পুত্রহারা মায়ের আর্তনাদে চাপা পড়ে যাচ্ছে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের মন্ত্র। প্রীতমের সন্ধানে গিয়ে ভাগলপুরেই তার অন্ত্যেষ্টি সেরে আসেন কাকা রামমোহন ভট্টাচার্য। আজ শিলচরের বাড়িতে তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সকাল থেকেই শোকাকুল পরিবেশ। মা-বাবা-নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে কেঁদে চলেছেন প্রতিবেশীরাও। রামমোহনবাবুর আক্ষেপ, “বৌদিমণিকে বলে গিয়েছিলাম, কেঁদো না, আমি বুক্কা-কে (প্রীতমের ডাকনাম) নিয়ে ফিরব। কিন্তু কথা রাখতে পারলাম না। তার মুখাগ্নি করে ফিরতে হল।”
প্রীতমের বাবা, শিলচর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “এই ঘটনা ছেড়ে দেওয়া যায় না। আমি দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের জন্য প্রয়োজনে আদালতে যাব। সিবিআই-কে দিয়ে এর তদন্ত করাতেই হবে।”
একই বক্তব্য শিলচর শহরের আপামর মানুষেরও। আজ নরসিংহটোলা ময়দান থেকে সিবিআই তদন্তের দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কোনও বিশেষ সংগঠন এর আয়োজক নয়। তবু তা প্রকৃত অর্থেই নাগরিক প্রতিবাদের চেহারা নেয়। কে ছিলেন না মিছিলে! বিশেষ করে সব ক’টি কলেজের ছাত্র-শিক্ষকরা প্রীতম হত্যার প্রতিবাদে শহরের প্রধান প্রধান রাস্তা পরিক্রমা করে। মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে, “বিহার জিআরপি হায় হায়!” ক্ষোভ ব্যক্ত করা হয় অসম সরকার ও বরাক উপত্যকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও। বিভিন্ন বক্তা অভিযোগ করেন, অসমের মুখ্যমন্ত্রী এ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে একটিও কথা বলেননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাঁদের এলাকার মেধাবী ছাত্রের হত্যাকাণ্ডকে সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পারেননি। বিধানসভার অধিবেশন চলছে। অথচ আজ অবধি তাঁরা এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি।
মিছিল সেরে জেলাশাসক হরেন্দ্রকুমার দেবমহন্তের হাতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের উদ্দেশে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। প্রতিলিপি পাঠানো হয় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের কাছেও। এতে প্রীতম-হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সিবিআই তদন্তের দাবি করা হয়। সেই সঙ্গে বিহারের উপর দিয়ে চলার সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেলযাত্রীদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে অনুরোধ জানানো হয়। |