সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
এগারো বছর পরে আবার প্রকাশ্যে এলেন প্রাক্তন ভারতীয় মেয়ে ফুটবলার বন্দনা পাল। এখন অস্ত্রোপচারে
লিঙ্গ বদল করে তিনি পুরুষ— বনি পাল। বিয়ে করেছেন কৃষ্ণনগরের স্বাতীকে। আনন্দবাজারে তাঁর খবর
বেরোনয় চার দিক থেকে সাড়া পেয়ে অভিভূত বন্দনা সিদ্ধান্ত নিলেন, দ্রুত জনসমক্ষে আসার। |
এক যুগের অজ্ঞাতবাস পেরিয়ে আবার তাঁর চোখে নতুন স্বপ্ন। জাতীয় দলের প্রাক্তন মেয়ে ফুটবলার বন্দনা পালকে ভরসা যোগাচ্ছেন শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের একাংশ। দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের কর্তারা।
লিঙ্গ বদলানোর পরে বন্দনাকে কোনওমতে জীবন চালাতে হয়। জন মজুরির কাজ থেকে ঠাকুর তৈরি। প্রথমে ঠিক ছিল, গোপন আস্তানার কথা কলকাতায় এসে প্রকাশ করবেন। ছবি তুলবেন না। কিন্তু সোমবার আনন্দবাজারে তাঁর লড়াইয়ের খবর বেরোনর পরে সবার কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে অভিভূত বন্দনা স্থির করেন, এ দিনই প্রকাশ্যে আসবেন। জানিয়ে দেবেন, কোথায় থাকেন।
|
ছিয়ানব্বই সালে কলকাতায় মেয়েদের ফুটবল লিগের ফাঁকে বন্দনার ছবি। |
সেই মতো দেখা গেল, এক সময় উত্তর ২৪ পরগণার বাসিন্দা বাংলার মহিলা দলের ওই ফুটবল তারকার বর্তমান ঠিকানা শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া মাটিগাড়ার পালপাড়ার গভর্নমেন্ট কলোনি। সেখানেই মূর্তি তৈরির কাজ করেন। বন্দনা লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে মূর্তি তৈরির কারখানা গড়েছেন। বন্দনা’র ভয় ছিল, সমাজ যদি তাঁকে মেনে না নেয়। শিলিগুড়িতে তা অমূলক প্রমাণ হল।
সাত সকালেই কাগজ পড়ে তাঁর বাড়িতে হাজির লিগাল এড ফোরামের কর্তা অমিত সরকার। বনির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ভোটার কার্ড, পরিচয় পত্র তৈরির ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে আসেন। এ দিন তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপ রতন ঘোষ। বলেন, “বাংলার মহিলা ফুটবল দলকে শেষ বার চ্যাম্পিয়ন করেন বন্দনা। ওঁর মতো ফুটবলার ক্রীড়া পরিষদে কোচিং করালে উঠতি ফুটবলাররা লাভবান হবে। ক্রীড়া পরিষদের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।” বন্দনা বলেন, “শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ যদি আমাকে কোচিং করার সুযোগ দেয় সেটা আমার কাছে বড় পাওনা হবে। দীর্ঘ ১৩ বছর পর আবার ফুটবল খেলতে নামব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।” |
বন্দনা তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সোমবার বিশ্বকর্মার মূর্তি গড়ছেন শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায়। ছবি: কার্তিক দাস |
কথা বলতে গিয়ে পুরনো স্মৃতি ঘাঁটতে গিয়ে কিছুটা বিহ্বল বন্দনা, “১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ এই সময়টা আমার ফুটবল জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। আবার সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। বাংলার মহিলা ফুটবল দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছি। এশিয়াডে খেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। অথচ তখনই প্রশ্ন উঠল। সাইয়ের মহিলা ফুটবলাররা প্রশ্ন তুলল, আমি মেয়ে নই বলে। এশিয়াডে যাওয়া হল না। পরে পুলিশ ধরল মেয়ে পাচারকারী হিসাবে। সেখান থেকে আমাকে বাঁচিয়েছে স্বাতী।”
গত বছর মাটিগাড়ায় পাড়ার ছেলেরা ফুটবল খেলতে ডেকেছিল। দু’দিন খেলেছিলেন। তা দেখে পাড়ার ক্লাবের হয়ে খেলতে বলেন কর্মকর্তারা। বনি বলেছিলেন পুরো সময় খেলার দম পাবেন না। তবে আর লুকিয়ে থাকতে চান না বন্দনা। থিমের প্রতিমা গড়ে এলাকায় নাম করেছেন বনি। কিন্তু এই লড়াই তাঁর পুরনো নামের খোঁজে। এই দৌড় ফের বনি থেকে বন্দনা হওয়ার। প্রতিজ্ঞার ঝিলিক তাঁর চোখে, “মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের প্রস্তাবে আমি খুশি। তারা সুযোগ দিলে নিশ্চয়ই কাজে লাগাব।” |