রাজ্যের গড়িমসির কারণে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার ৩১ ডি জাতীয় সড়ক সংস্কারের স্থায়ী কাজ জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ করতে পারছে না বলে দাবি করলেন কংগ্রেস নেতা তথা আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়। সোমবার কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রীর লেখা একটি চিঠি প্রকাশ্যে এনে ওই দাবি করেছেন দেবপ্রসাদবাবু। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী গত জুন মাসে ওই চিঠি মারফৎ দেবপ্রসাদবাবুকে কেন মহাসড়কের সংস্কারে দেরি হচ্ছে তা জানিয়েছেন। বিধায়কের যুক্তি, ৩১ ডি জাতীয় সড়কেই যে হেতু পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়ক তৈরি হবে, সে কারণে এই সড়কে আপাতত জোড়াতালি দিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। বিধায়কের অভিযোগ, মহাসড়ক তৈরির জন্য জমি পাওয়ার কাজে রাজ্য সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের গাফিলতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রীর চিঠিতে জানানো হয়েছে, ৩১ ডি জাতীয় সড়কে মহাসড়কের কাজ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ রাজ্য সরকারের জমি অধিগ্রহণ দফতর গত কয়েকবছরে আশানুরূপ জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে, কোনও প্রস্তাবিত মহাসড়কের ৮০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ না-করলে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া যায় না। অথচ শিলিগুড়ির ঘোষপুকুর থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে আলিপুরদুয়ারের সলসলাবাড়ি পর্যন্ত প্রস্তাবিত মহাসড়কের এক শতাংশও জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি। এদিন বিধায়ক বলেন, “জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বারবার বলেছে মহাসড়কের কাজ শুরু হবে বলে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি-আলিপুরদয়ার ৩১ ডি জাতীয় সড়কের পূর্ণাঙ্গ মেরামতির কাজ করা হচ্ছে না। একই রাস্তায় দু’বার তারা টাকা বিনিয়োগ করবেন না। সে কারণেই জোড়াতালি দিয়ে কাজ হচ্ছে। আবার ভেঙেও যাচ্ছে। তাই একমাত্র সমাধান ছিল মহাসড়কের কাজ শুরু করা। সেই প্রস্তাব দিয়েই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম। বিধায়ক জানিয়েছেন, জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনকেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিঠির প্রতিলিপি তিনি গত জুন মাসেই পাঠিয়েছেন, যদিও তার কোনো উত্তর পাননি। এ ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি এবং এসজেডিএ সদস্য চন্দন ভৌমিক বলেন, “পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়ক তো একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তার সঙ্গে রাস্তা সংস্কারের কি সম্পর্ক! যতদিন মহাসড়ক তৈরি হবে না ততদিন মানুষজন কোথা দিয়ে চলাচল করবেন? বাস্তববুদ্ধি সে কথা বলে না। কবে মহাসড়ক হবে সে দিকে তাকিয়ে না-থেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বেহাল রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করুক। শুধুমাত্র চিঠি বা পাল্টা চিঠি দিয়ে মানুষের সমস্যা মিটবে না। সাধারণ মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াটাই হল মূল বিষয়।” ঘটনা হল, গত ১০ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গে এসে জাতীয় সড়কের বেহাল দশা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করেন। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারে থাকলে কবেই জাতীয় সড়ক সংস্কার করে দেওয়া হতো। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দায়িত্ব থাকায় সেই কাজ হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের পরে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। এক সপ্তাহের মাথায় কংগ্রেস বিধায়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর যে চিঠি প্রকাশ করেছেন তাতে, মুখ্যমন্ত্রী যে ৩১ডি জাতীয় সড়ক ধরে শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে গিয়েছিলেন, সেই জাতীয় সড়ক সংস্কারের প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকেই দায়ী করা হয়েছে। এ দিন বিধায়ক বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে সাফাই দিচ্ছি না। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী জাতীয় সড়ক নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তার পরে যে ঘটনাপ্রবাহ তৈরি হয়েছে তাতে এই তথ্য সংযোজন করতে চাই। এটাও বলতে চাই, আগের বাম জমানায় মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণ দেখভালের জন্য মন্ত্রীগোষ্ঠীর একটি কমিটি ছিল। এখন কোনও কমিটি রয়েছে কি না জানি না।” |