দার্জিলিং পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় একটানা বৃষ্টি চলছেই। পাহাড়ে ছোট-বড় ধসও অব্যাহত। সোমবার কালিম্পঙের রিয়াংয়ে ধস-বিধ্বস্ত রাস্তায় গাড়ি উল্টে খাদে পড়ে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের এক ইঞ্জিনিয়র ও তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সেবক, পাঙ্খাবাড়ির রাস্তায়ও ছোট মাপের দুর্ঘটনার খবরও মিলেছে। ধস নেমেছে রোহিনীতে। সমতলে প্রায় সব নদীর জল বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তরাই-ডুয়ার্স ও কোচবিহার মিলিয়ে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ জলবন্দি। পর্যাপ্ত ত্রাণ না-পৌঁছনোয় ক্ষোভ বাড়ছে দুর্গতদের মধ্যে। সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ি লাগোয়া চম্পসারির মিলন মোড় এলাকায় মহানন্দার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দুর্গতদের ক্ষোভের মুখে পড়েন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
চম্পাসারি এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মেরামতির মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই মহানন্দার বাঁধ ভেঙে গেল কেন? মেরামতির কাজ করেছে সেচ দফতরই। এই দিন সেচমন্ত্রীর সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। বাঁধ ভাঙার পরে সেচ দফতরের কেউই বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াননি বলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় সেচমন্ত্রী ওই এলাকা পরিদর্শনের কাজ অসমাপ্ত রেখে ‘আমি সব দেখছি’ বলে জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল কমিশনারের গাড়িতে উঠে চলে যান। পরে সেচমন্ত্রী বলেন, “দুর্গতদের ক্ষোভ স্বাভাবিক। আমি বাঁধ মেরামতির ব্যাপারে যা করণীয় করছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে সবই জানাব।” মিলন মোড় এলাকা থেকে কমিশনারের গাড়িতে উঠে চলে যাওয়া নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে, সেই প্রসঙ্গে সেচমন্ত্রীর দাবি, “আমি মোটেই পালাইনি। যে কারণে কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে এসেছি, মহানন্দার সেই ভাঙা বাঁধ দেখাটা জরুরি ছিল। তাই ভুল রাস্তায় ঢুকে পড়েছি বুঝে ফেরার রাস্তা ধরি।”
প্রায় তিন দিন ধরে বৃষ্টির জেরে পাহাড়-তরাই ও ডুয়ার্সের সিংহভাগ এলাকার নদী ফুঁসছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ভোর থেকে প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত ছোটাছুটি করলেও সর্বত্র ত্রাণসামগ্রী পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ। গৌতমবাবু বলেন, “নদীখাত, নদীবাঁধ নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা না-থাকায় ফি বছর বেশি বৃষ্টি হলে এমন দুর্ভোগ হয়। আপাতত ত্রাণ ও উদ্ধারের জোর দিয়েছি। বর্ষা পেরোলে সামগ্রিক পরিকল্পনা হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানিয়েছি।”
এই দিন সকালেই তিস্তার জলস্তর বিপদ সীমার অনেক উপর দিয়ে বইতে থাকায় জলপাইগুড়ির অন্তত ১৪টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। কালজানি, সঙ্কোশ, জলঢাকা ও তোর্সা বিপদসীমার কাছাকাছি বইছে। সব নদীতে হলুদ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। একটি নদীর সঙ্গে অন্য নদী মিশে ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়েছে চা বাগান-সহ বিভিন্ন জনপদ। বনকর্মীরা জলবন্দি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক নদীবাঁধ। অন্তত তিনশো বিঘা জমির ধান ও পাট জলে তলিয়েছে। তরাই ডুয়ার্স মিলিয়ে জলবন্দি হয়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।
ডুয়ার্সে বনবস্তি এলাকার জলবন্দিদের উদ্ধার করতে কুনকি হাতি নিয়ে গিয়েছেন বনকর্মীরা। কালচিনি ব্লকে পানা ও বাসরা নদী মিশে গিয়ে সেন্ট্রাল ডুয়ার্স যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নাগরাকাটার খেরকাটা গ্রামও সেতু ভেঙে বিচ্ছিন্ন। বাসিন্দাদের উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসন সেনার নির্মাণ বিভাগের সাহায্য চেয়েছে। কোচবিহারের বন্যা পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। বসরা সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় হ্যামিল্টনগঞ্জ ও হাসিমারার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত। |