নিগৃহীতাকে সাহায্যের আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর
গুয়াহাটির তরুণী নিগ্রহ ঘিরে ভুলের বহর বাড়ছেই
নিগৃহীতার পরিচয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে দিলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি অলকা লাম্বা-ই। আবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মেয়েটি দেখা করার সময় সরকারি চিত্রগ্রাহকেরাই মেয়েটির ছবি তুলে ছেপে দেওয়ার উপক্রম করেছিলেন। গুয়াহাটির তরুণী নিগ্রহের ঘটনার তদন্তে আজকের দিনটিতে ছিল এমন নানা ভুলের সমাহার। এমন কী, বিধানসভায় যখন রাজ্যে মেয়েদের উপরে অত্যাচার প্রসঙ্গে বাদানুবাদ চলছে, মহিলা বিধায়ক-সহ কংগ্রেসের সিংহভাগ বিধায়ক ঠাট্টা-তামাশায় মশগুল ছিলেন।
নিগৃহীতার সঙ্গে কথা বলতে গুয়াহাটি এসেছিলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি অলকা লাম্বা এবং ওয়ানশুক সিয়েন। কিন্তু মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার পরে এক সাংবাদিক বৈঠকে তার নাম ও পরিচয় প্রকাশ করে দেন অলকা, নিগৃহীতা সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সম্পূর্ণ অমান্য করে। সম্পূর্ণ বিজেপি-সহ নানা রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন মহল থেকে কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে অবশ্য আজ সন্ধ্যায় তদন্ত কমিশন থেকে অলকাকে সরিয়ে দেয় জাতীয় মহিলা কমিশন। তবে অলকার দাবি, “আমি মেয়েটির নাম সাংবাদিক সম্মেলনে বলার অনেক আগে থেকেই তো তার নাম সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছিল! তাই আমি কোনও ভুল করেছি বলে মনে করি না।”
এ দিকে, আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তরুণীটি যখন দেখা করতে এসেছিলেন, তখন মুখ্যমন্ত্রীর ঘরেই তাঁদের ছবি তোলেন সরকারি চিত্রগ্রাহকেরা। সেই ছবি আবার সাংবাদিকদের হাতে হাতে তুলেও দেওয়া হয়। তার অল্প কিছু ক্ষণ পরেই অবশ্য সরকারের তরফে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘ভুল’ করে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মেয়েটির ছবি তোলা হয়েছিল। সেই ছবি যেন ছাপা না হয়!
জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি
অলকা লাম্বা। —ফাইল চিত্র
আজ রাতে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে দেখা করেন নিগৃহীতা তরুণী। মুখ্যমন্ত্রী মেয়েটিকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “এক জন দোষীকেও আমরা ছাড়ব না। সরকার আপনার সম্পূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছে।” তরুণী মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, গুয়াহাটিতে তাঁর থাকার কোনও জায়গা নেই। তা ছাড়া, তাঁর একটি বিউটি পার্লার খোলার ইচ্ছে আছে। গগৈ তাঁকে জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফে তাঁকে খুব তাড়াতাড়ি একটা বাড়ি দেওয়া হবে। আর বিউটি পার্লার খোলার জন্য এখন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। পরে আরও অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী অকন বরাও তরুণীকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনায় গণমাধ্যমের ভূমিকারও নিন্দা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ বিধানসভার বাইরে তিনি বলেন, “ঘটনার সময় যে সাংবাদিক ছবি তুলছিলেন, তাঁর ভূমিকা যথেষ্ট অনৈতিক। সংবাদমাধ্যমও বারবার মেয়েটির পরিচয় প্রকাশ করে নীতি-বহির্ভূত কাজ করেছে।” গগৈয়ের মতে, অতক্ষণ ধরে শ্লীলতাহানির ভিডিও তুলে সাংবাদিকটি হয় তো তাঁর ‘অফিসের প্রতি কর্তব্যপালন করেছেন’। কিন্তু তা না করে পুলিশে খবর দিয়ে মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে ‘সামাজিক কর্তব্য পালন করা হত’। নিগৃহীতার সঙ্গে কথা বলে রবিবারই তড়িঘড়ি দিল্লি ফিরে যান জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। তাঁদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক আচমকা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে গগৈ বলেন, “ওঁদের দায়িত্ব ছিল আমার সঙ্গে দেখা করা। আমি বৈঠকের জন্য তৈরি ছিলাম। কেন ওঁরা দেখা না করে দিল্লি ফিরে গেলেন, জানি না।” রাজ্যে নারী নিগ্রহের ঘটনা বাড়তে থাকায় চিন্তাপ্রকাশ করে গগৈ বলেন, “শুধু অসম নয়, গোটা দেশেরই এই চিত্র। আমি ‘টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস’কে রাজ্যের অপরাধ প্রবণতা নিয়ে সমীক্ষা করার ভার দিয়েছি। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ যে ভাবে ঘটনার তদন্ত করছে, তাতে সন্তোষপ্রকাশ করে গগৈ জানান, সিআইডিকেও তদন্ত প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আজ অবশ্য কামরূপ মহানগরের দায়িত্বে থাকা গুয়াহাটির এক এসএসপি অপূর্বজীবন বরুয়াকে ডিব্রুগড়ে বদলি করে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে ডিব্রুগড়ের এসপি অরবিন্দ কলিতাকে। শ্লীলতাহানির ঘটনায় আরও দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের নাম রূপকান্ত কলিতা ও দেব দাস। রূপকান্তকে আজ, নলবাড়ি জেলার মুকালমুয়া থেকে ধরা হয়।
নিগৃহীতা তরুণীকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সম্পাদক ও উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী পুনম রানি ওয়াংখেম। তিনি জানান, মেয়েটির সারা গায়ে সিগারেটের ছেঁকা রয়েছে। তবে আপাতত সে সুস্থ। পুনম বলেন, “সংবাদমাধ্যম যা করেছে তা ন্যক্কারজনক। ঘটনায় জড়িত সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হোক। চ্যানেলের প্রধান সম্পাদকও বারবার মেয়েদের নিয়ে অপমানজনক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেন। তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এ দিন, কংগ্রেস বিধায়ক রুমি নাথের উপরে আক্রমণ ও তরুণী নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে অসম বিধানসভাও উত্তাল হয়। কিন্তু, বিরোধীদের সদন ত্যাগের ফলে বিষয় দু’টি নিয়ে শেষ অবধি কোনও আলোচনাই হয়নিা। বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর আগেই, বিরোধী দলনেতা সিরাজুদ্দিন আজমল, সদনের নিয়মিত কাজ স্থগিত রেখে, বিষয় দু’টি নিয়ে আলোচনার দাবি জানান। স্পিকার আলোচনায় রাজি না হওয়ায় বিরোধীরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। ক্ষুব্ধ স্পিকার এআইইউডিএফ দলকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দেন। মার্শালের নেতৃত্বে রক্ষীরা তাঁদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করলেও এআইইউডিএফ বিধায়করা বার হননি। এর পর স্পিকার বিধানসভা থেকে এআইইউডিএফ দলকেই বরখাস্ত করেন। পরে অবশ্য, সংসদীয় মন্ত্রী নীলমণি সেন ডেকার অনুরোধে সেই আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। বিধানসভায় ঘটনাদুটি নিয়ে আলোচনায় স্পিকার রাজি না হওয়ায় এআইইউডিএফ, অগপ, বিজেপি সদন ত্যাগ করে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.