প্রবল বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে রবিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল পাহাড় ও ডুয়ার্স। শনিবার রাত থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় ধস নামায় এদিন সকালে দার্জিলিং কার্যত অবরুদ্ধ। প্রবল জলস্রোতে শিলিগুড়ির কাছে চম্পাসারিতে মহানন্দা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া পোড়াঝাড় এলাকায় মহানন্দার জল দুকূল উপচে গ্রাম ভাসিয়ে দেয়। ডুয়ার্সে রেতি-সুক্রিতি নদী উপচে সামসি এলাকায় ভারত-ভুটান সার্ক সড়কে যান চলাচল বন্ধ। কালজানি নদী উপচে জয়গাঁ-কালজানি সড়কও বিপর্যস্ত। ধূপগুড়ির গধেয়ার কুঠিতে নদী বাঁধের ফাটল দিয়ে জনপদে জলঢাকা নদীর জল ঢুকছে।
কুচি-ডায়নার জলের তোড়ে নাগরাকাটায় খয়েরকাটা গ্রামের একমাত্র সেতুটি ভেসে গিয়েছে। |
রবিবারও শিলিগুড়ি, ডুয়ার্স ও পাহাড়ে বৃষ্টি থামেনি। ডুয়ার্সের সমস্ত নদীতে জল বাড়ছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তায় লাল সঙ্কেত জারি হয়েছে। জলঢাকা, রায়ডাক, সঙ্কোশেও হলুদ সঙ্কেত জারি হয়েছে। দুপুর থেকে তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদের উদ্ধারের কাজে নেমেছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকারও। এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। প্রয়োজনীয় সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। বার বার আমাদের কাছ থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন।” মন্ত্রী বলেন, “বালাসন নদীতে সিগন্যালিং ব্যবস্থা নেই। কেন তা নেই, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। তা ছাড়া, সন্ধ্যার পরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুয়ার্সের মালবাজারের কাছে ওয়াশাবাড়িকে ঘিস নদীর জল ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে। ময়নাগুড়ির কাছে মোয়ামারিতে তিস্তার চরে জল ঢুকে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।” রেতি নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় বানারহাটের চারটি চা বাগানে জল ঢুকে পড়েছে।
সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞা এই দিন কলকাতায় জানান, দার্জিলিং, কাশির্য়াং পাহাড় এলাকায় ব্যাপক বর্ষণের পর এ দিন সকালে বালাসোর, মহানন্দার জলস্তর বেড়েছে। ফুলবাড়ির কাছে মহানন্দার ব্যারাজ ক্যানালের জল উপচে পাশের এলাকায় ঢুকে পড়ে। চম্পাসারিতে মহানন্দার বাঁধ ভেঙেছে। প্লাবিত হয় আশপাশের অঞ্চল। নাগরাকাটা, খয়েরকাটায় ডায়না নদীর বাঁধ ভেঙে গিয়ে বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। আমার দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙন মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছি।” মানসবাবু জানিয়েছেন, মন্ত্রী গৌতম দেব, সুনীল তিরকের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলিতে ত্রাণ এবং উদ্ধারকাজের বিষয়ে জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিংয়ের জেলাশাসকের সঙ্গেও কথাবার্তা হয়েছে মন্ত্রীর। জরুরি ভিত্তিতে তিনিও সোমবার উত্তরবঙ্গের ওই এলাকাগুলি পরিদর্শনে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মানসবাবু।
শিলিগুড়ি ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় সেচ দফতরের সমস্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিন জেলাতেই কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “লাগাতার বৃষ্টির জন্যই পরিস্থিতির এতটা অবনতি হয়েছে। সেচ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।”
সার রাত বৃষ্টিতে এ দিন সকাল থেকে সিকিমগামী ৩১ (এ) জাতীয় সড়কে রম্ভির কাছে ধস নামে। দার্জিলিং যাওয়ার পথে পাঙ্খাবাড়ি মোড়ে মকাইবাড়ি চা বাগানের কাছে এবং রোহিণী রোডে গিদ্দা পাহাড়ের কাছেও ধস নামে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সকাল ১০টার পরে দার্জিলিংগামী একটি রাস্তা এবং সিকিম যাওয়ার রাস্তার কিছুটা ধস সরিয়ে একমুখী যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “তিনটি জায়গাতেই বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা কাজ করছেন। ব্লকের থেকে টিম পাঠানো হয়েছে। দার্জিলিংগামী একটি রাস্তা ঠিক রয়েছে। সে দিক দিয়ে সমস্ত গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” |