ভারতে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মন্তব্যের জবাব দিতে আসরে নামল কেন্দ্র। এক দিকে ওবামার বক্তব্য খারিজ করতে গিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও) ওবামার বক্তব্য উড়িয়ে ট্যুইটারে জানিয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংক্রান্ত শাখার (ইউএনসিটিএডি)-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে বিনিয়োগকারীদের তৃতীয় পছন্দের দেশটির নাম ভারত। অন্য দিকে, সংস্কার নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘পরামর্শ’ খারিজ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা-র মন্তব্য, ‘নীতি নির্ধারণের বিষয়টি ভারতের সার্বভৌম অধিকার’।
ভারতে লগ্নির পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত কালই বলেছিলেন, দিল্লির উচিত সংস্কারের ঢেউ তোলা। ওই মন্তব্য নিয়ে গত কাল থেকেই বিরোধীদের পাশাপাশি সরব দেশের বাণিজ্য মহল। আজ এ নিয়ে ট্যুইটারে মন্তব্য করতে গিয়ে ইউএনসিটিএডি-র পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে পিএমও জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে বিদেশি পুঁজির পরিমাণ ৩১ শতাংশ বেড়েছে। ট্যুইটারে বলা হয়েছে, ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের জোয়ারেই দক্ষিণ এশিয়ায় বিদেশি পুঁজির বাড়বাড়ন্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আগেই অবশ্য ওবামার গত কালের মন্তব্য নিয়ে মুখ খোলেন আনন্দ শর্মা। এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে ওবামার বক্তব্য খারিজ করতে গিয়ে তিনিও হাতিয়ার করেন ইউএনসিটিএডি-র রিপোর্টকেই। পাশাপাশি, মুক্ত বাণিজ্যের প্রশ্নে আমেরিকার উপর পাল্টা চাপ বাড়িয়ে তিনি বলেন, “মুক্ত বাণিজ্য চালু করার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত ওয়াশিংটনের।” সাম্প্রতিক সময়ে ভিসার খরচ বাড়ানো-সহ বেশ কিছু মার্কিন পদক্ষেপে ইনফোসিস, টিসিএসের মতো ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়েছে। আজ এ নিয়ে আনন্দ শর্মা ঘুরিয়ে সমালোচনা করেন আমেরিকার। একই ভাবে শুল্ক-বহির্ভূত বাধা (নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার) নিয়েও আজ সরব হন আনন্দ শর্মা। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়াও বহু ক্ষেত্রে একাধিক কঠিন শর্ত আরোপ করা হয়, যা পূরণ করে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এগুলিকেই শুল্ক-বহির্ভূত বাধা বলা হয়। ভারত-সহ বহু দেশের কাছেই এই ধরনের শুল্ক বহির্ভূত বাধা বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জাতীয় বাধা তোলার জন্য বহু দিন ধরেই সরব ভারত। বাণিজ্যমন্ত্রী আজ জানান, আমেরিকার উচিত শুল্ক-বহির্ভূত বাধা দূর করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়া। তাঁর কথায়, “বিশ্বে মূলধন ও বাণিজ্যের অবাধ গতি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ওয়াশিংটন।”
বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি, ওবামার বক্তব্য ভারত শুনেছে। কিন্তু তাঁর ধারণা ও বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য আছে। ওবামা ভারতের পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নন বলে গত কালই মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় কর্পোরেট মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি। অনেকে আবার এ-ও মনে করছেন, ওবামার বক্তব্যের লক্ষ্য যত না ভারতের সংস্কার তার থেকে অনেক বেশি মার্কিন বহুজাতিক খুচরো ব্যবসায়ী সংস্থা ওয়াল মার্টের ভারতে পা রাখার পথ প্রশস্ত করা।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য নিয়ে অবশ্য কিছুটা ভিন্ন মত যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার। তাঁর মতে, অনেক দেশই ভারতে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। |