আঁটির মতো গড়াগড়ি খেলাম, মন্তব্য বিক্ষুব্ধদের
বিভাজনের অঙ্ক মিলল না, বিপাকে কারাটরা
পাশার দান কি উল্টো পড়ল!
কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের ‘কৌশল’ নিয়েছিলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। কিন্তু শেষ বেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই প্রণবকে সমর্থন করায় বেকায়দায় পড়ে গিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
বাম নেতাদের অঙ্ক ছিল, তাঁরা প্রণবকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করে দেওয়ার পরে মমতা আর কোনও ভাবেই তাঁকে সমর্থন করবেন না। যার ফলে তৃণমূলের ইউপিএ ত্যাগ কার্যত অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে। কিন্তু সেই অঙ্ক মেলেনি। যার জেরে সিপিএম নেতাদের অনেকে বলতে শুরু করেছেন, ‘এ তো আমে-দুধে মিশে গেল। আমরা আঁটির মতো গড়াগড়ি খেলাম।’
প্রণবকে সমর্থন করা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে মতান্তর ছিলই। তবু মূলত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসুদের যুক্তি মেনে এ বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়েছিলেন কারাট। তাতে ভিন রাজ্যের সিপিএম নেতারা তো বটেই, রাজ্যের নেতাদের একাংশও অসন্তুষ্ট। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন এড়াতে তাই ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকেছেন কারাট। কিন্তু আজ মমতার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে কটাক্ষ করা থেকে থেমে থাকেনি অসন্তুষ্ট শিবির। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা যেমন বলেছেন, “প্রণববাবুকে সমর্থন করে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের বিভেদ সৃষ্টি করা গেল বলে যে সব নেতা ভাবছিলেন, তাঁরা কতটা রাজনীতি বোঝেন তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।”
পরিস্থিতি যে সুখকর নয়, তার প্রমাণ হল, আজ এ কে গোপালন ভবনের নীরবতা। মমতার সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউই সরাসরি মুখ খুলতে চাননি। তবে ঘরোয়া আলোচনায় তাঁরা যুক্তি দিয়েছেন, কংগ্রেস ও তৃণমূলের সম্পর্কে যে ফাটল ধরানোর ছিল, তা হয়ে গিয়েছে। এখন সেই ফাটল মেরামত করতেই বাধ্য হয়ে মমতাকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের এই সুরেরই প্রতিধ্বনি করে রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “বাধ্য হয়ে প্রণববাবুকে সমর্থন করেছেন মমতা। এর ফলে দু’পক্ষের সম্পর্কের যে খুব উন্নতি হল, তা ভাবার কোনও কারণ নেই।”
তবে এই যুক্তি দিলেও এ বার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কারাটের নিজের রাজ্য কেরল থেকেই প্রশ্ন উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন সিপিএম নেতারা। প্রণবকে সমর্থনের প্রতিবাদ জানিয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা প্রসেনজিৎ বসুও আজ কেন্দ্রীয় কমিটিকে পাঠানো খোলা চিঠিতে দাবি তুলেছেন, কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা যখন ব্যর্থই হল, তখন এই সিদ্ধান্ত উল্টে দেওয়া হোক। সিপিএম-ও ভোটদানে বিরত থাকুক।
এই অবস্থায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আরও যুক্তি দিচ্ছেন যে, শুধু কংগ্রেস-তৃণমূল বিভেদ নয়, প্রণবকে সমর্থনের আরও কারণ রয়েছে। বিজেপি বা আরএসএসের কেউ যাতে রাষ্ট্রপতি পদে বসতে না পারেন, সেটাও দেখা জরুরি ছিল। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিজেপি-কে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতেই প্রথম ইউপিএ সরকারকে সমর্থন করা হয়েছিল।
কিন্তু দলে তো বটেই বাম শিবিরেও এই সব যুক্তি বিনা প্রশ্নে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। প্রণবকে সমর্থন করতে নারাজ আরএসপি আজ ‘নীতির চেয়ে কৌশল বড় হয়ে গিয়েছিল’ বলে কটাক্ষ করেছে সিপিএম-কে। আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামীর মন্তব্য, “আশা করব ভবিষ্যতে ওঁরা নিজেদের মনোভাব সংশোধন করে নব্য উদারনীতির বিরুদ্ধে বাম আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে সচেষ্ট হবেন।” আর বিজেপি-কে ঠেকানোর যুক্তিকে কার্যত ‘সুবিধাবাদী’ আখ্যা দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা অবনী রায় বলেছেন, “প্রণবকে সমর্থনের সময় বলা হল, তাঁর পক্ষে সব থেকে বেশি ঐকমত্য। আবার আনসারিকে সমর্থনের সময় বলা হল, কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থনে অসুবিধা আছে। কিন্তু আনসারি কংগ্রেসের কেউ নন।”
প্রায় একই মনোভাব প্রণবকে সমর্থন করতে না চাওয়া অপর বাম দল সিপিআই-এর। তবে বাম ঐক্যের স্বার্থে সিপিআই নেতারা এখন এ নিয়ে মুখ খুলতে চান না। তাঁদের বক্তব্য, সিপিএম যে বেকায়দায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই কাটা ঘায়ে আর নুনের ছিটে না দেওয়াই ভাল।
বাম নেতারা অবশ্য একটা বিষয়ে এক মত। তা হল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রশ্নে মমতা ঘরে-বাইরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। এনডিএ-র প্রার্থীকে সমর্থন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। আবার ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিলে দলেও ভাঙন ধরত। কেন্দ্রে তৃণমূলের মন্ত্রীরা ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষপাতী নন। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার কথায়, “মমতা তৃণমূলের মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তাই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হল।” তাতে অবশ্য সিপিএমের কী লাভ হল, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। কারণ এতে আখেরে লাভবান হচ্ছে কংগ্রেসই। অবনীবাবুর কটাক্ষ, “পরিস্থিতি যা দাঁড়াল, তা হল সিপিএম বিধায়কদের এখন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তৃণমূলের সঙ্গে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে।” সিপিএম নেতারা অবশ্য এটা ভেবেই খুশি যে তৃণমূল নেত্রীকে শেষ পর্যন্ত সিপিএমের লাইনে হাঁটতে হচ্ছে। নিতান্ত বাধ্য না হলে তিনি এটা করতেন না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.