মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জলবন্দি বাসিন্দাদের দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দিতে তৎপর হল প্রশাসন। বাঁধ ভেঙেছে সকাল সাড়ে ৭টায়। আর পৌনে ১০টাতেই ত্রাণের খিচুড়ির জন্য উনুন জ্বলল চম্পাসারিতে। সৌজন্য শিলিগুড়ি মহকুমা প্রশাসন। সকাল থেকে পশ্চিম ধনতলা, পোড়াঝাড়, মিলনমোড় এলাকা ঘুরে জলবন্দি বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে তোড়জোড় করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকাররা মিলন মোড় এলাকায় মহানন্দার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে বাসিন্দাদের ত্রাণের ব্যবস্থা করেন। শহরে মহানন্দার ধারে ওয়ার্ডগুলির যে সমস্ত এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সেখানে ত্রাণের ব্যবস্থা করতে তৎপর হন পুর কর্তৃপক্ষ। বিকেল থেকে নাগারে বৃষ্টি হতে থাকায় রাতে ফের জল বাড়তে শুরু করে। তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মিলনমোড়-সহ মহানন্দার ধারে থাকা বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। সকালে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত মেয়র পারিষদ এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলামরা বিভিন্ন এলাকায় যান। পরে মেয়রও কিছু এলাকা ঘুরে দেখেন। পুরসভায় খোলা হয় কন্টোরল রুম। এ দিন থেকেই তা ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা হচ্ছে। কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর ২৪৩৫৭৪৭। একই ভাবে মহকুমাশাসকের অফিসেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফোন নম্বর ২৪৩০৮০০। বেলা ৩টে নাগাদ মহকুমাশাসক, সেচ দফতরের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার, মহকুমার বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের আধিকারিক, এসজেডিএ’র আধিকারিক, বাস্তুকার, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন রুদ্রবাবু। তিনি বলেন, “নদীর খাত পরির্তন হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। ৫ টি জিসিপি দিয়ে মাটি কেটে নদীর গতি ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাতে যাতে কাজ করতে সমস্যা না হয় সে জন্য আলোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। মহকুমা প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিল বিভাগ এ ব্যাপারে সাহায্য করছে। মুখ্যমন্ত্রী দুর্গত বাসিন্দাদের পাশে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহিষমারি, কড়াইবস্তি, মিলনমোড় তিন জায়গায় খিচুড়ি রান্না করে দুর্গত বাসিন্দাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।” বিকেলের দিকে মিলনমোড়, কড়াইবাড়ি, পলাশবাড়ির দুর্গত বাসিন্দাদের জন্য অমিয়পাল চৌধুরী স্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়। জলবন্দি বাসিন্দাদের সেখানে রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। জল বাড়ায় ওই এলাকার অনেক বাসিন্দাই সেখানে আশ্রয় নেন। উত্তরবঙ্গ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং শিলিগুড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন এলাকায় জলবন্দি বাসিন্দাদের চিকিৎসার প্রয়োজনে আগাম ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন রুদ্রবাবু। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গেও এ ব্যাপারে কথা বলেছেন তিনি। এদিন সকালে মিলনমোড়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি আঁচ করেই মহকুমাশাসক বৈভব শ্রীবাস্তব মাটিগাড়ার বিডিও বীরবিক্রম রাইকে নির্দেশ দেন ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য। তখনই মিলন মোড়ের একটি ক্লাবের যুবকদের সাহায্য নিয়ে মিড ডে মিলের চাল, ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না শুরু হয়ে যায়। মহকুমাশাসক বলেন, “জলবন্দি ২০-২৫ জন মানুষকে উদ্ধার করতে হয়। কিন্তু যেভাবে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে তাতে বহু বাড়িতে রান্না করা অসম্ভব। পরিস্থিতি আঁচ করেই বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।” খবর পেয়ে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে মাজুয়া এবং কড়াইবাড়িতেই খিচুড়ি বিলির ব্যবস্থা হয়। শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে দুপুরের মধ্যে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ কোন এলাকায় কী প্রয়োজন কাউন্সিলরদের জানাতে বলা হয়েছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সঞ্জয় পাঠক এলাকার জলবন্দি বাসিন্দাদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা করেন। এলাকার সহৃদয় ব্যক্তিরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। রাতে জোড়াপানি নদীর জল বেড়ে পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে উদয়ন কলোনির একাংশে বাসিন্দারা বিপাকে পড়েন। শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ার একটি ক্লাবের উদ্যোগে খিচুড়ি রান্না করে পশ্চিম ধনতলা, চূনাভাটি এলাকার দুর্গত মানুষদের জন্য পাঠানো হয়। ফুলবাড়ি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ব্লাক প্রশাসনের উদ্যোগেও চিড়ে, গুড়ের মতো শুকনো খাবার, খিচুড়ি বিলি করা হয়েছে। ১০০ টি ত্রিপল পাঠানো হয় খোলা আকাশের নিচে থাকা বাসিন্দাদের জন্য। |