প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে শিলিগুড়িতে ‘আইন অমান্য কর্মসূচি’ আপাতত স্থগিত করল দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, রাজ্যজুড়ে হিংসা-সন্ত্রাস, খাদ্য নিরাপত্তার দাবিতে আজ, মঙ্গলবার রাজ্যের অন্য জায়গার সঙ্গে শিলিগুড়িতেও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রবিবার থেকে শিলিগুড়ি এবং পাশ্বর্বর্তী এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত, মহানন্দার বাঁধ ভেঙে চম্পাসারির বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ঘোষিত রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে সরে এসে বাম কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন ফ্রন্ট নেতৃত্ব। দার্জিলিং জেলা সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “ওই কর্মসূচি আগে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর পক্ষে প্রচার অভিযানও হয়েছে। কিন্তু গত ৪৮ ঘন্টায় যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে আমরা বিষয়টি স্থগিত রাখছি। পরেও ওই কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন হতে পারে। এখনও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই কাজ।” একই ভাবে সিপিআই-র জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, “দলীয় কাজে শহরের বাইরে আছি। টেলিফোনে যা অবস্থা শুনেছি, তাতে এখন কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া যাবে না। ফ্রন্টের অন্য নেতাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে এখন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।” ফ্রন্ট সূত্রের খবর, গত রবিবার দুপুরের পর থেকে শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর তা ভয়ঙ্কর আকার নেয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাম নেতা, কর্মীরা দলীয় নেতাদের পরিস্থিতির কথা জানাতে থাকেন। দেবীডাঙা, চম্পাসারি, মিলনমোড়, সমরনগর, তুম্বাজোত, ফুলবাড়ি, পতিরাম-সহ একাধিক এলাকায় জীবেশবাবু, পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলামেরা ঘুরে দেখেন। এর পরে জেলা সিপিএম নেতৃত্ব রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। শেষে ফ্রন্টের অন্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে শেষে কর্মসূচি আপাতত না করার সিদ্ধান্ত হয়। ফ্রন্টের কয়েকজন নেতা জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে ওই কর্মসূচি শিলিগুড়ি এবং কলকাতায় হবে বলে ঠিক হয়েছিল। শিলিগুড়িতে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, ইসলামপুর, চোপড়া এলাকার কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠান হবে বলে ঠিক হয়। উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং কোচবিহারে সোমবার কর্মসূচি হয়েছে। কিন্তু যা আবহাওয়া চলছে। তাতে ঝড়, বৃষ্টি হলে কর্মীদের শিলিগুড়ি আসা-যাওয়া করতেও সমস্যায় পড়তে হবে। তাই এখনই কর্মসূচি না করার জন্যই একাধিক বাম নেতা সওয়াল করেন। তবে বিপর্যয়ের পর উদ্ধার এবং ত্রাণের বদলে পরিদর্শন আর প্রতিশ্রুতির কাজই বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম। জীবেশবাবু বলেন, “শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলায় প্রায় ২-৩ লক্ষ মানুষ বিপর্যস্ত। আমরা এই সময়ে কাউকে দোষারোপ করছি না। শুধু বলছি, প্রশাসনিক বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। বাস্তবসম্মতভাবে ত্রাণ বিলি এবং ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। তা হচ্ছে না। পরিদর্শন এবং প্রতিশ্রুতিই বেশি হচ্ছে।” জীবেশবাবু জানান, অবাস্তবসম্মত ভাবে ১০ গ্রাম গুড় দেওয়ার মত ত্রাণ বিলির করা ঘটনাও সামনে এসেছে। এখনও কিছু এলাকায় জল জমে রয়েছে। সেগুলি পাম্প করে বার করা ছাড়াও সে এলাকাগুলি থেকে জল নেমেছে, সেখানে পোকামাকড় ছাড়াও রোগ ছড়ানো ঠেকাতে ব্লিচিং পাইডার, চুন জাতীয় জিনিস ছড়ানোর ব্যবস্থা করা দরকার। আর কয়েকটি স্পিডবোট ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলা কোনও পরিকাঠামো দেখা যায়নি। বাম আমলে বাঁধের কাজ নিম্নমানের হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওই ধরণের কথা বলা হচ্ছে। তবে আমরা এলাকায় গিয়ে উল্টো কথা শুনেছি। গত মাসে ওই বাঁধের কাজ হয়েছিল। তাই এই সব মিথ্যা, অবান্তর অভিযোগের কোনও রকম মানে হয় না।” |