মধ্য রাতের কলকাতা। টলমল পায়ে পানশালা থেকে বেরিয়ে একটি দোকানের সামনে প্রাকৃতিক কর্ম করছিলেন এক ব্যক্তি। আচমকা পিছন থেকে এক তরুণী এসে তাঁর গায়ে একটি বোতল থেকে কিছু তরল ঢেলে দিলেন। কিছু বোঝার আগেই দেশলাই জ্বালিয়ে তাঁর গায়ে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হল। চমকে উঠে ছুটতে শুরু করেন যুবক। তাঁর গায়ে তখন দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।
রবিবার রাতে লেনিন সরণির উপরে এমনই দৃশ্য দেখার কথা পুলিশকে জানিয়েছেন ওই পানশালা থেকে বেরিয়ে আসা অন্য লোকজনেরা। নিউ মার্কেট থানার কর্তব্যরত দুই পুলিশকর্মী তখন ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন। তাঁদের সাহায্যে ওই যুবককে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার রাত পর্যন্ত তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। ইতিমধ্যে অবশ্য ট্যাক্সি ধরে ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দিয়েছিলেন তরুণী। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। |
অলঙ্করণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
পুলিশ সূত্রে খবর, আক্রান্ত ওই যুবকের নাম মহম্মদ সালাউদ্দিন ওরফে সোনু (২৭)। তরুণীর নাম শবনম খাতুন। তিনি সোনুর স্ত্রী। পুলিশের দাবি, জেরায় শবনম জানিয়েছেন, স্বামীর নির্যাতন আর সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। তাই উত্তেজনার বশে স্বামীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশের দাবি, জেরায় শবনম জানিয়েছেন, তাঁর রোজগারের টাকায় ব্যবসা শুরু করেছিলেন সোনু। অথচ, সব সময়ে তাঁকেই মারধর, গালিগালাজ করতেন। পুলিশ জানায়, মধ্য কলকাতার পানশালায় এক সময়ে গান গাইতেন শবনম। এখন সোনু ও তাঁর ভাগ্নে সমীর আলমের সঙ্গে একবালপুরের কবিখেত এলাকায় থাকেন ওই তরুণী। শবনম পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সাত বছরের আর একটি ছেলে রয়েছে ওই দম্পতির। শবনমের বাবা, দুই বোন এবং শবনমের ছেলে আমিরুদ্দিন থাকে মোমিনপুর রোডে। সোনু আদতে বিহারের বাসিন্দা।
সোমবার শবনমের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, গান গাইতে এক বার বিহারে যান তিনি। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সোনুর। বিয়ের পরে শবনমের আয়ের টাকাতেই ‘ফুর্তি’ করতেন সোনু। পুলিশকে শবনম জানিয়েছেন, স্বামীকে এ ব্যাপারে কিছু বললেই রাগারাগি করতেন। মারধরও করা হত। পরে পানশালার কাজ ছেড়ে দেন শবনম। কিন্তু তাঁর জমানো টাকাতেই সংসার চলে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর টাকাতেই সম্প্রতি পরিবহণের ব্যবসাও শুরু করেন সোনু।
পুলিশের দাবি, জেরায় শবনম আরও জানান, রবিবার সন্ধ্যায় মোমিনপুরের বাড়িতে যান সোনু। দেখেন, আমিরুদ্দিনের শরীর খারাপ। সমীরের সঙ্গে ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে গিয়েছেন শবনম। সমীরের সঙ্গে স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ তোলেন সোনু। ছেলেকে বলেন, শবনম ফিরলে তাঁর ‘ধোলাই’ হবে। এর পরে চলে যান তিনি। শবনমের বোন রুকসার বলেন, “আমি কবিখেতের বাড়িতে পড়তে গিয়েছিলাম। জামাইবাবুর সঙ্গে ফোনে দিদির ঝামেলা হচ্ছিল। এর পরে বেরোন জামাইবাবু।”
পুলিশ সূত্রে খবর, সপ্তাহান্তে নিউ মার্কেটের একটি পানশালায় যান সোনু। রবিবারও পরিচিত কয়েক জনকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। এ দিকে, মোমিনপুরের বাড়িতে ফিরে তাঁর চরিত্র নিয়ে ওঠা অভিযোগ শুনে শান্ত থাকতে পারেননি শবনম। পুলিশের দাবি, এর পরেই পেট্রোল ভর্তি বোতল নিয়ে স্বামীকে খুন করতে তিনি পানশালায় হানা দেন বলে জেরায় জানিয়েছেন শবনম। |