এসঅ্যান্ডপি, ফিচের মতো মূল্যায়ন সংস্থার পর এ বার ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে বিপদ-ঘণ্টা বাজাল আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)।
২০১২ সালে এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৯% থেকে এক ঝটকায় ৬.১ শতাংশে নামিয়ে আনল তারা। ২০১৩ সালের জন্যও তা ৭.৩% থেকে কমে হল ৬.৫%। বিশ্বের অন্য কোনও দেশের জন্যই পূর্বাভাস এ বার একবারে এতখানি নামিয়ে আনেনি ক্রিস্টিন ল্যাগার্ডের নেতৃত্বাধীন এই সংস্থা। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধি ৭ শতাংশের নীচে (৬.৯%) থাকবে বলে গত মাসে জানিয়েছিল বিশ্ব ব্যাঙ্কও।
আইএমএফের এই সতর্কবার্তা অবশ্য শুধু ভারতের জন্য নয়। বছরের মাঝে বিশ্ব অর্থনীতির হাল-হকিকত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দুনিয়ার অধিকাংশ দেশকেই আশার কথা শোনাতে পারেনি তারা। এখনও কার্যত মন্দার জালে জড়িয়ে থাকা মার্কিন মুলুক কিংবা ঋণ সঙ্কটে জেরবার ইউরোপ-সহ উন্নত দুনিয়ায় বৃদ্ধি যে চলতি কিংবা সামনের বছরে আশানুরূপ হবে না, তা প্রত্যাশিত। কিন্তু সবার শিরদাঁড়ায় ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছে ভারত, চিনের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও বৃদ্ধির ঢিমে গতি। কারণ, সম্ভাবনাময় অর্থনীতির এই সব দেশের কাঁধে ভর করেই বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে বলে আশা করছেন সকলে। যার কিছুটা প্রমাণ মিলেছে গত কাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্যে। নির্বাচনের মুখে মার্কিন অর্থনীতির হাল ফেরাতে মরিয়া ওবামা সংস্কারের চাকা আটকে যাওয়া নিয়ে তোপ দেগেছেন সেই ভারতের দিকেই। জোরালো সওয়াল করেছেন বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়ার জন্য।
কিন্তু আইএমএফের পূর্বাভাসকে সূচক ধরলে, বিশ্ব অর্থনীতির চাকা ঘোরা এখনও দূর অস্ৎ। কারণ, তার জন্য অর্থনীতির পণ্ডিত কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানরা যে সব দেশের (ভারত, চিন, ব্রাজিল ইত্যাদি) উপর ভরসা করছিলেন, তাদের কারও জন্যই সে ভাবে সুখবর আনতে পারেনি এ দিনের পূর্বাভাস। ২০১২ এবং ২০১৩ সালের জন্য কমেছে চিনের বৃদ্ধির পূর্বাভাসও। তবে তার পরেও দু’ক্ষেত্রেই তা রয়েছে ৮ শতাংশের উপরে।
আইএমএফের মতে, উন্নত দুনিয়ার মন্দার ছায়া পড়েছে উন্নয়নশীল দুনিয়ার উপরেও। বাণিজ্য কমছে। বার বার ওঠা-নামা করছে ওই সব দেশের মুদ্রার বিনিময়মূল্য। প্রবল অনিশ্চয়তায় সেখান থেকে লগ্নি সরিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন বিনিয়োগকারী সংস্থা। সব মিলিয়ে, মন্দার প্রভাব থাবা বসিয়েছে ভারত-চিনের মতো সম্ভাবনাময় অর্থনীতির উপরেও। পৃথিবী জুড়ে এই সঙ্কটের মধ্যে শুধু আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় বৃদ্ধি কিছুটা তেজি থাকবে বলে ধারণা আইএমএফের। |