অদূর ভবিষ্যতে দল ও সরকারে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে রাহুলকে সিদ্ধান্ত নিতে বললেন সনিয়া গাঁধী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেস সভানেত্রীর মন্তব্য, “ওর হয়ে অন্য কেউ
সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ওকেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
সনিয়ার এই মন্তব্যকে রাহুলের উপর চাপ তৈরি হিসেবেই দেখছেন কংগ্রেস নেতাদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, দল বা সরকারে রাহুলকে বৃহত্তর দায়িত্ব দেওয়ার দাবি কংগ্রেসে ইতিমধ্যেই রয়েছে। কিন্তু রাহুল নিজে কী করবেন, তা এখনও স্পষ্ট করেননি। সনিয়া আজ তাঁর মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে তাঁকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বললেন বলেই কংগ্রেসের ওই নেতাদের অভিমত।
দল ও সরকারে রাহুলকে বৃহত্তর দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ইদানীং ফের সরব হয়ে উঠেছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। তাঁকে মনমোহন সরকারের কোনও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া কিংবা কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি বা সহ-সভাপতি করা অনেক রকম প্রস্তাবই রয়েছে। আজ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হামিদ আনসারির মনোনয়ন পেশের সময় সংসদে এসেছিলেন সনিয়া। সেখানেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আগামি দিনে কংগ্রেসে বা সরকারে রাহুলের ‘বৃহত্তর ভূমিকা’ কী হওয়ার সম্ভাবনা। এর জবাবেই সনিয়া বলেন, ‘ওকেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
বস্তুত, সলমন খুরশিদ, দিগ্বিজয় সিংহরা রাহুলের জন্য মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন আগেই। রাহুল দলকে মতাদর্শগত দিশা দেখাতে পারছেন না বলে খুরশিদের মন্তব্যে নেতিবাচক বার্তা গিয়েছিল। তাই দিগ্বিজয়কে আরও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে হয়, রাহুলের ‘সময়’ এসে গিয়েছে। আজ সনিয়ার মন্তব্যের পর দিগ্বিজয় ফের বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ঠিক সময়ে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাহুলের মধ্যে রয়েছে।” তবে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন কংগ্রেস যে সনিয়ার নেতৃত্বেই লড়বে, তা ফের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। দিগ্বিজয়ের বক্তব্য, “আমরা দল বেঁধে লড়াই করছি, রাহুল যার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
দশ জনপথের ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীদের অনেকে চাইছেন, রাহুলকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হোক। তাঁকে স্বরাষ্ট্র, অর্থ, প্রতিরক্ষা বা বিদেশ এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের যে কোনও একটির দায়িত্ব দেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে রাহুল সরাসরি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক ও রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটিরও সদস্য হবেন। অন্য যুক্তি হল, প্রথমকেই রাহুলকে এই সব মন্ত্রক না দিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন বা গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হোক। যেখানে আমজনতার জন্য ‘কাজ করে দেখানো’-র সুযোগ অনেক বেশি। ইন্দিরা গাঁধী যে ভাবে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর জমানায় প্রথমে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী হয়েছিলেন, সেই উদাহরণও টানছেন অনেকে।
রাহুল অবশ্য এখনই মন্ত্রিসভায় আসতে চাইবেন কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দলে ফের কার্যনির্বাহী সভাপতি বা সহ-সভাপতির পদ তৈরি করে তাঁকে সেখানে বসানোর প্রস্তাব রয়েছে। কমলাপতি ত্রিপাঠির পর কংগ্রেসে কাউকে কার্যনির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সহ-সভাপতির নজিরও কংগ্রেসের ইতিহাসে মাত্র দু’বার। অর্জুন সিংহকে সহ-সভাপতি করেছিলেন রাজীব গাঁধী। আর জিতেন্দ্র প্রসাদকে সহ-সভাপতির পদে বসিয়েছিলেন সীতারাম কেশরী। এআইসিসি-র এক নেতার যুক্তি, “সভাপতি সক্রিয় না থাকলে কাউকে কার্যনির্বাহী সভাপতি করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সভানেত্রী সনিয়া নিজেই লোকসভা নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দেবেন।” সব মিলিয়ে রাহুল নিজে কী চাইছেন, সেটাও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ তাই সনিয়াও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, রাহুলই নিজে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করুন। |