কলকাতায় প্রচারে এসে তিনি বলে গিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে তৈরি হলেই তিনিও কথা বলতে তৈরি। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রায়
৪৮ ঘণ্টা আগে তৃণমূল নেত্রী তাঁকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই মমতাকে ফোন করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। পারস্পরিক ‘কৃতজ্ঞতা’ বিনিময়ের পরে প্রণববাবুকে মুখ্যমন্ত্রী মমতার আমন্ত্রণ, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে নিজের রাজ্য বাংলাতেই যেন তিনি প্রথম আসেন।
মহাকরণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ-র প্রার্থীর প্রতি সমর্থনের ঘোষণা করতে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী মমতা মঙ্গলবার বলেছেন, মনে ‘দুঃখ’ নিয়েই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার অব্যবহিত পরে প্রণব-মমতা ফোনালাপে অবশ্য সাম্প্রতিক অতীতের কোনও ‘তিক্ততা’র ছোঁয়া ছিল না। ছিল নিখাদ ‘সৌজন্য’। তৃণমূল নেত্রী মমতা বর্ষীয়ান রাজনীতিক প্রণববাবুকে সম্বোধন করেছেন ‘দাদা’ বলেই। তাঁর সমর্থনের জন্য প্রণববাবু ধন্যবাদ জানিয়েছেন মমতাকে। আর মমতা তাঁকে আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন নিজ রাজ্যে। মহাকরণে ওই ফোনালাপের পরে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “আমরা সরকারে আসার পরেই প্রণবদা’কে এক দিন মহাকরণে এসে চা খেতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। উনি হয়তো সময় পাননি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে আমি বাংলায় আসার আমন্ত্রণ জানানোয় উনি বললেন, তোর সঙ্গে কথা বলে আসব।”
মমতা এ দিনও বলেছেন, রাজ্যের আর্থিক সমস্যা নিয়ে তিনি ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বেশ কয়েক বার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণববাবুর ঢাকুরিয়ায় বাড়িতে কথা বলতে গিয়েছেন। কিন্তু গত ৮ মাস আর ‘যে কোনও কারণেই হোক’, প্রণববাবুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। সেই পর্বের অবসান হল এ দিনের দূুরভাষে। যে কথোপকথনকে মমতা আখ্যা দিয়েছেন ‘সৌজন্যমূলক’ বলেই।
প্রণববাবুর ফোনের আধ ঘণ্টা আগেই এ দিন সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফোন আসে উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হামিদ আনসারির। হামিদের আজ, বুধবার মনোনয়ন পেশ করার কথা। তার আগে হামিদ তাঁকে ফোন করায় ‘খুশি’ মমতা। ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এটাই সৌজন্য। প্রণববাবুর কাছেও তিনি এটাই আশা করেছিলেন। হামিদ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “ওঁর সঙ্গে কলকাতার সম্পর্ক আছে। উনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়েছেন। আমাকে ওঁর বাড়িতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন হামিদ সাহেব। আমি যাব বলেছি।” প্রসঙ্গত, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁদের অবস্থান এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেননি তৃণমূল নেত্রী। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে টানাপোড়েনের শেষে প্রণব-হামিদের ফোন এবং গোটা ঘটনাপ্রবাহ ঘিরে ঈষৎ হাল্কা চালেই মমতার মন্তব্য, “সবই কিন্তু আমাদের কলকাতা তথা বাংলা কেন্দ্রিক। প্রণবদা তো আছেনই, তাঁর প্রতিপক্ষ পি এ সাংমারও পড়াশোনা কলকাতায়। হামিদ সাহেবের সঙ্গেও কলকাতার সম্পর্ক আছে। আবার উপরাষ্ট্রপতি পদে বিজেপি-র প্রার্থী যশোবন্ত সিংহও দার্জিলিঙের সাংসদ। ফলে এক অর্থে তাঁর সঙ্গেও বাংলার যোগ আছে।” জেডিইউ-র সর্বভারতীয় সভাপতি শরদ যাদবও এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছে বলে খবর। |