কোথাও নদীর বাঁধ ভেঙেছে। কোথাও জনপদ প্লাবিত। নাগাড়ে বৃষ্টির পরে আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চব্বিশ ঘন্টায় সেবকে ২৩৬, গজলডোবায় ২৮৯, চালসা লাগোয়া ডায়না নদীতে ৩০২, নেওড়ায় ১৫৩, মূর্তিতে ১৯১, হাসিমারায় ১৩৩, চম্পাসারিতে ১৯১, বাগরোকোটে ১৭৬, বানারহাটে ২০০, মালবাজারে ১৪৭ এবং শিলিগুড়িতে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও এ দিন ভোরে মহানন্দা নদীতে আচমকা জল বাড়তে শুরু করে। মাত্র দেড় ঘণ্টায় মহানন্দা নদীর জল দু’মিটার বেড়ে যায়। তার জেরেই চম্পাসারির মহিষমারি এলাকায় একশো দিনের প্রকল্পে তৈরি একটি অসম্পূর্ণ বাঁধের প্রায় সাড়ে চারশো মিটার ভেঙে যায়। |
যদিও এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বাঁধ মেরামতির সময়ে লাগোয়া নদীখাত থেকে বালিপাথর তোলা হয়। তাতেই নদীখাত বদলে চম্পাসারির দিকে সরে আসে। সেচ দফতরের শিলিগুড়ির এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সমর সরকারের দাবি, “এমন ঘটনার কথা জানি না। খোঁজ নেব।” বানারহাটে রেতি সুক্রিতি নদী বাঁধেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। পোড়ঝাড়ে মহানন্দার জল দুকূল ছাপিয়ে লাগোয়া গ্রামগুলিতে ঢুকে পড়ে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ওই এলাকায় রাস্তা অবরোধে নেমে পড়েন। শেষ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের হস্তক্ষেপে সেচ আধিকারিকেরা মহানন্দা ব্যারাজের গেট পুরোপুরি খুলে জল বার করে দেন। চম্পাসারিতে ছুটে যান শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, স্থানীয় বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, মহকুমাশাসক বৈভব শ্রীবাস্তব-সহ বিভিন্ন ব্যক্তি। এসজেডিএর চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে সেচ আধিকারিকেরা ভেঙে যাওয়া বাঁধ রক্ষা করতে মহানন্দার নদীখাত বদলে দেওয়ার কাজে নামেন। |
|
|
গধেয়ার কুঠি বিটে ভেসে এসেছে হরিণ। জলমগ্ন মরাঘাট-বানারহাট সড়ক। ছবি: রাজকুমার মোদক। |
|
এলাকার দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থাও হয়। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রন কমিশনের চেয়ারম্যান নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ডুয়ার্স, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ির বিভিন্ন নদী বাঁধে ভাঙন হয়েছে। সেখানে দ্রুত কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” রেতি নদীর বাঁধে ভাঙনের ফলে বানারহাটের চারটি চা বাগানে জল ঢুকে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। উমেশ খালের জল উপচে এলাকার শান্তিপাড়া, সুভাষনগর, হঠাৎ কলোনিতে ঢুকে পড়ে। প্রায় দেড়শো বাড়িতে হাঁটু সমান জল জমে যাওয়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। যে কোনও সময় বাঁধ ভেঙে জল বাগানে ঢুকে পড়ে ভয়ানক ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বানারহাটের রিয়াবাড়ি, কাঁঠালগুড়ি, কারবালা, পলাশবাড়ি বাগান কর্তৃপক্ষ। |
|
|
চম্পাসারিতে ত্রাণ বিলি। পরিদর্শনে গৌতম দেব, শঙ্কর মালাকার। ছবি: কার্তিক দাস। |
|
ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি সঞ্জয় বাগচি বলেন, “যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ফের বাঁধ মেরামতি না করা হলে ভুটানের জলোচ্ছ্বাসে যে কোনও সময় বাগানগুলিতে জল ঢুকে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। সকলে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।” জলপাইগুড়ির মহকুমা শাসক সাগর চক্রবর্তী বলেন, “ভুটানে অত্যধিক বৃষ্টির কারণে প্রচণ্ড জল বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেচ দফতরের সঙ্গে বসে বাঁধগুলির নিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরি হবে। জেলায় নদী বাঁধের সমস্যা প্রচণ্ড। বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” কংগ্রেস নেতা তথা এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য সজল রায়চৌধুরী বলেন, “খাল সংস্কার দ্রুত না হলে যে কোনও দিন বিপর্যয় বড় আকার ধারণ করবে। সংস্কার নিয়ে গড়িমসি করছে প্রশাসন।” |
নাগাড়ে বৃষ্টি, বন্যার আশঙ্কা শিলিগুড়িতে |
• গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দেড়শো মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন নদীতে জল বাড়ার সেটাই কারণ।
• শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শিলিগুড়ি শহরে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
• বাঁধ ভেঙেছে মহানন্দা, রেতি-সুক্রিতি, গধেয়ার কুঠি এলাকায় জলঢাকা নদীতে।
• এদিন সন্ধ্যায় ঘিস নদী উপচে ডুয়ার্সের মালবাজার লাগোয়া ওয়াশাবাড়িতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করে।
• আবহাওয়া দফতর রবিবারও প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস করায় শিলিগুড়িতে প্রশিক্ষণপ্রান্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ন্যাফকে উদ্ধার কাজে নামার জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।
• রাতভর বৃষ্টির জেরে সিকিমগামী ৩১ (এ) জাতীয় সড়কে রম্ভি, দার্জিলিং যাওয়ার পথে পাঙ্খাবাড়ি রোডে মকাইবাড়ি চা বাগান এবং রোহিণী রোডে গিদ্দা পাহাড়ে ধস নামে।
• মহানন্দা ব্যারাজের গেট খোলার গাফিলতির পোড়াঝাড়ে নদী উপচে জল ঢোকে।
• রবিবার রাতে ময়নাগুড়ির কাছে মোয়ামারিতে তিস্তা নদীর চরে জল ঢুকেছে।
• বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ, সোমবার শিলিগুড়িতে আসছেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। |
|