প্রীতম হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য রেল পুলিশের একটি দল শিলচর যাচ্ছে। এই হত্যা মামলায় রেল পুলিশ ইতিমধ্যেই নওগাছিয়ার প্রায় ২৫ জন রেল-অপরাধীকে জেরা করেছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকজন এখন জেলেই রয়েছে। এলাকার দাগি অপরাধী, মোতি যাদবকে জেলে জেরা করা হয়েছে। পুলিশ জানতে চেয়েছে, মোতির দলের কোনও লোক বা অন্য কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কী না।
ইতিমধ্যে, পুলিশের হাতে আরও একটি তথ্য উঠে এসেছে। প্রীতম নিখোঁজের দু’দিন পরে অর্থাৎ ১১ জুলাই নওগাছিয়া থেকে ২২ বছরের একটি মেয়ের দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর পরণে ছিল জিনস এবং টপ। ওই মেয়েটির পরিচয় এখনও পুলিশ জানতে পারেনি। রেল পুলিশের আইজি বিনয় কুমার বলেন, “এর সঙ্গে প্রীতমের খুনের কোনও সর্ম্পক আছে কী না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” রেল পুলিশের দলটি ওই মেয়েটির ছবিও শিলচরে নিয়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে। পুরনো কোনও শত্রুতা থেকে এই হত্যাকাণ্ড কিনা তা তদন্ত করতেই সেখানে পুলিশ দল পাঠানো হচ্ছে বলে আইজি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “দু-এক দিনের মধ্যে রেল পুলিশের দলটিকে শিলচরে পাঠানো হতে পারে। এক জন ডিএসপি-র নেতৃত্বে পুলিশের দলটিকে পাঠানো হবে।”
গত ৯ জুলাই শিলচরের প্রীতম ভট্টাচার্য গুয়াহাটি থেকে অবধ-অসম এক্সপ্রেসে দিল্লি যাচ্ছিলেন। তারপর প্রীতম নওগাছিয়া স্টেশন থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। এর পর রেল পুলিশের কাছে তাঁর কাকা অভিযোগ জানান। রবিবার সকালে ভাগলপুরের কাটারিয়া রেল স্টেশনের কাছে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তাঁর কাকা মৃতদেহটি শনাক্ত করেন।
প্রীতম যে কামরায় ভ্রমণ করছিলেন (এস-১০, আসন নম্বর ৩৬) তার আশপাশের অন্তত ১০ জন সহযাত্রীকে পুলিশ ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই যাত্রীরা পুলিশকে জানিয়েছে, ছেলেটির সঙ্গে কারও ঝগড়া হতে তাঁরা দেখেননি। বরং প্রীতমকে খুব কম সময় তাঁর নিজের আসনে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। এমন কী নওগাছিয়া রেল স্টেশনে ট্রেন পৌঁছনো পর্যন্ত প্রীতমকে তাঁর নির্দিষ্ট আসনে দেখাই যায়নি। সহযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের মনে হয়েছে, তা হলে কী প্রীতম এতটা সময় ধরে ট্রেনে, অন্য কোনও পরিচিতের কাছে ছিল। পুলিশের অনুমান, শুধুমাত্র একটা ব্যাগ ছিনতাইয়ের জন্য খুন করা সম্ভব নয়। এর অন্য কোনও দিক আছে কী না তা জানতেই পুলিশের দলটিকে শিলচরে পাঠানো হচ্ছে। কাটিহার রেল পুলিশের সুপার সুখন পাসোয়ান আজ বলেন, “দু-চার দিনের মধ্যে কিছু একটা সূত্র পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।” এই ঘটনার পরে ব্যক্তিগত ভাবে এই পুলিশ সুপার বিপর্যস্ত। সেই কারণে তিনি এই ঘটনাটির প্রকৃত অনুসন্ধান নিজে করতে চাইছেন। তিনি বলেন, “একটি নিরপরাধ মেধাবী ছাত্র বিনা কারণে খুন হয়ে গেল! এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। এই ঘটনা নওগাছিয়ায় প্রথম। আগে কখনও এমন কোনও ঘটনার নথি পুলিশের কাছে নেই।” নওগাছিয়া এলাকাটি অপহরণের জন্য বিখ্যাত। অন্তত ১০-১২টি দল অপহরণ ও রেল-অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে খগাড়িয়া জেলে বন্দি মোতি যাদব দাগি অপরাধী। পুলিশ তাই মনে করছে, পুরনো শত্রুতা থেকে যদি এই ঘটনা ঘটে থাকে তা হলে এর সঙ্গে নওগাছিয়ার অপরাধীর যোগ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে ‘সুপারি হত্যা’-র বিষয়টিও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। |