|
|
|
|
গুড়াপ থেকে ধৃত শ্যামল |
যুবতীকে ‘কপার-টি’, হোম-কাণ্ডে নয়া তথ্য |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
যত দিন যাচ্ছে, গুড়াপের হোম-কাণ্ডের ‘কেঁচো খুঁড়তে’ একের পর এক ‘কেউটে’ বেরোচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জানা গেল, ওই হোমেরই এক মানসিক ভারসাম্যহীন আবাসিক যুবতীকে স্থায়ী গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা ‘কপার-টি’ পরানো হয়েছে। কী কারণে এই ব্যবস্থা এবং এমন ব্যবস্থা ওই হোমের আর কোনও আবাসিক মহিলার ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে জল্পনাও শুরু হয়েছে। ওই হোমের বেআইনি কাজকর্মের শিকড় কতটা গভীর, তা এই ঘটনা থেকে ফের স্পষ্ট হল বলেই মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, গুড়িয়ার দেহ উদ্ধারকে ঘিরে যে রহস্যের শুরু, তা একের পর এক ঘটনায় আরও ঘোরালো হচ্ছে।
এ সবের মধ্যেই বুধবার রাতে হোম-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত শ্যামল ঘোষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে শ্যামল হোমে মহিলাদের উপরে শারীরিক অত্যাচার হওয়ার কথা কবুল করেছে। ১২ জুলাই মামণি দাস নামে মানসিক ভারসাম্যহীন বছর পঁচিশের যুবতীকে গুড়াপের হোম থেকে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরপাড়ার হোমে। শারীরিক পরীক্ষা করাতে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মামণিকে। সেখান থেকে তিনি পালান। গত রবিবার তাঁর খোঁজ মেলে আলিপুরদুয়ারে। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে আলট্রাসোনোগ্রাফি করার পরে জানা যায়, ওই যুবতীকে ‘কপার-টি’ পরানো হয়েছে। হাসপাতাল সুপার সুজয় বিষ্ণু বলেন, “মহকুমাশাসককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। মহিলা অসুস্থ থাকায় তাঁর পরীক্ষা করা হয়। তাতেই এ কথা জানা যায়।”
উত্তরপাড়া থানার পুলিশ এবং উত্তরপাড়ার সরকারি হোমের প্রতিনিধিরা এ দিন মামণিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলিপুরদুয়ারে মহকুমাশাসকের দফতরে যান। মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় বলেন, “ওই মহিলা সুস্থ থাকলে শুক্রবার আমার অফিসে আনতে বলেছি। ওঁর সঙ্গে কথা বলে উত্তরপাড়া পুলিশের হাতে তুলে দেব। হাসপাতালের পাঠানো রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এ দিন মহকুমা হাসপাতালে মামণিকে গুড়াপের হোমের সম্পাদক, ধৃত উয়চাঁদ কুমারের ছবি দেখানো হয়। মামনি তাঁকে ‘বড়দা’ বলে শনাক্ত করে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মীদের সামনে তিনি কাঁপতে কাঁপতে বলেন, “ওটা বড়দার ছবি। ওর কাছে রাতে বাইকে করে লোক আসত।” এর পরেই দু’হাতে মুখ ঢেকে কথা বলা বন্ধ করে দেন। আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু বলেন, “মামণিকে হাসপাতালে নিগ্রহ করা হয়েছে বলে মৌখিক ভাবে পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ আসল তথ্য বের করুক।”
১১ জুলাই গুড়িয়ার দেহ উদ্ধারের পরে হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু উদয়চাঁদের ‘ডান হাত’ শ্যামল সাত দিন ধরে অধরা ছিল। বুধবার রাতে গুড়াপের ভবানীপুর গ্রামের বাড়ি থেকে বছর চল্লিশের শ্যামলকে ধরে হুগলি জেলা পুলিশ ও সিআইডি। পুলিশ জানিয়েছে, এত দিন সে বর্ধমানের নানা জায়গায় গা-ঢাকা দিয়ে ছিল। বাড়ি থেকে টাকা ও জামাকাপড় নিয়ে ফের পালানোর মতলবে ছিল। ধৃতকে বৃহস্পতিবার চুঁচুড়ার মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুশ্রী মণ্ডলের এজলাসে তোলা হয়। বিচারক ধৃতকে ১০ দিন সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এ দিন শ্যামলের চরম শাস্তির দাবিতে কোর্ট চত্বরে ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভ দেখায় হুগলি জেলা বিজেপি ও সিপিআইএমএল (লিবারেশন)।
