রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংখ্যালঘু প্রশ্ন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা বিবিধ বিষয়ে পথে নামল সরকারের জোট শরিক কংগ্রেস।
সোমবার একদিকে কলকাতায় তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশ্নে ধর্মতলার মোড়ে সভা করেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছে। অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে রাজ্য সরকারকে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী।
রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের কথা ভেবেই কংগ্রেসের এই আন্দোলন বলে মনে করছে কংগ্রেসেরই একাংশ। পঞ্চায়েতে যে জোট হবে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত। সেই সূত্রেই এই পথে-নামা।
অধীরের বক্তব্য, মুর্শিদাবাদে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে ‘বাধা দিচ্ছে’ রাজ্য সরকার। রঘুনাথগঞ্জে কংগ্রেসের জনসভায় অধীর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “মিষ্টি কথায় কাজ না-হলে লড়ে দাবি আদায় করব। মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু না-করলে রমজান মাসের শেষে জেলা থেকে লক্ষাধিক মানুষ নিয়ে রাজভবন ঘেরাও করব। সময় থাকতে হুঁশিয়ার না-হলে দেখিয়ে দেব, বিশ্ববিদ্যালয় কী ভাবে তৈরি করতে হয়!” |
কংগ্রেসের প্রতিবাদ সভায় প্রদীপ ভট্টাচার্য। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র |
পাশাপাশি, বিদ্যুতের মাসুলবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ দিনই ধর্মতলায় কলকাতার চারটি জেলার কংগ্রেসকর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। ইউপিএ-র রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে এখনও সমর্থন না-করায় তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ করে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য সেখানে বলেন, “প্রণববাবু তৃণমূলের ভোট ছাড়াই জিতবেন নিশ্চিত। কিন্তু ভোট না-দিলে তৃণমূলই ভুল করবে! ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।” প্রণববাবুর চিঠি নিয়ে মমতার ‘অসন্তোষ’ সম্পর্কে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান কটাক্ষ করেন, “প্রধানমন্ত্রী, সনিয়া’জি-সহ দেশের সব বিধায়ক-সাংসদের কাছেই প্রণববাবু ওই চিঠিই পাঠিয়েছেন। তাতে কারও নামে আলাদা সম্বোধন নেই। ওঁকে (মমতাকে) আলাদা সম্বোধন করতে হবে কেন?” উপরাষ্ট্রপতি পদে কৃষ্ণা বসুর নাম প্রস্তাব করে মমতা ‘ঘৃণ্য রাজনীতি’ করছেন বলেও মান্নানের মন্তব্য।
জোটে থেকেও মমতার কেন্দ্র-বিরোধিতাকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেত্রী মালা রায় বলেন, “কংগ্রেসের আন্দোলনের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আপনি (মমতা) সরকার
গড়লেন! এখন সেই কংগ্রেসকেই ধ্বংস করতে চাইছেন?” বিক্ষোভ সমাবেশের পর রাজ্যপাল এম কে নারায়ণের সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ‘উদ্বেগ’ জানায় কংগ্রেস।
অধীর অভিযোগ করেন, মুর্শিদাবাদের আহিরণে ১,৩০০ কোটি টাকা খরচ করে প্রস্তাবিত আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ বন্ধ। ফরাক্কা ব্যারাজের ২৮৮ একর পরিত্যক্ত জমি হস্তান্তরের কাজ শেষ হয়েছে ২০১০-এ।
কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ কোটি টাকা প্রাথমিক ভাবে বরাদ্দ করেছে। ২০১০-এর ২০ নভেম্বর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করা হয়। কিন্তু কংগ্রেসের ‘কৃতিত্ব’কে
খাটো করতেই বর্তমান রাজ্য সরকারের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। সভায় ছিলেন মুর্শিদাবাদ থেকে নির্বাচিত একাধিক কংগ্রেস বিধায়ক। তাঁরাও সরকারকে কড়া আক্রমণ করে হুমকি দেন বন্ধ ডাকার।
জনসভার শেষে জঙ্গিপুরের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক বিমানবিহারী রায়ের কাছে স্মারকলিপিও দেয় কংগ্রেস। পরে বিমানবাবু বলেন, “যে এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে, সেখানে বসতি রয়েছে। তাঁদের পুনর্বাসন নিয়ে কিছু সমস্যা থেকেই এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। যথাসম্ভব দ্রুত কাজ শুরু করার চেষ্টা চলছে।”
কংগ্রেসের অভিযোগ প্রত্যাশিত ভাবেই উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “আলিগড় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এর
আগে বহরমপুরে মেডিক্যাল কলেজ নিয়েও মিথ্যা দোষারোপ করা হয়েছিল
কংগ্রেসের তরফে। সমস্যার কথা ওঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে বলুন। কংগ্রেসের স্বভাব মানুষকে বিভ্রান্ত করা!”
জোট শরিকের এই টানাপড়েনের আবহে ময়দানে নেমে পড়েছে রাজ্য বিজেপি। এ দিন তৃণমূলের কাছে এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী পি এ সাংমাকে সমর্থনের আর্জি জানিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে আমাদের একমাত্র সাংসদ যশোবন্ত সিংহ তো সাংমাকে ভোট দেবেনই! তৃণমূল-সহ অন্য সব বিধায়ক ও সাংসদের কাছে আবেদন, তাঁরাও সাংমাকে বিবেক ভোট দিন।”
তবে রাস্তায় নামলেও তাঁরা যে জোটেই থাকতে চান, তার ইঙ্গিত মিলেছে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপবাবুর বক্তব্যে। যিনি বলেছেন, “আমরা জোটেই আছি। তবে আমরা জোটধর্ম মানব আর এক জন (তৃণমূল) জোট বিরোধিতা করবে, তা হতে পারে না!” |