তোমার জন্য আমরা কষ্টে আছি। আছি লজ্জায়। আত্মসমর্পণ করে আমাদের মুক্তি দাও!
যাকে এই আর্তি, সেই অমরজ্যোতি কলিতা বেপাত্তা। গুয়াহাটির রাস্তায় তরুণী-নিগ্রহের ঘটনায় সে-ই প্রধান অভিযুক্ত। আজ অমরজ্যোতির উদ্দেশে এই বার্তা দিয়েছে তার পরিবার।
অমরজ্যোতি এখনও ধরা না পড়লেও ৯ জুলাই রাতের ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির দাবি উঠে আসছে প্রথম থেকেই। দু’দিনের সফরে গুয়াহাটি এসে আজ মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে একই কথা বললেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা। তাঁর আর্জি, বিশেষ ফাস্ট ট্র্যাক আদালত বসিয়ে অপরাধীদের দ্রুত কড়া সাজা দেওয়া হোক। এর পাশাপাশি, সংবাদমাধ্যমকে ‘সংযমী’ হতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মহিলাদের নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপারে একগুচ্ছ লিখিত পরামর্শ দাখিল করেন মমতা শর্মা। পরে তিনি জানান, নিগৃহীতা তরুণীর জন্য আর্থিক সাহায্য ও সরকারি চাকরির পাশাপাশি তার চিকিৎসা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে অনুরোধ করেছেন তিনি। পানশালাগুলির সামনে সিসিটিভি লাগানো ও মহিলা পুলিশ-সহ টহলদার বাহিনী মোতায়েনের সুপারিশও করেছে মহিলা কমিশন। সেই সঙ্গে, রাজ্যে অবিলম্বে মহিলাদের জন্য হেল্পলাইন ও সব থানায় মহিলা সেল গড়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। পুলিশের প্রতি মমতাদেবীর আজির্র্, এই ধরনের ঘটনা সংক্রান্ত ফোন এলে এলাকা সংক্রান্ত বিতর্কে না গিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। |
গুয়াহাটিতে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে জাতীয় মহিলা
কমিশনের প্রধান মমতা শর্মা। বুধবার। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
ঘটনার প্রতিবাদ না করে যারা ‘মজা দেখেছে’ বা অপরাধীদের আড়াল করতে সাহায্য করছে তাদের বিরুদ্ধে, কর্তব্যে গাফিলতি করা পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ দিন নতুন কোনও অভিযুক্ত ধরা না পড়লেও ঘটনায় জড়িত আরও ৯ জনের চেহারা শনাক্ত করা গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ইতিমধ্যে গুয়াহাটির ঘটনায় রাজকুমার সিংহ নামে এক ব্যবসায়ীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অভিযোগ, নিগৃহীতার সিমকার্ড ওই ব্যক্তির নামে নেওয়া। ওই ব্যবসায়ীর অবশ্য দাবি, সিমটি হারিয়ে গিয়েছিল। কোনও ভাবে সেটি মেয়েটির হাতে পড়ে।
দেশজোড়া তোলপাড়ের মধ্যে নতুন করে উঠে এসেছে ২০০৭ সালে গুয়াহাটির বেলতলা এলাকায় লক্ষ্মী ওরাং নামে এক মহিলার নিগ্রহের প্রসঙ্গ। সে বার আদিবাসী মিছিলে হামলা চালিয়ে একাধিক যুবককে পিটিয়ে মারার পরে লক্ষ্মীকে রাজপথে বিবস্ত্র করা হয়েছিল। পরেশপন্থী আলফা-সহ বিভিন্ন মহলের বক্তব্য ছিল, ৯ জুলাইয়ের ঘটনা ঘিরে প্রশাসন যতটা সক্রিয়, লক্ষ্মীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। লক্ষ্মীর কথায়, “এই ঘটনা দেখে নিজের কথা মনে পড়ছিল। সেই বারও জাতীয় পর্যায়ে শোরগোল হয়েছিল। কিন্তু কেউ সাজা পায়নি। এ বারেও হয়তো তা-ই হবে।” এ দিন মমতাদেবী বলেন, “লক্ষ্মী আমার সঙ্গে দেখা করতে পারে। ওর ঘটনাটি নিয়েও বিবেচনা করতে পারি।”
এ দিকে, ১৩ জুলাই সেনা জওয়ানের হাতে এক কলেজ ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রতিবাদে আজ, ১২ ঘণ্টা শিবসাগর বন্ধের ডাক দেয় বৃহত্তর অসমিয়া যুব মঞ্চ, টিএমপিকে, আটাসু, শিবসাগর মহিলা সমিতি। মঙ্গলবার ওই ছাত্রীকে টানা ছ’ঘণ্টা জেরা করে সেনা। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী অভিযোগ করে, জওয়ানরা মেয়েটিকে বয়ান পরিবর্তনে চাপ দিচ্ছে। তার প্রতিবাদেই বন্ধ। সেনার তরফে অবশ্য দুঃখপ্রকাশ করে বলা হয়েছে, বিচারপর্ব চলছে। অভিযুক্ত জওয়ানের অপরাধ প্রমাণ হলেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। |