নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য থেকে রাজনৈতিক লড়াইয়ের নতুন পর্ব শুরু করতে চলেছেন রাহুল গাঁধী। কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। রাহুল সেই সব রাজ্য সফরে বেরোবেন সেপ্টেম্বর থেকে। সেই সফর শুরু হবে গুজরাত থেকে। এর আগে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে ‘রাহুল ম্যাজিক’ তেমন কাজ করতে না পারলেও, মোদীর রাজ্যে কংগ্রেসের সুদিন ফেরানোর চেষ্টায় নামতে চাইছেন রাহুল নিজেও।
দলের অনেক নেতাই মাঝেমধ্যে রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রসঙ্গ তোলেন। ক’দিন আগেই রাহুলের ‘বড়’ দায়িত্ব নেওয়া নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কই বাঁধিয়েছেন সলমন খুরশিদ। সেই বিতর্কে জল ঢেলে মূল প্রসঙ্গটাকে আজ আরও স্পষ্ট ভাবে সামনে নিয়ে এসেছেন দিগ্বিজয় সিংহ। তা হল, দল আরও বড় ভূমিকায় তুলে দেখতে চায় রাহুলকে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে দল আরও গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ণায়ক ভূমিকায় দেখতে চাইছে রাজীব-সনিয়ার পুত্রকে।
বড় দায়িত্ব মানে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর পদ বা দলের সভাপতির পদ নয়। আজও এআইসিসি-র এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মন্তব্য করেছেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের উচিত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরা। স্পষ্টতই তাঁর ইঙ্গিত রাহুলের দিকেই। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছেন সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বেই ২০১৪-র নির্বাচনে লড়বে দল। এবং প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য এ বারও সামনে রাখা হবে মনমোহন সিংহকে। এই পরিস্থিতিতে দলকে রাজনৈতিক আন্দোলনে বা ভোটের ময়দানে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে সেটাই হবে ‘বড়’ কাজ। এবং সেই লক্ষ্যে নতুন করে ঝাঁপাতে রাজি হয়েছেন রাহুল নিজেও। তবে আশঙ্কার কথাও রয়েছে। রাহুল বিহার বা উত্তরপ্রদেশে সক্রিয় হলেও ভাল ফল হয়নি। এ ক্ষেত্রে দিগ্বিজয়ের পাল্টা যুক্তি, “প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়। রাজনীতিতে হারজিত থাকবেই।” আজ দশ জনপথে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে জয়রাম রমেশ, দিগ্বিজয় সিংহ, জনার্দন দ্বিবেদী ও আহমেদ পটেলের বৈঠক হয় দফায় দফায়। সেখানেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি-উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরেই রাহুলের নতুন দায়িত্ব এবং দল-সরকারে রদবদলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতা দিগ্বিজয় আগেই জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বর থেকে রাহুল আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবেন বলে তিনি আশা করছেন। আজ তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, “অবশেষে ওঁর বড় ভূমিকায় আসার সময় হয়ে গিয়েছে। এত দিন তিনি নিজেকে যুব কংগ্রেস ও ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। এ বার তাঁর মূল স্রোতে আসা উচিত। সব কংগ্রেসিদের এটাই দাবি। আমরা সবাই চাই তিনি আরও সক্রিয় হোন।”
কিন্তু দলের কাছেই প্রশ্ন, কী হতে পারে রাহুলের উপযুক্ত ভূমিকা? সরকারে যোগ দিতে ইচ্ছুক নন তিনি। সনিয়াকে সরিয়ে রাহুলকে দলের সভাপতি করে দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন দিগ্বিজয়। এই অবস্থায় তাঁকে দলে অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। রাহুল এমনিতেই এআইসিসি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি বা সহ-সভাপতি করে দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। যদিও এআইসিসি-র অনেক নেতার তাতে মত নেই। বরং তাঁকে কংগ্রেসের কোর গ্রুপে নিয়ে আসার পক্ষে অনেকেই মত দিচ্ছেন। কারণ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে এমনিতেই সেখানে একটি শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে। ফলে সেখানে রাহুলকে এনে দলের সাংগঠনিক স্তরেও বড় রদবদল নিয়ে আলোচনা চলছে। যার সূত্রে রদবদল হতে পারে মন্ত্রিসভাতেও।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, রাহুল নিজেও এখন দলের হাল ধরতে চাইছেন। বেশ কিছু দিন ‘অদৃশ্য’ থাকার পরে তাই তাঁকে ফের দিল্লিতে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় রাহুল তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে নৈশভোজেও তিনি হাজির ছিলেন। সাধারণত এই ধরনের অনুষ্ঠানে রাহুলের উপস্থিতি বিরল।
রাহুলের নেতৃত্বে দিগ্বিজয় নিজেও যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন, তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। মধ্যপ্রদেশে হারের পর নির্বাচনী রাজনীতি থেকে দশ বছরের সন্ন্যাস নিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী বছরের নভেম্বরে সেই সন্ন্যাস শেষ হচ্ছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটে লড়বেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন দিগ্বিজয়। |