পুলিশের দাবি, জেরায় শ্যামল জানিয়েছে, উদয়চাঁদের বকলমে হোমের আবাসিকদের জন্য যাবতীয় কাজ সে-ই করত। হোমে হাতুড়ে চিকিৎসকদেরও সে আনত। উদয়চাঁদ এবং তাঁর সহযোগীরা আবাসিক মহিলাদের উপরে অত্যাচার চালালেও সে নিজে কখনও ওই কাজ করেনি বলেও দাবি করেছে শ্যামল। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই হাতুড়েদের মাধ্যমেই বেশ কিছু আবাসিক মহিলাকে ‘কপার-টি’ পরানো হয়।
পুলিশের আরও দাবি, জেরায় শ্যামল জানিয়েছে, ৩০ জুন আত্মহত্যা করতে যান গুড়িয়া। কিন্তু শাড়ি ছিঁড়ে যাওয়ায় তিনি পড়ে গিয়ে মারা যান। তাঁর দেহ সে দিনই শ্যামল ও উদয়চাঁদ দেখেন। পরের দিন ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ জোগাড় হয়। দুর্গন্ধ বেরনোয় ২ জুলাই দেহটি পোঁতা হয়। কিন্তু দেহটি যে অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, তাতে তদন্তকারীদের সন্দেহ, ৩০ জুন নয়, আরও আগে মারা গিয়েছেন গুড়িয়া।
শ্যামলের পরিবারের লোক জন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মানেননি। শ্যামলের স্ত্রী মমতা বলেন, “আমার স্বামী চাষ-আবাদ করে। মাঝেমধ্যে হোমে যেত। কিন্তু ও অন্যায় করেনি। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।” শ্যামলের দাদা ধীরেনবাবু বলেন, “ও হোমে নানা কাজ করত। ঠিক কী করত তা জানি না। পুলিশ অনেক কিছু বলছে। সব সত্যি বলে আমরা মনে করি না।”
নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পরে শ্যামল ও উদয়চাঁদকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় সিআইডি। তাদের দাবি, জেরায় উদয়চাঁদ স্বীকার করেছেন, প্রতি বছর রাজ্য ও কেন্দ্রের থেকে হোমের চারটি ইউনিট চালানোর জন্য তিনি প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা অনুদান পেতেন। টাকা কী ভাবে আবাসিকদের পরিষেবায় খরচ হত, তার হিসেব উদয়চাঁদ দিতে পারেননি। উদয়চাঁদ জানিয়েছেন, এ সব হিসেব শ্যামলই দিতে পারবে।
|
গুড়িয়া মৃত্যুরহস্যে অন্ধকারে সিআইডি |
নিজস্ব সংবাদাদাতা • কলকাতা |
আত্মহত্যা না খুন? গুড়াপের হোমের আবাসিক গুড়িয়ার মৃত্যুরহস্য নিয়ে এখনও অন্ধকারে সিআইডি। কেননা, এখনও গুড়িয়ার দেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্টই পাননি সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারেরা। ১১ জুলাই ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ নামে গুড়াপের ওই বেসরকারি হোমের পাঁচিলের পাশে একটি পুকুরের ধারের মাটি খুঁড়ে গুড়িয়ার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সময়ে পুলিশ জানিয়েছিল, মৃতের গায়ে-মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরের দিনই ময়না-তদন্তের জন্য কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের মর্গে দেহটি পাঠানো হয়। প্রাথমিক ভাবে একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। কিন্তু দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানোর আট দিন পরে, বৃহস্পতিবারেও সে সম্পর্কে কোনও সরকারি তথ্য সিআইডির হাতে এসে পৌঁছয়নি। এক সিআইডি কর্তা বলেন, “ময়না-তদন্তের রিপোর্টের জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরে আর্জি জানিয়েছি। রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা দূর হবে।” এ নিয়ে এনআরএস হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার কর্তারা মন্তব্য করতে চাননি। |
|
|
|
|
|