ভেজা ঘরদোরে ক্ষুব্ধ বিষ্ণুমায়ারা
লে ভিজে চাল ফুলে ভাতের দানার আকার নিয়েছে। ডাল ভিজে গিয়ে পচন ধরেছে। জলে গলে গিয়েছে চিনি। সেই দোকানে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন শিলিগুড়ির অদূরে চম্পাসারির মিলনমোড় এলাকার তিনধরিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিষ্ণুমায়া সুবেদি। মোড়ের মাথায় ছোট্ট মুদি দোকান। টুকটাক কেনাবেচা করে স্বামী-স্ত্রীর সংসার চলে। রবিবার ভোরে মহানন্দার বাঁধ ভেঙে দোকানে জল ঢুকে পড়ায় সমস্ত জিনিস নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে এই ক্ষতিপূরণ হবে, ভেবে পাচ্ছেন না প্রেমনিধি। প্রতি ঘণ্টায় ভাঙা বাঁধ দেখতে কোনও না-কোনও সরকারি প্রতিনিধি, মন্ত্রী থেকে আমলা এলাকায় আসছেন। সোমবার খোদ সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে দেখে নিজেকে সংযত করতে পারেননি বিষ্ণুমায়া দেবী। সেচমন্ত্রীকে দেখেই কৌটোয় ভরে ভেজা চাল নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। যদি তা দেখে মন্ত্রী ক্ষতিপূরণের আশ্বাসটুকু দেন। এদিন অবশ্য অন্য ঘটনাই ঘটে। বিষ্ণুমায়া দেবীকে দেখে সেচমন্ত্রী উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করে দেন। দৌড়ে গিয়ে একসময়ে সেচমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে ক্ষোভ উগড়ে দেন বিষ্ণমায়া। স্পষ্ট ভাষায় সেচমন্ত্রীর কাছে তিনি জানতে চান, “পালাচ্ছেন কেন? আমরা কেমন ভাবে বেঁচে আছি দেখে যাবেন না।” সেচমন্ত্রী অবশ্য দাঁড়াননি। ‘ভাঙা বাঁধ দেখতে যাচ্ছি’ বলে গাড়িতে উঠে পড়েন। ক্ষুব্ধ ওই মহিলা বলেন, “এত লোক সকাল বিকেল এই এলাকায় আসছেন। কারও আমাদের নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। না-হলে সেচমন্ত্রী আমাদের কথা না-শুনেই কেন চলে গেলেন?” ক্ষতিপূরণ এবং মন্ত্রী আমলাদের উদাসীনতা নিয়ে এই ক্ষোভ এদিন ছড়িয়ে ছিল এলাকা জুড়ে। সেচমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেন, জেলাশাসককে দ্রুত ত্রাণ বিলির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এদিন অবশ্য ওই এলাকায় ভাঙা বাঁধ দিয়ে গ্রামে জল ঢোকার তীব্রতা কমলেও বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। এদিনও দেবিডাঙা থেকে গুলমা বস্তি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়েছিল। জলমগ্ন হয়েছিল এলাকার তিনধরিয়া, যদুভিটা, শিসাবাড়ি, কলাবাড়ি, গাঁওভাসা-সহ ১০-১২টি গ্রাম। জলের তোড়ে রাস্তা উঠে যাওয়ায় এদিনও বিচ্ছিন্ন ছিলেন গুলমা ও কড়াইবস্তি এলাকার বাসিন্দারা। বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়নি। বহু গ্রামের পানীয় দল দূষিত হয়ে পড়েছে। হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট তুলে জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে মিলন মোড় থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের দেবীডাঙার বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দাদেরও। মহানন্দার বাঁধ ভাঙার দিন সকালে মহকুমাশাসক বৈভব শ্রীবাস্তবের তৎপরতায় ১২ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়। রাতে রাজ্য পুলিশের চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের কর্মীরা আরও ৯০ জনকে বিভিন্ন জলবন্দি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। তার পরেও পরিস্থিতির ভয়াবহতা অস্বীকার করতে পারেননি বিভাগীয় কমিশনারও। এলাকা ঘুরে তিনি জানান, পরিস্থিতির উন্নতি না-হলে সেনা নামানো হবে। সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার, পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম, অজিত সরকার এবং কাউন্সিলর মুকুল সেনগুপ্ত ওই এলাকায় যান। জীবেশবাবুর বক্তব্য, আরও প্রশাসনিক তৎপরতা দরকার। এ বারের বন্যা পরিস্থিতিতে এলাকার ৬০-৭০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেও দাবি করেন জীবেশবাবু। জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) তুলসি প্রামাণিকের নেতৃত্বে এদিন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.