কলকাতা পাশে দাঁড়ায়নি তাঁর। তবে জীবনের লড়াইয়ে শিলিগুড়িকে পাশে পেলেন বন্দনা পাল ওরফে বনি। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের একাংশ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। এক দশক বাদে অজ্ঞাতবাস থেকে প্রকাশ্যে আসা মহিলা ফুটবলার বন্দনা পাল ওরফে বনির পাশে এ বার দাঁড়ালেন টেবল টেনিস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার অন্যতম কর্মকর্তা তথা উত্তরবঙ্গ টেবল টেনিস সংস্থার সভাপতি অর্জুন মান্তু ঘোষ। লিঙ্গ পরিবর্তন করে বন্দনা থেকে বনি হলেও তাঁর মতো ফুটবলারকে কোচ হিসাবে সুযোগ দেওয়ার যে প্রস্তাব শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ দিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মান্তু। এ দিন বনির সঙ্গে কথা বলে তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মান্তু। পাশে দাঁড়িয়েছে শিলিগুড়ি স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশনও। তাঁরাও চান সংগঠনের তরফে বনিকে সাম্মানিক সদস্যপদ দিতে। বন্দনার লড়াইয়ে তাঁর পাশে থাকতে। |
১৯৯৩ থেকে বাংলার মহিলা ফুটবল দলের হয়ে খেলেছেন বন্দনা। বার ছয়েক দেশের মহিলা ফুটবল দলের হয়েও প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯৬ সালে এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলেও সাইয়ের মেয়ে ফুটবলাররা প্রশ্ন তোলেন বন্দনা ‘মেয়ে’ নন বলে। এশিয়াডে যাওয়া আটকে যায় তাঁর। সেই থেকে লড়াই শুরু। ২০০১ থেকেই বাড়ি ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা বন্দনা। এর পর নিজের চেষ্টায় লিঙ্গ পরিবর্তন করে বন্দনা হয়েছেন বনি। বছর চারেক শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় ঘর ভাড়া করে রয়েছেন। দিন মজুরি করে, রঙের কাজ করে, মূর্তি গড়ে কোনও রকমে জীবন চালান। বছর তিনেক আগে বিয়ে করেছেন কৃষ্ণনগরের তরুণী স্বাতীকে। শিলিগুড়িতে তাঁর ঠিকানা কাউকেই এত দিন জানানি। সম্প্রতি তাঁর লড়াইয়ের খবর প্রকাশিত হতেই অনেকেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। তাতেই প্রকাশ্যে আসার সাহস পান বন্দনা।
বুধবার সকালে মহকুমা ক্রীড়া পরিষদে এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন বনি। ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপ রতন ঘোষ এ দিন অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে বনিকে কোচের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন। পদ্ধতিগত কারণে এ দিন বিকেলেই ক্রীড়াপরিষদে ফের গিয়ে অরূপবাবুর হাতে তাঁকে সুযোগ দেওয়ার একটি আবেদনপত্র দেন বনি। সেখান থেকে যান মান্তু ঘোষের বাড়িতে। দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের অন্যতম তথা টেবল টেনিস সংস্থার সঙ্গে যুক্ত অমিত সরকার মান্তুর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ করিয়ে দেন। বনির সঙ্গে কথা বলে উচ্ছ্বসিত মান্তু । মান্তুর কথায়, “যে ভাবে ওঁর অতীতের ফুটবলার জীবন গড়ে তোলার কথা বলল তাতে মনে হচ্ছে যেন দু’ দিন আগের ঘটনা। ওর ফিরে আসার এই লড়াই অন্য খেলোয়াড়দেরও উৎসাহিত করবে। কী ভাবে এত দিন ফুটবল ছেড়ে ছিল সেটা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বুঝলাম এশিয়াডে সুযোগ পাওয়ার পর ওঁর জীবনে যেটা ঘটেছে তাতে আঘাত পেয়েছে। ফুটবল নিয়ে অভিমান জন্মেছিল ওর মধ্যে। এত দিন পর সেটা ভেঙেছে। ও কিছু করতে চাইছে। ওর পাশে আমাদের সংস্থার সবাই রয়েছি।” মান্তু টেবল টেনিস অনুশীলন শিবিরেও বন্দনাকে আসতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে বলেছেন।
খুশি বন্দনাও। তিনি বলেন, “মান্তুদির সঙ্গে আলাপ হয়ে ভাল লেগেছে। এক জন খেলোয়াড় বলে আমার কষ্টটা মান্তুদি বেশি করে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ক্রীড়া পরিষদের সদস্যরা, মান্তুদি, অমিতদাদের পাশে পেয়ে বাড়তি উৎসাহ পাচ্ছি। এ ভাবে আগে কাউকে পাশে পাইনি। মাঠে ফিরে আসব ভেবে দারুণ লাগছে। কোচ হিসাবে যে সুযোগ আমাকে ক্রীড়া পরিষদ দিতে চাইছে সেটা আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কিছু করে দেখাতে চাই।” বন্দনা প্রকাশ্যে আসার পর মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের একাংশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে কোচ হিসাবে সুযোগ দেওয়ার কথা জানান। অরূপবাবু বলেন, “ফুটবল পায়ে বন্দনা বাংলাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তাঁর গোলেই ১৫ বছর আগে বাংলার মেয়েরা শেষ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আমরা চাই বন্দনা মাঠে ফিরে আসুক। আইএফএ’র উদ্যোগে শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের পরিচালনায় যে ফুটবল ‘কোচিং ক্যাম্প’ চলে সেখানে বন্দনাকে কোচের দায়িত্ব দেব। ব্লক এবং গ্রামীণ স্তরে ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে কর্মসূচি নিতে চাইছি আমরা। সে ক্ষেত্রেও বন্দনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।” শীঘ্রই কার্যনির্বাহী কমিটিতে তা অনুমোদন করিয়ে সেই সুযোগ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তাতে পুজোর পর থেকেই মাঠে বল পায়ে বন্দনা অন্য ভূমিকায় নামতে পারবে বলেই তাঁরা আশাবাদী। |