি করতে আসেন। অন্নত ২০০ জন ব্যাপারী এখান থেকে সবজি কেনেন। বর্তমানে হাটে পাইকারি দাম ঝিঙে কেজিপ্রতি ৪ টাকা, বেগুন ৩ টাকা, কাঁকরোল ৫ টাকা, কাঁচকলা জোড়া ৬ টাকা, বরবটি ৪টাকা, পেঁপে ১৫ টাকা। সকালের দিকে এই দাম থাকলেও বেলা ৯টার পরে আর এই দাম দিতে চান না ব্যাপারীরা। যদিও হাটে এমন দাম হলেও স্থানীয় বাজারে এই দাম ঝিঙে-৯ টাকা, বেগুন- ১২ টাকা, কাঁচকলা জোড়া ১২টা, কাঁকরোল- ১২টাকা, বরবটি ৭টাকা, পেঁপে -৩০ টাকা। দত্তপুকুরের এক ব্যাপারী কুঞ্জ ঘোষের বক্তব্য, “আগে ওভারলোডিং করে মাল নিয়ে যাওয়া যেত। এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে গিয়ে লোকসান হচ্ছে। লোকসান বাঁচাতে তাই বাধ্য হয়ে কম দামে সব্জি কিনতে হচ্ছে।” রাংচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের প্রধান রবিউল হক বলেন, “সরকারি কোনও নজরদারি না থাকায় ফড়েরা দাম নিয়ে যা ইচ্ছা করছে।” স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “ফড়েরা যাতে চাষিদের না ঠকাতে পারে সেটা দেখার জন্য নজরদারি দল তৈরি করা হচ্ছে।” |