প্রবল বেগে ছুটছে একটি মোটরবাইক। সেটিকে তাড়া করে ধেয়ে আসছে আরও একটি মোটরবাইক। দ্বিতীয় বাইকটির পিছনে বসা আরোহী গুলি ছুড়ল প্রথম বাইকের চালককে লক্ষ করে। গুলি গায়ে না লাগলেও শব্দ শুনে পিছনে তাকালেন বাইকচালক। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেল তাঁর বাইক। নিজেও পড়ে গেলেন রাস্তায়। এ বার এগিয়ে এসে পরপর গুলি চালাল অন্য দু’জন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই বাইকচালকের।
সিনেমা নয়, সোমবার সকালে রাজারহাটের ঘটনা। কালীপার্ক এলাকায় প্রকাশ্য রাস্তায় এ ভাবেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হলেন এক ব্যবসায়ী। মৃতের নাম প্রসেনজিৎ রায় (৩৬)। বাড়ি বাগুইআটির সুভাষনগরে। তদন্ত শুরু হলেও এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর থানার পুলিশ।
রাজারহাট এলাকায় সিন্ডিকেট নিয়ে রেষারেষির জেরে খুনখারাবি নতুন নয়। এ দিনের ঘটনাও সেই কারণে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে সিন্ডিকেটের কোনও যোগ আছে কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওই ব্যবসায়ী যাঁদের কাছে মাল সরবরাহ করতেন, তাঁদের জেরা করা হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগুইআটির সুভাষনগরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎবাবু বিভিন্ন ঠিকাদারি সংস্থায় নির্মাণ-সামগ্রী সরবরাহ করতেন। এ দিন নিজের মোটরবাইকে চেপে তিনি রাজারহাটে ব্যবসার কাজে যাচ্ছিলেন। ৬টা নাগাদ রাজারহাট রোডে একটি মোটরবাইকে করে দুষ্কৃতীরা তাঁর পিছু নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খুনের পরে দুষ্কৃতীরা মোটরবাইক চালিয়ে রাজারহাটের ভিতরে ঢুকে পড়ে। দেবরাজ রায় নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “ছেলেকে স্কুলে পৌঁছতে যাব বলে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় এক জন পড়ে রয়েছেন। পরে পুলিশ এসে দেহটি তুলে নিয়ে যায়।” প্রসেনজিৎবাবুর স্ত্রী রাখী রায় বলেন, “কী ভাবে এ সব ঘটল, বুঝতে পারছি না। অন্য দিনের মতোই আজও ভোরে কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। দোষীদের শাস্তি চাই।” এ দিকে, রাজারহাটের মতো এলাকায় সকালে প্রকাশ্যে খুনের ঘটনায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা। এমনিতেই সিন্ডিকেট ব্যবসা নিয়ে ওই এলাকায় দুষ্কর্ম নতুন নয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় সমাজবিরোধী কাজকর্ম বাড়ছে। এ দিন ঘটনার সময়ে পুলিশের কোনও টহলদারি গাড়ি কেন দুষ্কৃতীদের ধরতে পারল না, সে প্রশ্নও তুলেছেন বাসিন্দারা। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিমানবন্দর থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, পাঁচটি গাড়ি এলাকায় প্রতিদিন টহলদারি দেয়। এ দিনও ছিল। খুনের তিন মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। |
