মহানন্দার ধারে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার ওয়ার্ডগুলির একাংশে সোমবারও জলবন্দি থাকেন অনেক মানুষ। দুর্গত বাসিন্দাদের পরিস্থিতি দেখতে কাউন্সিলর বা কোনও পুর আধিকারিক না যাওয়ার অভিযোগ তুলে সোমবার ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দময়ী কলোনির লোকজন চম্পাসারি মেন রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। কাউন্সিলর শিখা রায় অভিযোগ জানান, ওই বাসিন্দারা রবিবার রাতে তাঁর বাড়িতেও হামলা চালিয়েছিলেন। পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে। কাউন্সিলরের দাবি, আনন্দময়ী কলোনিতে রবিবার সকালে জল জমেনি। পরে বৃষ্টি হলে বিকালের দিকে বৃষ্টির জল জমে। এ দিন ওই এলাকার বাসিন্দাদের ত্রাণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত জলবন্দি হয়ে থাকার চিত্র দেখা গিয়েছে ১ নম্বর ওয়ার্ডের অম্বেডকর কলোনি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গানগরের একাংশে, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের লোয়ার গাঁধীনগর, পাসোয়ান বস্তি, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রমোদনগর কলোনি, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাজীবনগর, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে শক্তিগড়ের অশোকনগর এলাকায়গুলিতে। পুরসভার তরফে এ দিন সকাল থেকে ওয়ার্ডগুলিতে ত্রাণ হিসাবে প্রশাসনের তরফে পাঠানো চিড়ে, গুড় বিলি হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ত্রিপল। তৈরি মেডিক্যাল টিমও। ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে নেতাজি কলোনি এলাকায় মহানন্দা বাঁধের একাংশ বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে বলে পুরসভার তরফে প্রশাসনকে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেচমন্ত্রী শিলিগুড়িতে এলে বিস্তারিত তাঁকে জানান মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে জোড়াপানি নদীর উপর একটি কাঠের সেতু রবিবার রাতে ভেঙে যায়। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে পাড় বাঁধাইয়ের যে কাজ হয়েছিল তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্য পরিস্থিতির জেরে এ দিন শহরের পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে এবং বিল্ডিং বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থাকলেও সবই বাতিল করা হয়। সকাল থেকেই পুর ভবনে থেকে ত্রাণ বিলির তদারকি করেন মেয়র, পুর কমিশনার, সচিব। মেয়র বলেন, “মহানন্দা নদী লাগোয়া নানা ওয়ার্ড থেকে জল সরে গিয়েছে। তবে কিছু এলাকায় অনেকে জলবন্দি। কোনও প্রয়োজন হলে কাউন্সিলরদের জানাতে বলা হয়েছে।” জল নেমে যাওয়ার পর ওয়ার্ডগুলিতে ছড়ানোর জন্য চুন, ব্লিচিং পাঠানো হয়েছে। রবিবার রাতে জোড়াপানির নদীর জলস্তর বেড়ে প্লাবিত হয় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের উদয়ন কলোনি, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের নদী লাগোয়া কিছু এলাকা। এ দিন মেয়র ওই এলাকা পরিদর্শনে যান। ততক্ষণে জল নেমে গিয়েছে। কাউন্সিলরদের উদ্যোগে ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড, পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পালের ওয়ার্ডে দুর্গত বাসিন্দাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়। চেয়ারম্যান নান্টু পাল বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। রবিবার রাতে ২৬ নন্বর ওয়ার্ডে ফুলেশ্বরী নদীর ধারে থাকা ১০/১২ বাড়িতেও জল ঢুকে পড়ে। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন জায়গায় এখনও বাসিন্দারা বিপাকে পড়ে রয়েছেন। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে একটি হাইড্রেন ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি পুর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সঞ্জয় পাঠক জানান, ওয়ার্ডে অম্বেডকর কলোনি এলাকায় প্রায় ৩০০ পরিবার জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাগিণী সিংহ জানান, লোয়ার গাঁধীনগরে অন্তত ৪০ টি বাড়িতে জল ঢুকে রয়েছে। পুরসভার তরফে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়নি। |