অর্থাভাবে নিয়মিত পেটভরা খাবারই পান না রাজ্যের অধিকাংশ হোমের আবাসিকেরা। অথচ ‘নিরাপত্তা’র স্বার্থে সেখানেই ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি বসাচ্ছে সমাজকল্যাণ দফতর। ‘অঘটন’ জানান দেওয়ার জন্য বসবে সাইরেনও। ওই দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র সোমবার মহাকরণে এই পরিকল্পনার কথা জানান। গুড়িয়ার রহস্যমৃত্যুর তদন্তে এ দিনই গুড়াপে যান গোয়েন্দারা।
বস্তুত, গুড়াপে ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি বেসরকারি হোমের পাঁচিলের পাশে পুকুরপাড়ের মাটি খুঁড়ে গুড়িয়া নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন আবাসিক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধারের পরেই সমাজকল্যাণ দফতর নড়েচড়ে বসেছে। ওই দফতরের একাধিক অফিসার মেনে নিয়েছেন, হোমগুলির পরিচালন ব্যবস্থার উপরে নজরদারিতে যে ফাঁক থেকে যাচ্ছে, গুড়াপের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কারণ, গুড়িয়া ওই হোমের আবাসিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর অপমৃত্যুর বিষয়টি নজরে আসে কয়েক দিন পরে। কার্যত সে-কথা মাথায় রেখেই হোমগুলির কাজ খতিয়ে দেখার জন্য সব জেলায় ডিএম, এসপি-সহ সরকারি আধিকারিকের স্ত্রীদের নিয়ে কমিটি তৈরির নির্দেশ দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, “রাজ্যের ১৮টি সরকারি হোমের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে-সব বিষয় বিবেচনা করে হোমগুলিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়, সেগুলি যথাযথ ভাবে মানা হয়েছিল বা হচ্ছে কি না, তা-ও দেখা হবে।”
এ দিনই বিকেলে গুড়িয়া-কাণ্ডের তদন্তে গুড়াপে যান সিআইডি-র অফিসারেরা। তাঁরা পুলিশি হেফাজতে থাকা হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যে-চিকিৎসকের প্যাডে গুড়িয়ার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লেখা হয়েছিল, সেই কাঞ্চন মণ্ডল এ দিন চুঁচুড়া আদালতের চতুর্থ কোর্টের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট প্রসেনজিৎ বসুর কাছে গোপন জবানবন্দি দেন।
গুড়াপের ওই হোমেরই অন্য আবাসিক ঝর্না সামন্ত (৪৪)-এর দেহ সৎকারের ঘটনায় জামালপুর থানার ওসি রজতকান্তি পাল এবং এএসআই বিশ্বরূপপ্রসাদ দীক্ষিতকে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করার নির্দেশ দিয়েছেন বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা। গত মে মাসে ঝর্নার দেহ জামালপুরে সৎকার করতে এসেছিলেন ওই হোমের লোকজন। জানতে পেরে স্থানীয় বাসিন্দারা জামালপুর থানায় খবর দেন। পুলিশ দেহটি আটক করে ময়না-তদন্তে পাঠায়। ওই ঘটনায় তখন একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাও রুজু হয়েছিল। কিন্তু ময়না-তদন্তের পরে ঝর্নার দেহ ফের হোমের লোকজনের হাতেই তুলে দেয় পুলিশ। এসপি বলেন, “এএসআইয়ের (ঘটনার তদন্তকারী অফিসার) বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি এবং ওসি-র বিরুদ্ধে মামলা তদারকিতে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সবিস্তার বিভাগীয় তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থেই ওই দু’জনকে বর্ধমান পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হল।”
এ দিনও ঝর্নার সবিস্তার পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। জেলা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ওই মহিলা উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। বারাসত আদালতের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন তাঁকে ২০১১ সালের ২৫ অগস্ট গুড়াপের ওই হোমে পাঠান। |