ত্রাণের দাবি দুর্গতদের
তিস্তার জলে ভাসছে গ্রাম
ই যে দূরে কিছু ঝোপঝাড় দেখা যাচ্ছে, ওটাই সীমানা। উঁচু বাঁধের উপরে দাঁড়িয়ে হাত তুলে দেখালেন ক্ষুদ্র সঞ্চয় অধিকর্তার দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী গোপাল ঝাঁ। যে দিকে সীমানা দেখালেন, শুধু জল আর জল। ঘোলা জলের মধ্যে দূরে কিছু ঝোঁপজঙ্গলের মাথা দেখা যাচ্ছে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। ওই সীমানার পরে তিস্তা নদী। এক সময় এলাকাটি অসংরক্ষিত বলে পরিচিত ছিল। বছর খানেক আগে বোল্ডারের ছোট বাঁধ দিয়ে পুরো গ্রামটি ঘিরে দিয়েছে সেচ দফতর। গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগও এসেছে। প্রায় বছর কুড়ি আগে তৈরি হয়েছে তিনটি প্রাথমিক স্কুলও। প্রায় সাড়ে তিনশো হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। গত শনিবার রাতে তিস্তার জল বোল্ডারের বাঁধ টপকে গ্রামে ঢুকে পড়ে। প্রায় দু’কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে তিস্তার জলে।
জলমগ্ন হয়েছে খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকান্তনগর কলোনি। জলবন্দি প্রায় দেড় হাজার পরিবার। প্রশাসন থেকে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করলেও বাড়ি ঘর ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি কেউ। গবাদি পশু, হাঁড়ি কড়াই নিয়ে সকলে উঠেছেন বাঁধে। রবিবার সারা দিন বৃষ্টির মধ্যে বাঁধে কাটিয়েছেন। রাতে শুতে গিয়েছেন বাড়িতে। সোমবার সকালেও বৃষ্টি মাথায় সকলে আবার বাঁধে উঠে আসেন। সরবালা বর্মন বলেন, “রাতে ঘুম আসেনি ঘরে প্রায় হাঁটু সমান জল। বিছানায় বসে রাত কাটিয়েছি। যদি জল বাড়ে তবে ঘরে থাকা যাবে না। সেই আশঙ্কায় দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি।” প্রশাসনের কথা মতো অন্যত্র গেলে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে বলে বাসিন্দাদের জানালেও তাঁরা গ্রাম ছেড়ে যেতে রাজি নন। দীপালি রায় বলেন, “ঘর বাড়ি ছেড়ে কেমন করে যাব! যদি চুরি হয়ে যায়। তার চেয়ে এই ঢের ভাল। দিনের বেলায় উঁচু জায়গায় বসে পাহারা রাতে বাড়িতে যাব।”
সুকান্তনগর কলোনির তিনটি প্রাথমিক স্কুল, দুটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র এবং একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তিস্তার জল ঢুকেছে। সোমবার থেকে ক্লাস বন্ধের কথা ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এদিন দুপুরে এলাকার কিছু বাসিন্দা চাঁদা তুলে খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা করেন। এলাকার যুবক বিজয় রায় বলেন, “প্রত্যেকের বাড়িতে জল। রান্নাবান্না কিছু হয়নি। তাই চাঁদা তুলে খিচুড়ি রান্না করছি। বাচ্চাগুলিকে তো আর না খাইয়ে রাখা যাবে না। আমরা না-হয় আধপেটা থাকব।” পঞ্চায়েত সদস্য জয়ন্তী রায় বলেন, “ত্রাণ কিছুই পাইনি। প্রশাসন বলেছে অন্য জায়গায় না গেলে ত্রাণ পাওয়া যাবে না। অনেক বলে দু’তিনটে পলিথিন পেয়েছি। সেগুলি বাঁধে টাঙিয়ে গবাদি পশু রাখা হয়েছে।” জলপাইগুড়ি সদর মহকুমাশাসক সাগর চক্রবর্ত্তী বলেন, “নদীর চর বা নিচু জায়গার মানুষ গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইছে না। ওঁদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

সোমবার ছবি দু’টি তুলেছেন সন্দীপ পাল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.