চ্যানেলের প্রধান সম্পাদকের ইস্তফা
‘অনিচ্ছাকৃত ভুলের’ জন্য দুঃখিত গগৈ
নিচ্ছাসত্ত্বেই ‘ভুল’ হয়ে গিয়েছে, তাই দুঃখ প্রকাশ করলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।
গুয়াহাটির রাজপথে নিগৃহীত তরুণীর সঙ্গে গত কাল নিজে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে এক নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে আইন ভেঙে প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছিল তরুণীর নাম ও ছবি। আজ সন্ধেয় সাংবাদিক সম্মেলন করে তার জন্য আলাদা করে দুঃখ প্রকাশ করেন তরুণ গগৈ। সেই সঙ্গে আরও এক বার তিনি বলেন, “সাংবাদিকতার নামে ঘটনার দিন যে ভাবে দীর্ঘক্ষণ মেয়েটির ছবি তোলা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
ঘটনাচক্রে লাগাতার সমালোচনার মুখে আজই ইস্তফা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সংবাদ চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক অতনু ভুঁইঞা। এর আগে শনিবার রাতে পদত্যাগ করেছিলেন নিগ্রহের ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করা সাংবাদিক গৌরবজ্যোতি নেওগ। তাঁর বক্তব্য ছিল, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই ইস্তফা দিচ্ছেন তিনি। তদন্ত শেষ হলে মাথা উঁচু করে কাজে ফিরবেন। এত দিন গৌরবজ্যোতির ভূমিকাকে সমর্থন করে যাচ্ছিলেন অতনু। আজ তিনিও পদত্যাগ করলেন।
৯ জুলাই রাতে গুয়াহাটি-শিলং রোডের উপরে তরুণী-নিগ্রহের ঘটনাটি প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ক্যামেরায় রেকর্ড করেছিলেন ওই টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক। অত ক্ষণ ধরে ছবি না তুলে মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টা কেন করল না সংবাদমাধ্যম, সেই প্রশ্ন তার পর থেকেই তাড়া করছে ওই চ্যানেলকে। যদিও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক গৌরবজ্যোতি নেওগ নিজে তো বটেই, চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক অতনু ভুঁইঞারও বক্তব্য ছিল, সাংবাদিকের ধর্মই তাঁরা পালন করেছেন। তাঁদের সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ দেখেই অভিযুক্তদের শনাক্ত করা গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যের কৃষক নেতা এবং আরটিআই কর্মী অখিল গগৈ প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, গৌরবজ্যোতির উস্কানিতেই ওই নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। গৌরবজ্যোতিকে গত কাল রাত পর্যন্ত জেরা করেছে পুলিশ। আজ ভিডিও ফুটেজে তার গলার স্বর ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হচ্ছে।
তরুণী নিগ্রহের ঘটনায় ধৃত পাঁচ জনকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: উজ্জ্বল দেব
তবে কি নিগ্রহের ঘটনায় গৌরব জড়িত বলে সন্দেহ করেই ইস্তফা দিলেন অতনু? প্রশ্ন থাকছে। গত কালই খোদ মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এবং জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা গৌরবজ্যোতি এবং অতনুর সমালোচনায় সরব হন। তার পরেই আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজের ইস্তফা ঘোষণা করলেন অতনু। এবং লক্ষণীয় ভাবে এ কথাও বললেন যে, গৌরবজ্যোতি কোনও ভাবে ঘটনায় জড়িত জানলে তিনি ওই ভিডিও সম্প্রচার করতেন না। পাশাপাশি আজ ফের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অখিল গগৈ দাবি করেন, মূল অভিযুক্ত অমরজ্যোতি কলিতা ওই সাংবাদিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এর আগে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অলকা লাম্বার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছিলেন অখিল। তার পরে নিগৃহীতার পরিচয় প্রকাশ করে দিয়ে অলকা নিজেই বিতর্কে জড়িয়েছেন। গত কাল তাঁকে তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আজ জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে ফোন করেন। মমতা নিজে কাল গুয়াহাটি আসবেন।
নিগ্রহের ঘটনায় মোট যে ১৪ জনকে শনাক্ত করেছিল পুলিশ, তার মধ্যে এখনও ১২ জন ধরা পড়েছে। অমরজ্যোতির খোঁজ মেলেনি। গত কাল রাতে গোরেশ্বর থেকে দেবব্রত দাস, তামুলপুর থেকে বাবু বরুয়া, হাতিগাঁও থেকে জিতুমণি ডেকা এবং শিলং থেকে দীপক দে-কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কামরূপ মহানগরের এসএসপি অপূর্বজীবন বরুয়াকে গত কাল বদলি করে অরবিন্দ কলিতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আজ কলিতার নিয়োগ বাতিল করে তেজপুরের এপি তিওয়ারিকে কামরূপ মহানগরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গুয়াহাটি শহরকে কমিশনারেট করার কথা ঘোষণা করে আজ গগৈ বলেন, রাজ্যের ভাবমূর্তি ফেরাতে তিনি বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি গগৈ জাতীয় সংবাদমাধ্যমকেও একহাত নেন আজ। উত্তর-পূর্বের নিজস্ব আবেগকে উস্কে দিয়ে তিনি বলেছেন, “গোটা অসমিয়া সমাজকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে। এই জন্যই উত্তর-পূর্বের মানুষ নিজেদের বিচ্ছিন্ন বোধ করেন।” অন্য দিকে জাতীয় স্তরে এই ঘটনায় কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র নির্মালা সীতারমণ বলেছেন, “এক জন মহিলা তথা কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসাবে সনিয়া গাঁধী জবাব দিন যে কংগ্রেসশাসিত একটি রাজ্যে তিনি কি এই ধরনের প্রশাসনই চান?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.